Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হার্ট অ্যাটাক থেকে সাবধান

| প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অনেক সময় শেষ রাতে বা খুব ভোরে, ঘুমের মধ্যেইবা মর্নিংওয়াকে বেরিয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এ রকম দেখা যায়। আসলে আমাদের আর ই এম ¯িøপ (যখন আমরা স্বপ্ন দেখি)-এর সময়ে হার্ট রেট বাড়ে এবং নন আর ই এম ¯িøপের সময় হার্ট রেট কমে। ভোরে আর ই এম ¯িøপের ফেজ বাড়ে। হার্ট রেট বাড়ে। হার্টের পাম্পিং অনিয়মিত হয়। সারকুলেশনের উপরেও প্রভাব পড়ে। আবার মনিংওয়াকে বেরোলে একজন অনেকটা ঠান্ডা হাওয়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরের ভেতরে টানেন। শরীরকে সঙ্গে সঙ্গে সেই হাওয়াকে বডি টেম্পারেচারে নিয়ে আসতে হয়। মেটাবলিক রেট বাড়ে। হার্টের উপর চাপ পড়ে। যাঁদের অ্যানজাইনাল পেন হয় বা যাঁরা ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত, তাঁদের ঠান্ডার দিনে এবং শীতকালে একটু সাবধানে থাকা দরকার। ডাক্তারি সংজ্ঞা অনুযায়ী শীতল তাপমাত্রা অ্যানজাইনার সমস্যা বাড়ায়-অ্যানজাইনা ইস প্রেসিপিটেটেড বাই কোল্ড। তার কারণ ঠান্ডায় মেটাবলিজম বাড়ে। শরীরকে গরম রাখার জন্যে মেটাবলিজম বাড়িয়ে বাড়তি হিট জেনারেট করতে হয়। ঠান্ডার দিনে মাস্ল বা পেশিও বেশি কাজ করে। এই সব কিছুর জন্যেই হার্টকে বেশি কাজ করতে হয়। তার উপর চাপ বাড়ে। শরীরে তাপ ধরে রাখার জন্যে রক্তনালিগুলো কনষ্ট্রিকটেড বা সংকুচিত হয়, তাই বøাডপ্রেসারও বাড়ে। যাঁদের হার্টের সমস্যা আছে তাঁদের পক্ষে প্রেসার বাড়া স্বাভাবিকভাবেই ভালো নয়। ঠান্ডার দিনে সবাই একটু জড়সড় হয়ে যান, বিশেষত বয়স্করা। ফিজিকাল অ্যাকটিভিটির লেভেল কমে বলে সার্কুলেশন বা রক্ত সংবহন ঠিকমতো হয় না। তারপরে আবার রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়। সব মিলিয়ে সার্কুলেশনের সমস্যা বাড়ে। যদি কারও করোনারি আর্টারির সমস্যা থেকে থাকে আর আর্টারিতে প্লাক থাকে-তবে রক্ত সংবহন ঠিকমতো না হলে প্লাকটা দ্রæত বেড়ে যায়। রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বয়স্কদের রক্ত সংবহন সমস্যা বেশি হয়। কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের মধ্যে যাঁদের সায়ানোটিক হার্ট, তাঁদেরও এই ঠান্ডার দিনে সমস্যা বাড়তে পারে, কারণ ঠান্ডার দিনে রক্তে ত্রম্বোসিস হওয়ার অর্থাৎ ক্লট বাঁধার প্রবণতা বাড়ে। এছাড়া শীতকালে অ্যারিদমিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। অ্যারিদমিয়া অর্থাৎ অনিয়মিত হার্ট বিট। এটা থেকে হার্ট বিট হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, সাডন ষ্টপেজ অব হার্ট হতে পারে। শীতে অনেকেই পানি ঠান্ডা থাকে বলে পানি কম খান। ফলে কনষ্টিপেশন বাড়ে। তখন ডিফিকেশনের সময় ষ্ট্রেন হয়। হার্টে সারকুলেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠান্ডার দিনে হাই ক্যালোরিযুক্ত রিচ খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। আবার অনেকে শীতকাতুরে বলে রিচ খাবার খেয়েই ঘুয়ে পড়েন যা ঠিক নয়।
চিকিৎসকরা দেখেছেন শীতকালে বা ঠান্ডার দিনে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বাস্তবিক খুব বাড়ে। উপরে কিছু কারণ বলা হলেও সব কারণ তাঁদের কাছে পুরোপুরি স্বচ্ছ নয়। তবে বেশি সংখ্যায় রোগি আসেন এটা তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতা। এই সময়ে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। যেমন-যাঁদের করোনারি আর্টারি ডিজিজ আছে, কোনও রকম কনজেনিটাল হার্ট প্রবলেম আছে, যাঁদের বøাড প্রেসার খুব হাই এবং বয়সও বেশি তাঁরা শীতকালটা একটু সাবধানে থাকবেন। গরম ঘর থেকে হঠাৎ ঠান্ডায় বেরোবেন না, বিশেষ করে বেশি রাতে বা খুব ভোরে তো বেরোবেনই না।
শোওয়ার ঘরটায় মোটামুটি আরামদায়ক উষ্ণতা থাকলে ভালো হয়। ঠান্ডায় ঘাম কম হয় বলে বেশি ব্যায়াম বা পরিশ্রম করা যায়, কিন্তু করোনারি আর্টারি ডিজিজ থাকলে বেশি ব্যায়াম বা পরিশ্রম করবেন না, ওভার এক্সারসাইজ ক্ষতিকারক। ঠান্ডায় বেরোলে ঠিকমতো গরম জামাকাপড় পরবেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, এমন ভারী গরম জামা পরবেন না যে সেগুলোই বোঝা হওয়ার মতো হয়ে দাঁড়ায়, আর আর্টকে বাড়তি কাজ করতে হয়। ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসল করাই ভালো। বিশেষ করে হার্টের সমস্যা থাকলে বা বয়স বেশি হলে। বøাড প্রেসারের ওষুধ যাঁরা খান তাঁদের তা কখনই মিস করা উচিত নয়। শীতে তাঁরা বিশেষভাবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকনে। হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে হার্টের ক্ষতি হতে পারে। ঠান্ডা এড়াতে অনেকে ড্রিংক করেন। কিন্তু ওভার ড্রিংকিং করলে অ্যারিদমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া ড্রিংক করলে ভাসোডায়ালেটেশন হয়, মানে রক্তনালিগুলো প্রসারিত হয়। তাতে ঠান্ডা লেগে গিয়ে হার্টের সময় বাড়তে পারে। ওই যে বলা হল ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে শরীর নিজেই রক্তনালির সংকোচন ঘটিয়ে তাপ ধরে রাখার চেষ্টা করে। ড্রিংক বেশি করলে সাময়িক উষ্ণতা পাওয়া গেলেও শরীরের স্বাভাবিক তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বিব্রত করে। হার্টের সমস্যা থাকলে বা বয়স বেশি হলে ঠান্ডা জায়গায় বেড়াতে যাবেন না। খুব বেশি রাত পর্যন্ত বাইরে থাকা, খুব ভোরে হাঁটতে যাওয়া, হার্টের সমস্যা থাকলে বা বয়স্কদের এগুলো না করাই ভালো। ঠান্ডা বলে পানি কম খাবেন না। প্রচুর পানি খাবেন। ঠান্ডা পানি খেতে ইচ্ছে না করলে সামান্য গরম করে নিয়ে খান।
যতটা রিচ এমনিতে খান ততটাই খাবেন। ঠান্ডা বলে বাড়তি রিচ খাওয়ার কারণ নেই। আর কুঁড়েমি না করে খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ জেগে থাকুন। তারপর ঘুমতে যান। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন