২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
কৃমি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় একটি সমস্যা দায়ী সচেতনতার অভাবে বা এ বিষয়ে মানুষের পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকায় সু-স্বাস্থ্য হতে বঞ্চিত হতে হয়। মানুষের শরীরের সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর পরজীবী হলো কৃমি। যে কোনো বয়সের মানুষের কৃমি হতে পারে। তবে শিশুরা কৃমিতে আক্রান্ত হয় বেশী। মানব শরীরে বড় শত্রু কৃমি। শরীরে কৃমি থাকলে যতই ভালো খাবার খান বা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে তা কোনো কাজে আসে না বা স্বাস্থ্য বজায় থাকে না। কারণ দেহে বাস করে সকল খাবারের পুষ্টি উপাদান চুষে নেয়। ফলে দেহে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয় এবং নানা রোগ দেহে সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের শিশু, কিশোর এবং প্রাপ্ত বয়স্করা কৃমিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। শহরে বসবাসকারী মানুষের চেয়ে গ্রামের বসবাসকারী মানুষ কৃমিতে আক্রান্ত হয় বেশী। কারণ গ্রামের মানুষরা খালি পায়ে চলাফেরা করে বেশী আর এ সুযোগে কৃমিতে আক্রান্ত হয় বেশী। স্বাস্থ্য সচেতনতাও কম। তবে যেসব শিশুদের বয়স পাঁচ কি ছয় এবং শুধু মায়ের বুকের দুধ খায় তারা সাধারণত কৃমিতে আক্রান্ত হয় না।
মানুষ নানা প্রকার কৃমিতে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন প্রকার কৃমির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কেঁচো কৃমি, সুতা কৃমি, বক্র কৃমি ও ফিতা কৃমি ইত্যাদি।
কিভাবে মানুষ আক্রান্ত হয়ঃ সাধারণত কৃমির সংক্রমণ হয় খাবার ও পানির মাধ্যমে। সব কৃমি একইভাবে সংক্রমন হয় না। বক্র কৃমি আক্রান্ত মানুষের যেখানে সেখানে মল ত্যাগ করলে সেখান থেকে কৃমির লার্ভা মানুষের পায়ের চামড়া ভেদ করে রক্ত নালীতে প্রবেশ করে। যারা খালি পায়ে মাটিতে চলাফেরা করেন। তারাই এ কৃমিতে আক্রান্ত হয় বেশী। বাংলাদেশের মানুষ গোল কৃমিতে বা কেঁচো কৃমিতে আক্রান্ত হয় বেশী। এসব কৃমি মানুষের পাকস্থলির ক্ষুদ্রান্ত্রে বসবাস করে নানা রোগ সৃষ্টি করে। পিত্তনালীতে প্রবেশ করে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়ে জন্ডিস রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
গোল কৃমি বা কেঁচো কৃমি সাধারণ গোল, পাতলা, সাদা বা গোলাপি রঙের হয়। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ১০-১২ সে.মি. লম্বা হয়। সাধারণত অপরিষ্কার শাকসবজি, ফলমূল, নোংরা খাবার, বাসি খাবার, দূষিত পানির মাধ্যমে কেঁচো কৃমির ডিম আমাদের মুখে প্রবেশ করে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড় চোপড় হাত, পা সঠিকমত না ধুয়ে নখের মাধ্যমে আঙুলের ভাজে লেগে থাকা ডিম খাওয়ার সময় খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের পেটে প্রবেশ করে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে বাসা বানায়। পরে স্ত্রী কৃমিরা এখানে ডিম দেয়। একটি স্ত্রী কৃমি দৈনিক প্রায় ২ লক্ষ ডিম দেয়। মানুষের অন্ত্রে ১০-৪০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। পরে মানুষের মলের সাথে বাহিরে নিষ্কাশিত হয়। সুতা কৃমি দেখতে সুতার মতো, ছোট, পাতলা ও সাদা বর্ণের এরা সাধারণত মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে বাস করে। কিন্তু বড় হয়ে উঠলে সেখান থেকে বৃহদান্ত্রের কোলনে আশ্রয় নেয়। বক্রকৃমির মুখ ছোট গাঢ় গোলাপী রঙের এরা এত ছোট যে খালি চুখে দেখা যায় না। এটি মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে বাস করে হুকের মাধ্যমে রক্ত চুষে খেয়ে বেঁচে থাকে। প্রতিটি কৃমি প্রতিদিন ০.০৩-০.২ মিলিলিটার রক্ত এবং প্রতি ১২টি কৃমি ১% হিমোগেøাবিন কমায়। ফিতা কৃমি সাধারণত পেটে একটি মাত্র থাকে। তবে বেশীও থাকতে পারে। প্রাপ্ত বয়স্ক এ কৃমি ২-৩ মিটার লম্বা হয়। প্রাথমিকভাবে গরুর মাংসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে এ কৃমি প্রবেশ করে। গরুর মাংস কম সিদ্ধ করে খেলে এ কৃমিতে সংক্রমিক হতে পারে।
লক্ষণ: পেটে কৃমি থাকলে পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, বদহজম, পেট ভরাভরা ভাব, বমিবমি ভাব বা বমি, অরুচি, রক্তবমি, পেট ফুরে উঠা,
*ওজন কমে যাওয়া,
*পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া, *আমমিশ্রিত পায়খানা,
*শুকনো কাঁশি, মুখ ও শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ, শিশুদের পেট বড় হয়ে ফুলে উঠা,
*ঘনঘন ডেকুর উঠা, *শিশুরা সাধারণত পেট মাটিতে দিয়ে শুয়ে থাকা,
*মুখ দিয়ে শ্লেষা বের হওয়া অথবা পায়খানা রাস্তা বারবার হাত দিয়ে স্পর্শ করা এবং বড়দের ব্যাপারে রাতের বেলায় পায়খানার রাস্তায় ছিমছিম কামড়ানো ইত্যাদি।
যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়ঃ কৃমি যেহেতু পেটের ক্ষুদ্রান্ত্রে বসবাস করে। তাই শরীরের সকল পুষ্টি উপাদান চুষে খায় তাই শরীর দিন দিন মারাত্মকভাবে দুর্বল করে ফেলে। রক্ত শূণ্যতার রোগ সৃষ্টি করে। পিত্তনালিতে ঢুকে নালি পথ বন্ধ করে দিয়ে জন্ডিস রোগ সৃষ্টি করতে পারে। অগ্ন্যাশয় নালিতে গিয়ে নালিপথ বন্ধ করে দিয়ে প্যানক্রিয়াটাইটিস এবং অ্যাপেন্ডিসে গিয়ে আটকে অ্যাপন্ডিসাইটিসের সৃষ্টি করতে পারে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ করে। কৃমিতে বেশী আক্রান্ত হলে শরীর চুলকায়, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, পেটে আলসারের ব্যথা, মহিলাদের প্রসাবের রাস্তা দিয়ে সাদা সাদা ¯্রাব বের হতে পারে। ফলে শরীর মারাত্মকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে এবং স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায়।
প্রতিরোধে করণীয় : মল ত্যাগের পর, খাবার আগে, খাবার তৈরি এবং পরিবেশনের আগে সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
*নিয়মিত গোসল করা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় পরতে হবে। এবং হাতের নখ নিয়মিত কেটে ছোট রাখতে হবে। *শিশুদের ঘুমানোর সময় জাঙ্গিয়া পরে শোয়াতে হবে যাতে হাত দিয়ে মলদ্বার চুলকাতে না পারে। *শিশুকে ধুলিবালি মাটিতে বা খালি পায়ে বা খালি হাতে খেলতে দেয়া যাবে না।
*হাতের নখ পরিষ্কার রাখতে হবে। *শাক-সবজি ফলমূল, তরিতরকারি ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। *অর্ধসিদ্ধ বা অসিদ্ধ কোন মাংস খাওয়া যাবে না। *যেখানে সেখানে মল ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে বা স্যানিটারী লেট্রিন ব্যবহার করতে হবে। *বিশুদ্ধ পানি বা পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। *অথবা টিউবওয়েল এর পানি পান করতে হবে।
*প্রতি ৪ মাস পর পর পরিবারের সবাইকে বয়স অনুযায়ী কৃমির ঔষধ খেতে হবে। *খালি পায়ে হাটার অভ্যাগ ত্যাগ করতে হবে। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ খেতে হবে। *তবে মনে রাখবেন পরিবারের সবাইকে একসাথে কৃমির ওষুধ খেতে হবে অথবা একই বিছানায় যারা ঘুমান তারা অবশ্যই একসাথে কৃমির ওষুধ খেতে হবে। *বছরের যেকোন সময় কৃমির ওষুধ খাওয়া যায়।
সতর্কতা: খুব কম বয়সী শিশু এবং যেসব মায়েরা বাচ্চা নিতে যাচ্ছে অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় কৃমির ওষুধ খাবেন না। তাছাড়া জ্বর, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে কৃষির ওষুধ না খাওয়াই উচিত।
মোঃ জহিরুল আলম-শাহীন
শিক্ষক, কলাম ও স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।