Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জীবনের জন্য রক্ত

| প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জীবনের জন্য প্রয়োজন রক্ত। রক্তের বিকল্প শুধু রক্ত। অপারেশনের জন্য, হিমোফেলিয়া, থ্যালাসেমিয়া বা দুর্ঘটনার কারণে রক্তক্ষরণ হলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন হয়। শুধু রক্ত হলেই হবে না, জীবনের জন্য চাই বিশুদ্ধ রক্ত। রক্ত দিন জীবন বাঁচান । রক্ত দিতে আপনার সদিচ্ছাই যথেষ্ট। রক্ত দিতে ৫-৭ মিনিট সময় লাগে। আপনার দেওয়া এক ব্যাগ রক্ত ফিরিয়ে দিতে পারে একজন মুমূর্ষু রোগীর জীবন। একজন সুস্থ মানুষ প্রতি ৪ মাস পরপর রক্ত দিতে পারবেন। ঘাটতি রক্ত অল্প দিনের মধ্যেই পূরণ হয়ে যায় এতে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। রক্ত দেওয়ার পর সারাদিনে প্রচুর পরিমাণে তরল গ্রহণ করুন। তবে রক্ত গ্রহণ করার আগে জানা দরকার, তা কতটুকু নিরাপদ। আসুন জেনে নিই রক্ত গ্রহণ সম্পর্কিত কিছু তথ্য- ১.রক্তদাতার যোগ্যতা : রক্তদাতার বয়স হতে হবে ১৮-৫২ বছর। ২. রক্তদাতার ওজন: পুরুষ অন্যূন ৪৮ ও মহিলা ৪৫ কেজি । তবে বিশেষ উপাদানের ক্ষেত্রে ওজন ন্যূনতম ৫৫ কেজি। ৩. রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলেও কোনো অ্যান্টিবায়োটিক না নিলে রক্ত দেয়া যাবে। মোট কথা, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেই কেবল রক্ত দেয়া যাবে। রক্তদানের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখুন, জ্বর-ভাইরাস জ্বর থেকে সুস্থ হওয়ার ৭ দিন পর রক্ত দেয়া উচিত। ডেঙ্গুজ্বর হওয়ার কমপক্ষে ৬ মাস পর । ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে সুস্থ হওয়ার কমপক্ষে ১২ মাস পর। টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে সুস্থ হওয়ার কমপক্ষে ৬ মাস পর । ডায়রিয়ার ৩ সপ্তাহ পর। বসন্তের ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার কমপক্ষে ৬ মাস পর। য²ার ক্ষেত্রে পূর্ণমাত্রার ওষুধ সেবনের ২ বছর পর। চর্মরোগজনিত সমস্যায় রক্তনালী আক্রান্ত না হলে রক্ত দেয়া যাবে। কারও হাঁপানি হলে সে যদি ইনহেলার নেয় বা নিয়মিত ওষুধ সেবন করে, তবে রক্ত দিতে পারবে। ডায়াবেটিস হলে ওষুধ চলা অবস্থায় রক্ত দিতে পারবে না। তবে খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজ স্বাভাবিক মাত্রায় থাকলে দিতে পারবে। রক্তস্বল্পতায় কেউ রক্ত দিতে পারবে না। মৃগীরোগী হলে না দেয়াই উচিত। অ্যাকজিমা থাকলে রক্ত দেয়া যাবে না। কান বা নাক ফোঁড়ালে আগে স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। রক্তদানের আগে ধূমপান করা উচিত নয় এবং রক্তদানের পর কমপক্ষে ১ ঘন্টা ধূমপান করা যাবে না। অ্যালকোহল পানের ৭২ ঘন্টার মধ্যে রক্তদান করা উচিত নয়। অপারেশন করলে সুস্থ হওয়ার ১ বছর পর। রক্তগ্রহণ করলে কমপক্ষে ১ বছর পর। দাঁতের চিকিৎসা যেমন ফিলিংয়ের একদিন ও রুটক্যানেলের তিনদিন পর। হেপাটাইটিস থেকে সুস্থ হওয়ার ৬ মাস পর। তবে হেপাটাইটিস বি ও সি আক্রান্তরা কখনও রক্তদান করতে পারবেন না। ইনফ্লুয়েঞ্জা,টিটেনাস, জ্বর ও কোনো উপসর্গ না থাকলে একজন মানুষ রক্ত দিতে পারবে। বসন্ত, পোলিও , হেপাটাইটিস, মেনিনজাইটিস হলে ৪ সপ্তাহ পর। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলারা রক্ত দিতে পারবেন না। সন্তান জন্মদানের ৬ মাস পর দিতে পারলেও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় দিতে পারবে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঋতুস্রাব চলা অবস্থায় রক্ত না দেয়াই ভালো। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া অবস্থায় রক্ত দিতে বাধা নেই। ৪. যারা কখনোই রক্ত দিতে পারবে না: এইচআইভি পজিটিভ রোগী, সুঁচ, সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারী, ক্যান্সার, হৃদরোগ, বাতজ্বর, সিফিলিস (যৌন রোগ) ও কুষ্ঠ বা শ্বেতী রোগীরা রক্ত দিতে পারবেন না। জেনে রাখা ভালো-রক্ত দিলে প্রাণ বাঁচে, তাই জীবনের জন্য চাই রক্ত। তবে সেটা বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের পরীক্ষিত রক্তই হতে পারে এর একমাত্র সামাধান। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট
মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন