পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উমর ফারুক আলহাদী : অবৈধ অস্ত্রে চালান আসছেই। থেমে নেই অস্ত্র ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোর তৎপরতা। সীমান্ত এলাকাসহ রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় তথা কথিত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের চালান কিভাবে আসছে এর কোন সদুত্তর নেই আইন শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে। পূর্বাচল সিটি ও উত্তরা দিয়াবাড়ির খালে পানির নীচ থেকে বিপুল পরিমাণ আস্ত্রের চালান উদ্ধারে পর র্যাব পুলিশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। যে মূর্হুতে রাজধানীসহ দেশ ব্যাপী চলছে জঙ্গি বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান, ঠিক সেই মুর্হুতে এত বড় অস্ত্রে চালান উদ্ধারের ঘটনায় জঙ্গি বিরোধী অভিযানও এখন চ্যালেঞ্জর মূখে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ভেদ করে কিভাবে এত অস্ত্র দেশে ঢুকছে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকতেই পারে। কারণ এভাবে অস্ত্রের চালান ঢুকতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এত অস্ত্র গোলাবারুদ কোথায় থেকে কিভাবে আসছে, এর সাথে কারা জড়িত এসব প্রশ্নের কোন কুল কিনারা করতে পারছেন না আইন শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। এছাড়া সীমান্তের নিরাপত্তাও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গতরাতে ইনকিলাবকে বলেন,এসব অস্ত্রের চালান কবে আসছে ,কার এনেছে তা তদন্তের পর বলা যাবে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে অস্ত্রগুলো সম্প্রতি আনা হয়েছে কিনা আরো অনেক আগেই কোন সন্ত্রাসী গোষ্টী এনেছে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অস্ত্রে বড় বড় চালান এর আগেও আসছে। আমরা চেষ্টা করছি তা বন্ধ করতে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জন্য আমাদের আইন শৃংখলা বাহিনী ব্যাপক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ অভিযানের একটি সফল অভিযান হলো পুর্বাচল সিটির লেক থেকে অস্ত্রের চালানটি উদ্ধার করা। সন্ত্রাসী চক্রের হাতে যাওয়ার আগেই অস্ত্রের চালানটি ধরা পড়েছে। এতেই প্রমাণ হয় র্যাব পুলিশ খুবই তৎপর। তিনি বলেন, সরকার জঙ্গি দমনে যেমন সফলতা অজৃন করেছে, তেমনি অস্ত্র উদ্ধার অভিযানেও সফল।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন,অবৈধ অস্ত্রের পেছনে আন্তর্জাতিক মাফিয়া ও চোরাচালানিদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কাজ করছে। তারা অস্ত্র ব্যবসার রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশকে। তবে এ সুযোগে এসব অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্ষুদ্র একটি অংশ বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতেও চলে যাচ্ছে বলে তাদের ধারণা। এ ছাড়া এ ধরনের অস্ত্রের চালান দেশে আরও রয়েছে বলে মনে করছেন অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা।
পূর্বাচল সিটি লেক থেকে অস্ত্রে চালান উদ্ধার ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান ও ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি শফিকুল ইসলাম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, এধরনের পরিত্যক্ত বড় ধরনের অস্ত্র চালানের সাথে জড়িতদের সনাক্ত করা কঠিন। পৃথিবীর অনেক দেশের অস্ত্রে সাথে এসব অস্ত্র মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। কিন্ত এসব অস্ত্র কোথায় তৈরী এবং কারা জড়িত এখন পর্যন্ত তা সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। জড়িতদের খোঁজে বের করা এবং অস্ত্রের উৎস সর্ম্পকে জানতে তদন্ত চলছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবৈধ ক্ষুদ্রাস্ত্র নিয়ে কাজ করা সংগঠন বিপিডিসির (বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনার সেন্টার) প্রধান শরীফ এ কাফি বলেন, চীনের আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান নোরিনকো থেকে অস্ত্র কেনা খুব কঠিন কিছু নয়। তবে নির্ধারিত কিছু এজেন্টের মাধ্যমে অস্ত্র-গোলাবারুদ কিনতে হয়। এসব এজেন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনের পর ‘সর্বশেষ ব্যবহারকারীর সনদ’ (এন্ড ইউজার্স সার্টিফিকেট বা ইইউসি) জমা দিলে কারখানা থেকেই প্রয়োজনমতো অস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ পাওয়া সম্ভব। এসব এজেন্ট অস্ত্র সংগ্রহের পর ট্রানজিট হিসেবে বাংলাদেশে পাঠায়। পরবর্তীকালে সময় বুঝে ছোট ছোট চালানে অস্ত্র-গোলাবারুদ চলে যায় নির্ধারিত ব্যক্তি ও সংগঠনের হাতে।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো চীনের কারখানায় তৈরি। যদিও অস্ত্রের গায়ে উৎপাদনকারী দেশের নাম উল্লেখ নেই। তবে অস্ত্রের ধরন দেখে এগুলো চীনে তৈরি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, উদ্ধার করা অস্ত্রের সাথে বাংলাদেশের জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী কোনো সংগঠনের ব্যবহার করা অস্ত্রের সাথে মিলনি। জঙ্গিদের অস্ত্র আর উদ্ধার করা অস্ত্রের মিল না থাকলেও এর সাথে জঙ্গিদের কোন যোগসুত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, অন্য কোনো উদ্দেশ্য কিংবা ভিন্ন কোনো দেশের জন্য এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ আনা হয়েছিল কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা এসব আগ্নেয়াস্ত্রের আমদানিকারক তা জানতে ইতিমধ্যে সব ধরনের গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হয়েছে। মনিরুল ইসলাম আরো বলেন,গত বছর রাজধানীর দিয়াবাড়িতে যে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল তার সাথে রূপগঞ্জের ঘটনার মিল আছে। দু’টি স্থানে একই কৌশলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখা হয়। এর পেছনে একই চক্র সক্রিয় থাকতে পারে।
গত ১ জুন রাত থেকে ২ জুন সকাল পর্যন্ত পূর্বাচল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬২টি চায়নিজ রাইফেল, ৪০টি এসএমজি, দু’টি রকেট লঞ্চার,পাঁচটি পিস্তল, ৫৪টি হ্যান্ডগ্রেনেড, ৪৯টি মর্টার শেল, ৪৪টি ম্যাগজিন, গুলি, ডেটোনেটরসহ বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো ব্যাগে ভরে একটি ডোবায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই কোনো অপরাধী চক্র এই বিপুল অস্ত্র গোরাবারুদ এনে থাকতে পারে। তবে কে বা কারা এই আগ্নেয়াস্ত্র এনেছে সে সম্পর্কে গতকাল পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ১৮, ১৯ ও ২৫ জুন তুরাগ থানাধীন মিরপুর-আশুলিয়া বেড়িবাঁধসংলগ্ন (বৌদ্ধ মন্দিরের পেছনে) দিয়াবাড়ি খাল থেকে তিন দফায় বিপুল অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১৮ জুন উদ্ধার করা হয় ৯৫টি ৭.৬২ বোরের পিস্তল ও ১৯২টি ম্যাগজিন, দু’টি নাইন এমএম পিস্তল ও ৮৪০টি গুলি,১০টি গেøাক পিস্তলের ম্যাগজিন, এসএমজির (সাব মেশিনগান) ২৬৩টি ম্যাগজিন ও ২১৭টি গুলি, ১০টি বেয়নেট, অস্ত্র পরিষ্কার করার ১৮০টি রড, ১০৪টি স্প্রিংযুক্ত আইএডি বক্স। পরদিন ১৯ জুন এসএমজির ৩২টি ম্যাগাজিন ও ৮টি কিনিং রড পাওয়া যায়। এরপর ২৫ জুন আগের ঘটনাস্থলের প্রায় এক কিলোমিটার দূরের লেক থেকে আরো তিনটি ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ব্যাগগুলোতে পাওয়া যায় পাঁচটি ওয়াকিটকি, দু’টি বড় আকারের বেতারযন্ত্র, দু’টি এন্টোন ফিডার কেবল, ২২টি ছোট-বড় প্লাস্টিকের ঢাকনাযুক্ত কৌটা, যাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় রড, আইসি, ক্রিস্টাল, ট্রানজিস্টার, ক্যাপাসিটার, রেজিস্টার ইত্যাদি সার্কিট, বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস ভর্তি ৪০টি পলিথিনের ব্যাগ, পলিথিনে মোড়ানো কালো রঙের সাত প্যাকেট বিস্ফোরক জেল, রুপালি রঙের ৫৫টি ছোট স্প্রিংযুক্ত বাক্স, সবুজ রঙের স্প্রিংযুক্ত ২৭০টি বাক্সসহ আরো কিছু ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। উদ্ধার করা অস্ত্র, গুলি ও ম্যাগজিন একেবারে নতুন, স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো। এর মধ্যে ৭.৬২ বোরের পিস্তল মূলত সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ব্যবহার করে। এই আগ্নেয়াস্ত্র কোথায় উৎপাদন হয়েছে তার কোনো সীল পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর উত্তরার খাল থেকে ‘উদ্ধার’ হওয়া বিপুল সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎস এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পুলিশের চেকপোস্ট ডিঙিয়ে কিভাবে উত্তরায় একটি নম্বরবিহীন গাড়ি ঢুকলো তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তখন জানিয়ে ছিল পুলিশ। তবে আজ পর্যন্ত এঘটনার কোন কুল কিনারা হয়নি। আইন শৃংখলা বাহিনী উদঘাটন করতে পারেনি কারা এই অস্ত্রে চালানটি এনেছিল, এর গন্তব্যই বা কোথায় ছিল। এরহস্য উদঘাটন হওয়ার আগেই আরো একটি বড় ধরনের অস্ত্রের চালান আটক করা হলো পূর্বাচল সিটির লেক থেকে।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নম্বরবিহীন একটি পাজেরো গাড়িতে করে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ষোলহাটি বৌদ্ধ মন্দিরের খালের পাশে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর সেগুলো উদ্ধার করা হয়। তবে তল্লাশি চৌকির এতো কড়াকড়ি ও পুলিশি টহল থাকলেও কিভাবে নম্বরবিহীন গাড়ি রাজধানীতে ঢুকল তার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।