পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্লমবার্গ : সউদী আরব সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেল সম্পদে সমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতাদের সাথে সাক্ষাত ও তাদের প্রশংসা করেন। এ সময় তারা ট্রাম্পের সাথে আরবদের যে ঐক্য প্রদর্শন করেন তার অবসান ঘটে যখন এসব দেশের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
ট্রাম্প ও সউদী বাদশাহ সালমান ইরানকে বিশে^ সন্ত্রাসবাদের প্রধান মদতদাতা বলে আখ্যায়িত করার তিনদিন পর সউদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউ.এ. ই.) ইরানকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করার জন্য কাতারকে অভিযুক্ত করে। সংবাদপত্র, ধর্মনেতা এবং এমনকি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কাতারের শাসক শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানিকে আক্রমণ করেন। রিয়াদ-ভিত্তিক আল-জাজিরাহ তার বিরুদ্ধে ইরানের ছুরি দিয়ে প্রতিবেশীদের আঘাত করার জন্য অভিযুক্ত করে।
বিশ্লেষকরা বলেন, ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে বলীয়ান সউদী আরব ও ইউ.এ.ই. মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি প্রভাবের বিরুদ্ধে সম্মিলিত জোটকে দুর্বল করতে পারে এমন যে কোনো বিরোধিতা চূর্ণ করতে চায়। দু’দেশ মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসের মত ইসলামী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন বন্ধের জন্য কাতারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচিতে সিনিয়র রিসার্চ ফেলো পিটার স্যালিসবারি বলেন, আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রকে সউদী আরবের স¦ার্থের সাথে নিজেকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত হতে দেখছি। এ ঘনিষ্ঠতা যদি সউদী আরবের মধ্যে এ মনোভাব সৃষ্টি করে যে তারা আসলেই এ অঞ্চলের মধ্যে অথবা তাদের মিত্রদের যে কেউই স্বতন্ত্র পন্থা গ্রহণ করলে তাকে শায়েস্তা করতে পারে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
বাজার ঝুঁকি
উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার অভ্যন্তরীণ বিরোধ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের আবেদন হ্রাস করতে পারে। এমনকি ট্রাম্পের সফরের আেেগ সিটিগ্রæপ-এর ১১ মে’র এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার এক তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব তেল ও অর্থবাজারে পড়তে পারে।
ট্রাম্প রিয়াদে দু’দিন অবস্থান করেন। এ সময় তিনি দু’দেশের মধ্যে ৪০০ বিলিয়ন ডলার চুক্তি স্বাক্ষর তদারক করেন। তিনি কাতারের মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় নিয়ে শেখ তামিমের সাথে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যকার এ বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের।
সর্বশেষ সংকটের সৃষ্টি হয় তখন যখন রাষ্ট্র পরিচালিত কাতার বার্তা সংস্থা ক্রমবর্ধমান ইরান বিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে শেখ তামিমের সমালোচনার খবর প্রকাশ করে। কর্মকর্তারা দ্রুত খবরটি মুছে ফেলেন, এ খবরের জন্য হ্যাকারদের দায়ী করেন এবং শান্ত থাকার আবেদন জানান।
কিন্তু তা সউদী ও ইউ.এ.ই.-র সংবাদ মাধ্যমগুলোকে কাতারের বিরুদ্ধে মৌখিক যুদ্ধ ঘোষণা থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। তারপর সপ্তাহান্তে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সাথে শেখ তামিমের ফোনে কথাবার্তাকে সউদী আরবকে পাত্তা না দেয়া হিসেবে দেখা হয়। ফলে, কাতারের প্রতি তাদের সমালোচনা আরো বিস্তার লাভ করে।
অত্যন্ত নমনীয়
কিছু উপসাগরীয় দেশ কাতারকে ইরানের প্রতি অত্যন্ত নমনীয় মনে করে, বলেন জর্জটাউন বিশ^বিদ্যালয়ের ওয়াশিংটন ভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ পল সুলিভান। তিনি বলেন, কাতার ও ইরান বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র শেয়ার করে এবং তারা নিকট প্রতিবেশী।
সউদী আরবের ওকাজ সংবাদপত্র সন্ত্রাসী গ্রæপ ও সাম্প্রদায়িক ইরানি শাসকগোষ্ঠির প্রতি সমর্থনের মাধ্যমে গুরুতর পাপ করার জন্য কাতারি শাসককে অভিযুক্ত করে। আরেকটি দৈনিক আল-এক্তিসাদিয়া কাতারকে এক অভ্যুত্থান ও বিশ^াসঘাতকতার আমিরাতে পরিণত হওয়া অভিযোগ করে।
সউদী কলামিস্ট জামিল আল সেয়াবি ওকাজ পত্রিকায় লেখেন, ‘ ট্রাম্প রিয়াদে এলেন ও গেলেন এবং সউদী আরব এই ঐতিহাসিক সফর থেকে তার অর্জন হিসাব করতে শুরু করল। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দেশের প্রতি অনুগত, ইরান ও ব্রাদারহুডের ক্রীড়নকদের নই।
উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা সোমবার ৩৪.৬ মিলিয়ন রিয়াল (৯.৫ মিলিয়ন ডলার) কাতারি শেয়ার বিক্রি করেন। ২১ মার্চের পর এটাই একক বাণিজ্যিক সেশনে সর্বাধিক পরিমাণ বিক্রি। কিউ ই সূচক দোহাতে ০.৫ শতাংশ নেমে যায়। মঙ্গলবার এ অঞ্চলে এটাই ছিল একমাত্র প্রধান শেয়ারবাজার সূচক যা হ্রাস পায়।
অতীত দ্ব›দ্ব
সুলিভান বলেন, ৬ সদস্যের জিসিসি-র মধ্যে আেেগও মতানৈক্য দেখা গেছে। ২০১৪ সালে সউদী আরব, ইউ.এ.ই. ও বাহরাইন কাতার থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের সাময়িক প্রত্যাহার করে। এ বিবাদের কারণ ছিল মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারকে কাতার সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু সউদী আরব ও ইউ.এ.ই. মিসরের সেনা নেতৃত্বের মহলকে অর্থায়ন করে যারা ব্রাদারহুড সরকারকে উৎখাত করে।
কাতার প্রবাসী তালিবান নেতাদের মত হামাসের নির্বাসিত নেতৃত্বকে আশ্রয় দিয়েছে। সুলিভান বলেন, কাতার সিরিয়া ও লিবিয়ার কিছু গ্রæপকে সমর্থন করে যাদের সাথে মিসর, সউদী আরব ও ইউ. এ.ই.-র বাস্তব সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, ইরানের সাথে কাতারের সম্পর্ক বিবেচনা করলে দেখা যায়, কাতার তার কৌশলগত গুরুত্বের ঊর্ধ্বে আঘাত করছে।
সিরিয়া থেকে ইরাক পর্যন্ত সংঘাতে সউদী আরব ও ইরান পরস্পরের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুছি শিয়ারা উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ সমর্থিত সরকারকে উৎখাতের পর সউদী আরব ২০১৫ সালে সুন্নী আরব দেশগুলোর একটি জোট গঠন করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
কাতারে জর্জটাউন বিশ^বিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড রিজিওনাল স্টাডিজের পরিচালক মেহরান কামরাভা বলেন, ট্রাম্পের সফরের পর সউদী আরব ও ইউ.এ.ই. এটাকে তাদের প্রভাব বিস্তারের ্সুযোগ হিসেবে দেখছে।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও মতানৈক্য নতুন কিছু নয়, কিন্তু কৌতূহলের বিষয় হচ্ছে সময় এবং নজিরবিহীন চাপ। তার অর্থ হচ্ছে সউদী আরব ও ইউ.এ.ই. কাতারের সম্পূর্ণ নতি স্বীকার ছাড়া আর কিছু চায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।