Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোরবানির পশুর হাড়-চর্বির জমজমাট ব্যবসা

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : কোরবানির পশুর চামড়ার বিশাল বাজারের আড়ালে হাড়-গোড়, চর্বি, লিঙ্গের জমজমাট ব্যবসা জমে উঠেছে। প্রতি বছরই ঈদুল আজহায় প্রায় কোটি পশু কোরবানি দেয়া হয়। এর একটি বড় অংশই গরু, মহিষ কিংবা ছাগল। এসব পশুর হাড়, লিঙ্গ, চর্বি, শিং এমনকি রক্ত, দাঁত ইত্যাদিরও রয়েছে বিশেষ চাহিদা। সারা বছর ধরে বিভিন্ন বাজার থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হলেও, তা জমে ওঠে ঈদের এই মৌসুমটাতে।
ঢাকার হাজারিবাগ এলাকায় হাড্ডিপট্টি নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে একটি স্থান। সেখানে গিয়ে দেখা যায় বস্তায় বস্তায় হাড়গোড়। সেখান থেকে শ্রমিকরা বড় বড় গামলার ভেতর বিভিন্ন হাড় তুলে সেগুলো লোহার ওজন মাপার যন্ত্রে বসিয়ে পরিমাণ বুঝে আবার বস্তাবন্দি করছেন। এরপর সেগুলো ট্রাকে ওঠানো হচ্ছে।
সেখানে কথা হচ্ছিল ভোলা মিয়ার সাথে। প্রায় ৪৫ বছর ধরে তিনি এই ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি জানান, এসব হাড় ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হবে। তিনি নিজে কেজি দরে এগুলো কেনেন। কাঁচা হাড় কেজি প্রতি ১০ টাকা। আর শুকনো হাড় ১৮ টাকা। আর ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকায় প্রতি টন বিক্রি করেন।
তার নিজেরই হাড় গুঁড়ো করার কল আছে বলে জানান ভোলা মিয়া। তিনি বলেন, গরু-মহিষের কোনও অংশই ফেলনা না।
গরু মহিষের হাড় ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনা-বেচা চলে এখানে। খুচরা এবং পাইকারি দুভাবেই চলে কেনা-বেচা। নেপাল বাবু নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ভিন্ন ধর্মের হলেও আমি গত প্রায় আট বছর ধরে গরুর লিঙ্গ কেনা-বেচার কাজ করে যাচ্ছি। কোরবানির পরদিন থেকেই তার সংগ্রহে চলে আসে ৩ টন। সব মিলিয়ে এখন তার সংগ্রহ ৫ টন। প্রথমে এগুলো খুচরা পর্যায়ে সংগ্রহ করার পর তাদের কাছ থেকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান। সেখান থেকে আবার চীন, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে এগুলো রপ্তানি করা হয় বলে তিনি জানান।
গরুর লিঙ্গ প্রতিটি পিস ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামে কেনা-বেচা চলে। সংগ্রহের পর এগুলো রোদে শুকাতে হয় নাহলে হিমাগারে রাখতে হয়। অন্যান্য জেলা শহর থেকেও এসব আনা হয় বলে জানান নেপাল বাবু। কসাই নামে পরিচিত অনেকেই যারা কোরবানির পশুর গোশত বানানোর কাজ করেন, তাদের অনেকেই বিভিন্ন বাড়ি থেকে গরুর শরীরের বিভিন্ন ফেলে দেয়া অংশ এনে এখানে বিক্রি করেন। এমনই একজন লোকমান মিয়া এই ঈদে বিভিন্ন বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা গরুর লিঙ্গসহ আরও কিছু দ্রব্য বিক্রি করেন নেপাল বাবুর কাছে।
হাজারিবাগ এলাকার ভেতর দিকে একজন নারীকেও দেখা গেল খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে হাড়সহ গরুর শরীরের বিভিন্ন অংশ কিনছেন। একটা সময় দেশের বাইরে গরুর শিং-এর বেশ চাহিদা থাকলে এখন আর সেই চাহিদা নেই। চাহিদা বেড়েছে হাড়, গরুর লিঙ্গ ও চর্বির। চর্বি সাবান তৈরির কাজে আর রক্ত শুকিয়ে খাবার তৈরি হয় পোল্টির ফার্মের জন্য। এসব ব্যবসায়ীদের একটি সমিতিও রয়েছে। তারা মনে করেন, গরুর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে এই ব্যবসাটি কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবসার মতো বড় না হলেও, এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে দেশের বাইরে। কিন্তু অনেকেই জানেন না বলে রপ্তানি আয়যোগ্য এসব দ্রব্যের একটা বড় অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরবানির পশুর হাড়-চর্বির জমজমাট ব্যবসা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ