Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র রেশ না কাটতেই দক্ষিণাঞ্চলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দুই নম্বর সতর্ক সংকেত

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


নাছিম উল আলম : দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপক’লে আছড়ে পরা ঘূর্ণিঝর ‘মোরা’র রেশ না কাটতেই গতকাল বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া আবারো যথেষ্ঠ দূর্যোগপূর্ণ হয়ে ওঠে। বর্ষা মাথায় করে দক্ষিণ-পশ্চিম মওশুমী বায়ু দক্ষিণ-পূর্ব উপক’লে অবস্থান করছে। আজ সকালের পরবর্তি ৪৮ঘন্টায় তা দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। ফলে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা অব্যাহত থাকারও সম্ভবনা রয়েছে।
দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গতকাল বরিশাল বিমান বন্দর থেকে দুটি উড়ান বাতিল করা হয়। বেসরকারী ইউএস বাংলা’র একটি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘন্টা পরে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে টেকঅফ করে বরিশাল বিমান বন্দরে অবতরণ করতে চরম ঝুঁকির কবলে পরে। বজ্র-বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে উড়জাহাজটি বরিশাল বিমান বন্দরের আকাশে প্রায় ৪০মিনিট ধওে চক্কও দিয়ে বার বার চেষ্টা করেও অবতরণ করতে ব্যার্থ হয়ে বিকের ৫টার পওে অঅবার ঢাকায় ফিরে যায়। বিমান-এর বিজি-৪৬৯ ফÍাইটটি বিকেল ৪টায় ঢাকা থেকে রওয়ানা হবার কথা থাকলেও শেস পর্যন্ত তা বাতিল করতে হয়। বাতিলকৃত ফ্লাইটের যাত্রীদের নিয়ে আজ সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে ও সকাল ৯টায় বরিশাল থেকে বিমান একটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরে ২নম্বর সতর্ক সংকেত জারী করায় অনধীক ৬৫ফুট দৈর্ঘের যাত্রীবাহী নৌযানগুলোর চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বরিশাল থেকে ঢাকামুখি ক্যাটামেরন সার্ভিসের নৌযান ‘গ্রীন লাইন-৩’ নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৩০মিনিট পরে গতকাল দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার উদ্যেশ্যে বরিশাল নদী বন্দর ত্যাগ করে। যাত্রী বোঝাই নৌযানটি বিকেল সাড় ৫টার দিকে বরিশাল ও চাঁদপুরের মধ্যবর্তি মেঘানা অতিক্রমকালে বিপরিতমুখি শ্রোত সহ উত্তাল ঢেউ-এর কবলে পরলেও কাপ্তেনের দক্ষতায় সন্ধার পরে নিরাপদে চাঁদপুর সংলগ্ন মেঘনা অতিক্রম করে ঢাকার দিকে চলে যায়।
প্রবল বজ্র বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়ার কারণে বরিশাল বিমান বন্দরের অপারেশন কার্যক্রমও গতকাল বার বারই বিপর্যস্ত হয়ে পরে। এর সাথে দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ থাকায় বিমান বন্দরে অপেক্ষমান যাত্রীদের যথেষ্ঠ দূর্ভোগে পড়তে হয়। নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে কোনমনে বিমান বন্দরটির কন্ট্রোল টাওয়ারসহ অপারেশনাল কার্যক্রম সচল রাখতে যথেষ্ঠ হীমশীম খান বিমান বন্দর কর্মীরা।  
গতকাল দুপুর থেকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে দক্ষিণাঞ্চলে নৌযোগাযোগের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবারহ ও বিতরন ব্যবস্থাও বারবারই ব্যাহত হয়। দুপুরের আগেই বরিশাল মহানগরীর রূপাতলী-পলাশপুর ৩৩কেভী সঞ্চালন লাইনে গোলযোগ দেখা দেয়ায় বিকল্প ব্যবস্থায় কাশীপুর থেকে সঞ্চালন ব্যবস্থা চালু রাখতে গিয়ে নগরীর একটি বড় অংশে লোডসেডিং করতে হয়। পরে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গোটা মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায়ই বিদ্যুৎ সরবারহে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় বার বার।
মঙ্গলবার সকাল থেকে উপক’লের দক্ষিণ-পূবে মোরা’র ছোবলে ভর করে আনা বৃষ্টিপাতের প্রভাবে বরিশাল অঞ্চলেও বিগত দিন পনেরর লাগাতর তাপ প্রভাহের পরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৩০ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পায়। কিন্তু বুধবার তা পুনরায় প্রায় ৩৪ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে উন্নীত হয়। গতকাল বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ডিগ্রী সেলসিয়াস। দুপুরের আগে থেকেই বরিশাল মহানগরীসহ সন্নিহিত এলাকা কালো মেঘে ঢেকে যাবার পরে দুপুর ৩টা থেকে মাঝারী বর্ষনে শিক্ত হয়। সন্ধা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ২২মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা করা হয়। এর সাথে মাঝারী মাত্রার বজ্রপাতে জনজীবনে যথেষ্ঠ ভীতিও ছড়ায়। সন্ধার পরে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা আরো বাড়তে থাকে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ওপর অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সারা দেশের দিনের তাপমাত্রা হৃাস ও রাতের তা অপরিবর্তিত থাকার কথা জানিয়ে বরিশালসহ দক্ষিণ উপক’লে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া সহ ভারী বর্ষনের কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। ২৯মে’র পওে দক্ষিণ উপক’লে এ বর্ষন স্বাভাবিকে হলেও গতমাসে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিাতের পরিমাণ ছিল স্বভাবিকের চেয়ে অনক কম। অথচ গত মার্চে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২% ও এপ্রিলে ১৬০%-এর মত বেশী বৃষ্টিপাত হয় দক্ষিণাঞ্চলে।  
সন্ধ্যা ৬টার পরে বরিশাল মহানগরীসহ সন্নিহিত এলাকায় বিকট শব্দে ব্যাপক বজ্রপাতসহ প্রবল বর্ষণে জনজীবনে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ঘন্টাধিককাল ব্যাপি এ বজ্র বৃষ্টিতে জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ৫৭ মি.মি বৃষ্টি হয়েছে। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত থামলেও বজ্রপাত অব্যাহত ছিল। বরিশাল মহানগরীর অর্ধেকেরও বেশি এলাকা বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকা এবং দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকারই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।



 

Show all comments
  • আকমল ২ জুন, ২০১৭, ১২:৫২ এএম says : 0
    বিদ্যুৎ দেয় না কেন???
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ