পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ কেটে গেলেও এর সক্রিয় প্রভাবে প্রবল সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে অতিবর্ষণে ভেসে গেছে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম। মারাত্মক পানিবদ্ধতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে জনদুর্ভোগ। ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। সেইসাথে প্রবল জোয়ারে প্লাবিত হয় মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকা। এদিকে নগরীতে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় কয়েকটি পাহাড়ে গতকাল (বুধবার) উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ছেড়ে যেতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া গভীর সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে থাকা মাঝি-মাল্লাদের এখনো কোনো সন্ধান মেলেনি। বঙ্গোপসাগরে ছয়টি মাছ ধরার ট্রলারে কমপক্ষে ৭১ জন মাঝি-মাল্লা নিখোঁজ থাকার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে চট্টগ্রামে ৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই মহানগরীর বিভিন্ন এলাকাসহ উপকূলীয় বিস্তীর্ণ চর ও জনপদ প্রবল জোয়ারে প্লাবিত হয়। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে যাওয়া লোকজনদের নিজ বাড়িঘরে গিয়ে আরও দুর্ভোগে পড়তে হয়। জেলার উপকূলীয় এলাকা আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুন্ড, স›দ্বীপসহ নগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর, চাক্তাই, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রবল জোয়ারের পানি উঠে। প্রবল জোয়ারের সাথে রাতভর ভারী বর্ষণে মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়।
জেয়ার প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় বাসাবাড়ি, মার্কেট, বিপণি কেন্দ্র, গুদাম, আড়ত ও দোকানপাটে মালামাল বিনষ্ট হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি সরে যেতে শুরু করলেও বাসাবাড়ি, গুদাম, আড়ত ও সড়কে কাদা, বালি ও আবর্জনার স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা যায়। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, সেখানে গুদাম ও আড়তে পানি ঢুকে যাওয়ায় মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রেয়াজুদ্দিন বাজার, চকবাজারসহ নগরীর কয়েকটি মার্কেটে পানি ঢুকে যায়। সেখানেও মালামাল বিনষ্ট হয়। বিশেষত নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে কাদা-পানি ও আবর্জনা অপসারণে দুর্ভোগে পড়েন রোজাদারগণ। আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় ছিল কোমর সমান পানি।
সকালে অফিসমুখী লোকজনকে চরম বিপাকে পড়তে হয়। বেশিরভাগ সড়ক ছিল পানির নিচে। সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গণপরিবহন ছিল কম। বিকল্প পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়ায় অফিসে যেতে হয়েছে অনেককে। অনেকে আবার পানি ডিঙিয়ে ছুটেছেন কর্মস্থলে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি, বিদ্যুতের হাহাকার। তার উপর পানিবদ্ধতা নগরজীবনকে আরও দুর্বিসহ করে তোলে। দিনভর বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ময়লা-আবর্জনার জঞ্জাল সরাতে ব্যস্ত ছিলেন লোকজন।
ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের এলাকা ছেড়ে যেতে সতর্কতা জারি করে জেলা প্রশাসন। নগরীর কয়েকটি এলাকায় মাইকিং করা হয়। মতিঝর্ণা ও বায়েজিদ এলাকায় অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। লালখান বাজার এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছিয়া খাতুন ও বায়েজিদ এলাকায় অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জোবায়ের আহমেদ। এসব অভিযানে বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। মহানগরীর ৩১টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোরা ঊপকূল অতিক্রম পর বঙ্গোপসাগরে ছয়টি মাছ ধরার ট্রলারেসহ ৭১ জন মাঝি-মাল্লা নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সাগরে ডুবে মারা গেছেন একজন জেলে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই ট্রলারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে চট্টগ্রামের বাঁশখালী এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে। জেলেদের স্বজনেরা জানায়, বাঁশখালী থেকে চার দিন আগে দুটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার গভীরে সাগরে মাছ ধরতে যায়। নৌকা দুটিতে মোট আটজন মাঝি-মাল্লা ছিল। ঝড়ের পর এখনও তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কুতুবদিয়া অঞ্চল থেকে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া চারটি ট্রলার তীরে ফিরে আসেনি বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসব ট্রলারে মোট ৬৩ জন মাঝি-মাল্লা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
পাঁচ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত
চট্টগ্রাম জেলায় ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে আড়াই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বিধস্ত এবং আরও প্রায় আড়াই হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোরার আঘাতে উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী, স›দ্বীপ ও আনোয়ারায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে জেলার কোথাও প্রাণহানি বা আহত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। জেলা প্রশাসন সূত্রে ক্ষয়ক্ষতির এ চিত্র পাওয়া গেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বলেন, ঝড়ে জেলার মোট দুই হাজার ৭৪৫টি ঘর সম্পূর্ণ বিধস্ত হয়েছে। এর বাইরে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৫৯৬টি ঘর।
বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় খানখানাবাদ, শেখেরখিল, ছনুয়া ও গন্ডামারা ইউনিয়নে কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে তুলনামূলক বেশি। উপজেলায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট আড়াই হাজার ঘরবাড়ি। এখন ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কাজ চলছে। সাগর বক্ষের দ্বীপ স›দ্বীপ উপজেলার ইউএনও গোলাম মোঃ জাকারিয়া বলেন, ৫০টি ঘর সম্পূর্ণ বিধস্ত হয়েছে। এছাড়া ছয়শ কাঁচা ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে উপজেলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলায় দুইশ ঘর বিধস্ত এবং আটশ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি জেলার প্রায় সবকটি উপজেলায় ঝড়ের প্রভাবে প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে থাকা প্রায় একশ কাঁচা দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।