পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আমানতের সুদের হার কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর নানাবিধ সার্ভিস চার্জ আরোপে ব্যাংকে টাকা রাখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে সাধারণ মানুষ।এ কথা মনে রাখতে হবে যে, ব্যাংকিং সেক্টরই হচ্ছে দেশের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও ব্যাবসায় বান্ধব পরিবেশের দর্পণ। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে মন্দাভাব বিরাজ করছে। বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহনের পরও বিশেষত: এফডিআই বা বিদেশি বিনিয়োগে সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা। এর ফলে অর্থনীতিতে কাঙ্খিত গতি সঞ্চারিত হচ্ছেনা। এমনকি আভ্যন্তরীণ বিনিয়োগেও চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ ক্ষেত্রে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করতে পারে। কিন্তু ব্যাংকিং সেক্টরের অস্বচ্ছতা, বিশৃঙ্খলা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ লুটপাট সে সম্ভাবনাকে অনেকটাই নস্যাৎ করে দিয়েছে। এমনিতেই ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কমানোর ধারাবাহিক তৎপরতায় আমানতকারিরা হতাশ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তার সাথে বোঝার উপর শাকের আঁটির মত এখন নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকার ব্যাংকে আমানতের উপর নতুন করে আবগারি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আমানতে বাড়তি আবগারি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে ব্যাংক গ্রাহকরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক আমানতের উপর আবগারী শুল্ক বর্তমান হারের দ্বিগুন করা হচ্ছে। সরকারের এহেন সিদ্ধান্তে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ব্যাংকার সংগঠন এবিবি’র একজন সাবেক চেয়ারম্যান এবং একটি বেসরকারী ব্যাংকের এমডি বলেছেন, নতুন করে আবগারি শুল্ক আরোপ করলে মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে বাড়িতে রাখতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে।
এ কথা ভুলে গেলে চলবেনা যে, আমানতকারিদের গচ্ছিত অর্থই হচ্ছে ব্যাংকের বিনিয়োগের মূল শক্তি। নি¤œ সুদহার এবং উচ্চ আবগারি শুল্কের কারনে ব্যাংকে আমানত কমে গেলে তা দেশের বিনিয়োগ ও অর্থনীতিতে নিশ্চিতভাবেই নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। গত বছর সংসদের বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে যে লুটপাট হচ্ছে তা’ নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত, এটা যাতে না হয় সে লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহনের কথাও তিনি সংসদকে জানিয়েছিলেন। তবে বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যাংকিং সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। কু-ঋণ ও খেলাপি ঋণের তালিকায় নতুন করে হাজার হাজার কোটি টাকা যুক্ত হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টর থেকে এবং ব্যাংকের মাধ্যমে লক্ষকোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এখন নতুন করে আবগারি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ব্যাংকের আমানতকারিদের লোকসানে ঠেলে দিয়ে বা নিরুৎসাহিত করে পুরো ব্যাংকিং সেক্টরকেই বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে কিনা তা নিয়ে এখনি ভাবতে হবে।
আমানতে সুদের হার কমে যাওয়ার সাথে সাথে ঋণে সুদ কমলেও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কোন ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি। বিনিয়োগ ও ব্যবসায় বান্ধব পরিবেশ না থাকায় সাধারণ মানুষ তাদের সঞ্চিত অর্থ ব্যাংকে এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছিল।এখন ব্যাংকে আমানতে সুদের হার কমার সাথে সাথে সঞ্চয়পত্রেও ধারাবাহিকভাবে সুদের হার কমানো হচ্ছে। অর্থাৎ দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই, সামাজিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নতুন নতুন শুল্ক ও ভ্যাট আরোপের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন করে তোলা হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় নানা অজুহাতে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মূলধন বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাংকিং সেক্টরের লুটপাট ও অর্থ পাচার যেমন বন্ধ করতে পারছেনা পক্ষান্তরে জনগনের আমানতের প্রবাহও নিশ্চিত করতে পারছেনা। এ ধরনের বাস্তবতা সামনে রেখে দেশকে মধ্য বা উচ্চ আয়ের দেশে পরিনত করার কথিত রূপকল্প জনগনের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হবে। আজ থেকে শুরু হচ্ছে দশক জাতীয় সংসদের ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট অধিবেশন। এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বিশাল আকারের বাজেট ঘোষনার মধ্য দিয়ে সরকার একটি নির্বাচনী চমক সৃষ্টি করতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে দেশের অর্থনৈতিক খাতকে সরকার কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তা’ নিয়ে জনমনে সংশয় সন্দেহ ক্রমে ঘণীভূত হচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত আরেকটি রিপোর্টে জানা যায়, সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ অভিযোগ করেছেন, সরকারের কাছের লোকরাই ব্যাংকের টাকা লুটপাট করছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকারী নীতির দুর্বলতা, আভ্যন্তরীণ অস্বচ্ছতা, বিশৃঙ্খলা এবং সরকারের সাথে সম্পৃক্ত প্রভাবশালী মহলের দ্বারা ভেতর ও বাহির থেকে লুটপাটের বন্দোবস্ত জারি রাখা হচ্ছে। কোটি কোটি মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সম্ভাব্য মূলধন অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলার যে কোন পদক্ষেপ গ্রহন থেকে সরকারকে বিরত থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।