পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কক্সবাজার ও রাঙ্গামাটিতে নিহত ৮, আহত শতাধিক ষ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম ষ সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৪৬ কিমি : ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ষ মাহে রমজানে আল্লাহর রহমতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি থেকে অলৌকিক রক্ষা ষ বন্দরে ৩নং সঙ্কেত : নৌবাহিনীর জাহাজে ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ
শফিউল আলম : বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র ছোবলে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে উপকূলভাগ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি কুতুবদিয়া দ্বীপ দিয়ে প্রবেশ করে এবং দুপুর ১২টা পর্যন্ত টানা ৬ ঘণ্টা আঘাত শেষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করেছে ‘মোরা’। এ সময় কক্সবাজারে ৬ ও রাঙ্গামাটিতে ২ জন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ও বাড়িঘর চাপায় আহত হয় প্রায় শতাধিক। চর, উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলে কমপক্ষে ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি কম-বেশি বিধ্বস্ত হয়েছে। সর্বত্র বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাছপালা ভেঙে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে অনেক এলাকায়। ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙর বরাবর পারকী সৈকতের কাছে চরে আটকা পড়েছে। এটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে নাবিকরা নিরাপদ। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র গতিবেগ ছিল চট্টগ্রাম মহানগরীর উপকণ্ঠে পতেঙ্গা উপকূলে গতকাল সকাল ১১টা ২০ মিনিটে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪৬ কিলোমিটার। কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় গতিবেগ ছিল সকাল পৌনে ১১টায় ১৩৯ কিমি। ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমের পুরো সময়েই বৃহত্তর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হয়েছে। এতে করে আঘাত হানার মুহূর্তজুড়েই ‘মোরা’র চোখ তথা নিজস্ব শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। চট্টগ্রামে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘন্টায় বৃষ্টিপাত হয় ৬৪ মিলিমিটার। ঝড় কেটে যাওয়ার পর বিকেল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কাজকর্ম প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসে। নৌপথে কিছু নৌযান, কার্গো কোস্টার চলাচল শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঘূর্ণিঝড়ে দূর্গতদের তাৎক্ষণিক সাহায্যার্থে কক্সবাজারে নৌ-বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজযোগে জরুরী ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণ করেছে। তাছাড়া সরকার ঘূর্ণিদূর্গত জনগণের জন্য দুই কোটি টাকা প্রাথমিকভাবে আর্থিক সাহায্য হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে। তবে পরে তা আরও বৃদ্ধি করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
সোমবার সন্ধ্যায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত ঘোষণার পর থেকে সারারাত এমনকি গতকাল সকাল পর্যন্ত উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো ছেড়ে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ নর-নারী, শিশু-বৃদ্ধ জীবন রক্ষার্থে সাইক্লোন শেল্টারসমূহ ও উঁচু নিরাপদ স্থানে ঠাঁই নেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে শত উৎকণ্ঠার মধ্যেও আশ্রয়কেন্দ্রেই ইফতার, তারাবিহ ও সাহরী সারেন রোজাদারগণ। ঘূর্ণিঝড় কেটে যাওয়ার পর তারা দুপুরের পর থেকে নিজেদের বাড়িঘরে গিয়ে লন্ডভন্ড অবস্থা দেখেন। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কক্সবাজার শহর এলাকাসহ চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, শাহপরীর দ্বীপ ও উখিয়া, চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী, বাকলিয়া, চান্দগাঁও উপকূলসহ বাঁশখালী, আনোয়ারা এবং পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম এলাকায় বাড়িঘর ও অবকাঠামার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তুলনামূলক বেশি। এসব এলাকার ঘূর্ণিদুর্গতরা ঢেউটিন ও বিভিন্ন ধরনের গৃহনির্মাণ সামগ্রী, খাদ্য সাহায্য জরুরিভিত্তিতে বরাদ্দের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।
আবহাওয়া ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ সূত্র ইনকিলাবকে জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের মূল আঘাতের সময়েই ভারী বৃষ্টিপাত, তখন সাগরে ভাটা থাকায় জলোচ্ছ¡াস না হওয়া, রাতের বদলে দিনের আলোতে ঘূর্ণিঝড় এবং এবার ব্যাপকহারে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন স্থানান্তর- এই চারটি কারণে ‘মোরা’য় যতটা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল তা হয়নি। এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে সমুদ্র তীরবর্তী পাহাড়-টিলা এবং বন-জঙ্গল প্রাকৃতিক বর্ম হিসেবে উপকূলবাসীকে আলগে রেখে ঘূর্ণিঝড়কে নিজের বুকে টেনে নেয়। এবারও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য বান্দরবন অঞ্চলে দীর্ঘদিনে বেড়ে উঠা বনসম্পদ আঘাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেটে যাওয়ার পর সর্বস্তরের ধর্মপরায়ণ চট্টগ্রামবাসীকে এখানে-সেখানে বলতে শোনা গেছে, পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর রহমতে আরও মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি থেকে অলৌকিক রক্ষা পাওয়া গেছে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত ঘোষণা সত্তে¡ও।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে (১৭) জানায়, কক্সবাজার ও খেপুপাড়া রাডার পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, উপকূলভাগ অতিক্রমরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে কুতুবদিয়ার নিকট দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটি বর্তমানে স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে পার্বত্য রাঙ্গামাটি ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। স্থল গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। (এটি ভারতের ত্রিপুরা-মিজোরামের দিকে সরে যেতে পারে)। এই গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮নং মহাবিপদ সঙ্কেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে গতরাত-আজ পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে পরবর্তী সময়ে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি ও আশপাশে বিরাজমান স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে আজ (বুধবার) বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সতর্কতা রয়েছে। এতে করে এসব এলাকায় পাহাড়-টিলা ধসেরও আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র তান্ডবলীলা। শুরুতেই তখন গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পতেঙ্গা, হালিশহর, সীতাকুন্ড এলাকায় কখনো ধীর গতিতে কখনো প্রবল বেগে উত্তর বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর দিকে টানা ৬ ঘণ্টা ধরে এগিয়ে চলে ‘মোরা’। এ সময় সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠে ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার। অবিরাম মুষলধারে বর্ষণও চলে সেই সাথে। এর ফলে দুপুর ১২টা থেকে ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সেই মূল ৬ ঘণ্টাতেই বঙ্গোপসাগরে ছিল পুরোটা ভাটার সময়। এ কারণে আগে ৪ থেকে ৬ ফুট উঁচু জলোচ্ছ¡াসের আশঙ্কা কথা জানানো হলেও ভাটার কারণে তা হয়নি। শুধু স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কিছুটা প্রবল জোয়ার বয়ে গেছে উপকূলভাগে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, গতকাল জোয়ারের শুরুর সময় ছিল বেলা ১১টা। আর সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় ছিল (হাই টাইড) বিকেল ৪ টা ৪৭ মিনিটে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের ঘোষিত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ শক্তির দিক দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে প্রলয়ংকরী মনে হলেও দিনের আলোতে ও ভাটার সময় উপকূলভাগ অতিক্রম করার কারণে এবং তদুপরি তখন অতিভারী বর্ষণ হওয়ায় এটি জানমাল, সহায়-সম্পদের তেমন মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি বয়ে আনেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ করে মাহে রমজানে রোজাদার ধর্মপ্রাণ জনগণ আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া জ্ঞাপন এবং সেই সাথে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
এদিকে, গতকাল সন্ধার পর থেকে নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে দমকা হাওয়ার সাথে ভারী বর্ষণ হয়েছে। এতে ঘূর্ণিদূর্গত গৃহহীন মানুষ পড়েছেন বিপাকে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে কক্সবাজার সমুদ্র উপক‚লসহ এর আশপাশের উপক‚লীয় অঞ্চলের কয়েক হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু গাছপালা উপড়ে গেছে। ঘণ্টায় একশ’ কিলোমিটারের বেশি বাতাসের গতিবেগ নিয়ে বাংলাদেশের উপক‚লরেখা অতিক্রম করার সময় বরিশাল, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, কলাপাড়া, চাঁদপুর, আরিচা, আনোয়ারা, ল²ীপুর, টেকনাফ, মাদারীপুর, রাজাপুর, পটিয়া, সীতাকুন্ড ও উখিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে এসব কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও গাছপালা ভেঙে পড়ার পড়ার পাশাপাশি মোরা’র আঘাতে হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
নাছিম উল আলম, বরিশাল ব্যুরো জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরা’র ছোবল-আতঙ্কে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপক‚লের প্রায় এক কোটি অদম সন্তান গত সোমবার বিনিদ্র রাত পার করেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সেন্টমার্টিন হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপক‚ল অতিক্রমকারী ঘূর্ণিঝর মোরা’র ছোবলের রেশ ভোলা পর্যন্ত পৌঁছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভোলাতে এ ঝড়ের তান্ডবে একজনের মৃত্যু ঘটেছে। ঝড়ের বিপদ থেকে বাঁচতে ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজাপুরের মঠবাড়ীয়া, বাগেরহাটের শরনখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও সাতক্ষীরা উপক‚লের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নেয়। ঘূর্ণিঝড় উপক‚ল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে পড়লেও গতকাল সন্ধায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোলা-ল²ীপুর, বরিশাল-ভোলা ও চাঁদপুর-শরিয়তপুর ফেরি সার্ভিসগুলো বন্ধ ছিল। তবে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রুট সমুহে নৌযোগাযোগ গতকাল দুপুরের পরে পূর্ণবহাল হয়েছে। দক্ষিণের নদী বন্দরসমুহে ২নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল থাকায় অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের সব যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বরিশালের পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩নম্বর সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। ঝড়ের সতর্কতা হিসেবে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবকটি নদী বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় আনায় সব ধরনের নৌ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় সোমবার দুপর থেকে। রাজধানী ঢাকা থেকেও দক্ষিণাঞ্চলমুখি সব নৌযানের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয় সোমবার দুপুরের পরে। উত্তর বঙ্গোপাসাগর ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থানরত সব মাছধরা নৌকা ও ট্রলারসমূহকে জরুরী ভিত্তিতে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিতে বলা হলেও এর অনেকই গভীর সমুদ্রে থাকার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে মহীপুর-আলীপুর, গলচিপা সহ বিভিন্ন মৎস বন্দরের একাধিক সূত্র।
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস জানান, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ গতকাল সকালে বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় যে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনার কথা ছিল তা হয়নি। তারপরও ‘মোরা’ উপক‚লে সৃষ্টি করেছে মারাত্মক ক্ষতির। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরার’ প্রভাবে বাড়ী-ঘরসহ গাছ-পালা ধুমড়ে মুছড়ে তছনছ হয়ে গেলো কক্সবাজারের জনজীবন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার অতিক্রম করে। সকাল ৬টার দিকে টেকনাফে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। একই সময়ে কক্সবাজার সদরে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া অফিস জানায়, মঙ্গলবার ভোর থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোর’ কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। সকাল ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র অবস্থান ছিল টেকনাফের সেন্টমার্টিন থেকে দক্ষিণে ১৩০ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এটি আরও ঘনীভ‚ত হয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হয়ে উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হয়। এদিকে, কক্সবাজার সীমান্ত এলাকা উখিয়া-টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বাতাসে উপড়ে গেছে বহু গাছপালা এবং অধিকাংশ টিনের চালা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু ও পানের বরজ।
রাঙ্গামাটি জেলা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি অতিক্রমের সময় দুপুর ১২ টায় শহরের আসাম বস্তি এলাকায় হাজেরা বেগম ও ভেদবেদী এলাকায় জাহিদা সুলতানা গাছ চাপায় নিহত হয়। জেলা প্রশাসক মানজারুল ইসলাম মান্নান দূর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে। এছাড়া রাঙ্গামাটি বিভিন্নস্থানে গাছ পালায় চাপা পড়ে অন্তত ১৬ জন আহত হয়।
কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে বাড়ী-ঘরসহ গাছ-পালা ধুমড়ে মুছড়ে তছনছ হয়ে গেলো কক্সবাজারের দ্বীপ-কুতুবদিয়ার জনজীবন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকলেও মরাকটালের ঘোর ভাটা থাকায় জ্বলোচ্ছাসের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেয়েছে দ্বীপের পৌনে দু’লাখ মানুষ। প্রবল বাতাসে ৬ ইউনিয়নে বিধ্বস্ত হয় অন্ততঃ ৬/৭ হাজার বসতঘর এবং ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ। নিখোঁজ রয়েছে মাঝি-মাল্লাসহ ৩টি মাছ ধরার নৌকা। তবে এ পর্যন্ত হতা-হতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের কারণে উত্তর ধূরুংয়ের পশ্চিম চরধুরুং ও কাইসার পাড়া এলাকা হয়ে সরাসরি সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে বহু বসতঘর। রাত ১০টার পর হতে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সমুদ্র উপক‚লীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লক্ষাধিক মানুষ এবার ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আতঙ্কে র্নিঘুম রাত কাটিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিডরের দীর্ঘ ১০ বছর পর আট নাম্বার মহাবিপদ সংকেত থাকায় মানুষ বেড়িয়ে পড়েছিল ঘরের বাইরে। আশ্রয় নিয়েছিল বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র সহ পাশাপাশি স্কুল, কলেজের মিলনায়তন এবং এলাকার পাকা-আধাপাকা বাড়ীগুলোতে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টার মধ্যে আঘাত হানার কথা থাকলে ঘুর্নিঝড় ’মোরা’ এ উপক‚লে আঘাত হানেনি। তবে মোরা’র খবরে ওয়াপদা বেড়িবাঁেধর বাইরের এবং নদী সংলগ্ন শতশত মানুষ আতঙ্কে রাত জেগে ছিল।
চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় মোড়ার তেমন প্রভাব চাঁদপুরে পড়েনি। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতি এখনো গুমোট হয়ে আছে। মোড়ার আক্রোশ থেকে প্রত্যন্ত চর এবং নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজনদের রক্ষায় সোমবার বিকেল থেকেই মাইকিং করে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাবার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। জেলার ৮ উপজেলার ১১৭ টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৩৮টি কেন্দ্রে ৪ হাজার ৩শ’ ৭০ জন লোক সোমবার রাতে আশ্রয় নেয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মোরা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অতিক্রম করার খবর পাওয়ার সাথে সাথে লোকজন অশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে যার যার বাড়িতে ফিরে যেতে শুরু করে। দুপুর ২টা নাগাদ আশ্রয় নেয়া সব মানুষ বাড়ি ঘড়ে চলে গেছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে। তবে চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীতে দুপুরের জোয়ারের সময় পানি কিছুটা বেড়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আরিচা সংবাদদাতা জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌ-পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় মোরার প্রবাহে পদ্মা-যমুনা নদীতে উত্তাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা এড়াতে সোমবার রাত ৮টা থেকে উক্ত নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ৫টায় এরির্পোট লেখা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ লঞ্চ চলাচল করতে না দিলেও, সকাল থেকে ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল করছে বলে লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ) এর সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে পদ্মা-যমুনায় ঝড়ো বাতাসে উত্তাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ঘটনা এড়াতে সকল ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে আনোয়ারা উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন রায়পুর, জুঁইদন্ডী ও বারশত ইউনিয়নের অনেক ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিকেলে জোয়ার বাড়ার সাথে সাথে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার পর থেকেই টানা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আনোয়ারায় দমকা হাওয়া ও প্রচন্ড ঝড়োবৃষ্টি শুরু হয়। উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন রায়পুরের দক্ষিণ সরেঙ্গা, পূর্ব গহিরা, ঘাটকুল, দক্ষিণ গহিরা, বার আউলিয়া, মালিপাড়া, উঠান মাঝির ঘাট, দোভাষীর ঘাট, ছিপাতলী ঘাট, সত্তার মাঝির ঘাট, খোর্দ গহিরা, ঘলাকাটার ঘাট, পরুয়া পাড়া, জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের খুরুস্কুল, চর জুঁইদন্ডী, দক্ষিণ জুঁইদন্ডী, পূর্ব জুঁইদন্ডী, পশ্চিম জুঁইদন্ডী ও বারশত ইউনিয়নের দুধ কুমড়া, গোবাদিয়া, বোয়ালিয়া, ফুলতলী গ্রামে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব এলাকার বেশিরভাগ পোল্ট্রি ফার্ম বিধবস্ত হয়ে পড়ায় হাজার হাজার মুরগির বাচ্চা মারা গেছে। উপড়ে পড়া গাছপালার কারণে বেশ কয়েকটি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ল²ীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে সোমবার মধ্যরাত থেকে মেঘনা উপক‚লীয় জেলা ল²ীপুরে হালকা বৃষ্টি ও বাতাস বয়ে যাচ্ছে। নদীর পানি কিছুটা বাড়লেও কোথাও প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া গতকাল সকাল থেকে ঝুঁকি নিয়ে অনেক জেলেকে নদীতে মাছ ধরতে দেখা গেছে। সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাটের লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে শত-শত যাত্রী আটকা পড়ে এখন থাকা-খাওয়ার সমস্যায় রয়েছেন বলে জানান তারা। এদিকে মোরা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০২টি আশ্রয় কেন্দ্র।
টেকনাফ সংবাদদাতা মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে কক্সবাজারের টেকনাফে সাড়ে ৬ হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। মোরা আঘাত হানার সময় নারী শিশুসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। মোরা’র আঘাতে দ্বীপের প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে এবং ৮শ’ ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হোসেন সিদ্দিক জানান, ঘূর্ণিঝড় আঘাতের উপজেলায় প্রায় ৩৫ জন নারী- শিশু আহত হলেও এখনো নিহত খবর পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা মোরা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মাদারীপুরের সর্বত্র প্রবল বর্ষণ ও দমকা হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। মাদারীপুর শহরের উপকন্ঠে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁ নদী ও শিবচরের পদ্মা নদীতে সকল প্রকার যানবহন চলাচল গত সোমবার থেকেই বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে লাগাতার প্রবল বর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চলসহ শহরের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। নদীতে সকল প্রকার নৌযান ও মাছ ধরার বন্ধ রাখার নির্দেশনাসহ ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবেলা করার জন্য জেলা প্রশাসন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন বলে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন।
রাজাপুর (ঝালকাঠি) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঘুর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে ঝালকাঠিতে থেকে থেমে কয়েক দফায় হালকা বাতাসসহ মাঝারী আকারের বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সকল রুটের নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। তবে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পানি বাড়েনি। জেলার কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে ঝালকাঠি জেলাজুড়ে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করায় সোমবার বিকেলে থেকেই জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানিয়েছেন, জেলার ৪ উপজেলায় মোট ৪৫টি আশ্রয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি ভবনসমূহ মানুষের আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত ছিল।
পটিয়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঘুর্নিঝড় ‘মোরা’ গতকাল চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার কারনে পটিয়া উপজেলা ও পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে। এদিকে পার্শ্ববর্তী কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা ও শিকলবাহা ইউনিয়নে বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পরে। ফলে পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলার পুরো এলাকায় ভোর সকাল থেকে এ রিপোর্ট তৈরি করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। খরনা, কেলিশহর, হাঈদগাও, কচুয়াই এলাকায় বর্ষা মওসুমের জন্য রোপন করা শসা, ঝিঙ্গা, বরবটি, কাকরল, করলা, লাউসহ ফসল ‘মোরার’ বাতাসের তীব্র বেগে লন্ডবন্ড হয়ে যায়। এছাড়া বিশ লাখ টাকা মূল্যের মাছের পোনা পানিতে ভেসে যায়। গাছপালার আঘাতে অর্ধশতাধিক কাচাঘরের ক্ষতিসাধন হয়।
সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সীতাকুন্ডে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে অন্তত ৩০টি কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার সলিমপুর, ভাটিয়ারী ও কুমিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এসব ঘর অল্প-বিস্তর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গতকাল ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম অতিক্রম করার সময় প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয় সীতাকুন্ডের বিভিন্ন স্থানে। এতে কিছু কিছু কাঁচা ঘর ও গাছ পালা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবেও উপজেলার কোথাও বড় ধরণের কোন অঘটন না ঘটলেও কুমিরা, ভাটিয়ারী ও সলিমপুরে অন্তত ৩০টির মত কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্থ।
উখিয়া (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে কক্সবাজারের উখিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্নস্থানে অসংখ্য গাছপালা ও কাঁচা বসতবাড়ি ভেঙে পড়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। সোমবার রাত সোয়া ২টা থেকে শুরু হয় দমকা হাওয়া আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়। গতকাল সকাল ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ সেন্টমার্টিন-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার গতিবেগে। এসময় ভারি বর্ষণও হয়। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নের রহমতের বিল ও আনজিমান পাড়ায় অবস্থিত বেশ কিছু চিংড়ী ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হয় ঘেরের বাঁধগুলো। এছাড়াও উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক হারে পানের বরজের ক্ষতি হয়। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে ও তার উপরে পড়ায় পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত বিছিন্ন রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।