Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল চান ৯ জন অ্যামিকাস কিউরি

| প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে সংসদের হাতে প্রদান করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে মতামত দিয়েছেন অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের ১০ সিনিয়র আইনজীবী। তাদের মধ্যে ৯ জন অ্যামিকাস কিউরি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে বিভিন্ন যুক্ত আদালতে উপস্থাপনা করেছেন। একজন আইনজীবী ষোড়শ সংশোধনী পক্ষে মতামত দিয়েছেন।  প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর শুনানি চলছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বেধীন সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে দশম দিনের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত প্রদান শেষ হয়। রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ও অ্যামিকাস কিউরিদের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের জবাব প্রদানের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। সেদিনই রাষ্ট্রপক্ষকে শুনানি শেষ করতে বলা হয়েছে। সেদিন অ্যামিকাস কিউরিদের মতামতের ওপর জবাব দিবেন রাষ্ট্রপক্ষ।
১২ জন অ্যামিকাস কিউরি মধ্যে ১০ জন আদালতে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মতামত দেননি। শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনী রাখার পক্ষে মত দেন। বাকিরা এই সংশোধনী বাতিলের পক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন।
সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেয়া আইনজীবীরা হলেন- ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ড. কামাল হোসেন, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার  রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, এম আই ফারুকী এবং এ জে মোহাম্মদ আলী।
গত ২৪ মে এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য প্রদান শুরু হয়, যা শেষ হলো। অ্যামিকাস কিউরিদের বাইরে আদালতের অনুমতি নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বক্তব্য রাখেন। তিনি হাইকোর্টের রায়ে সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে থাকা কিছু বিরূপ মন্তব্য প্রত্যাহারে আদালতের কাছে আর্জি রাখেন। এছাড়াও রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কথা বলার সময় চাইলে আদালত বলেন, আগামীতের দেখা যাবে।   
গতকাল সকালে আদালতের প্রথম কার্যদিকসের শুরুতে ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ১৬তম সংশোধনীর পক্ষে মত দিয়ে বলেন, বিচারকরা জনগণের হয়ে বিচার কাজ করছেন। তাদের জবাবদিহীতার প্রয়োজন আছে। এই জবাবদিহীতা করতে হবে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যদের কাছে। কারণ সংবিধান অনুযায়ী সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। এই জনগণের ভোটে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরাই জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। ফলে ষোড়শ সংশোধনী ওই জায়গাতেই নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সংসদের কাছে জবাবদিহীতা থাকবে। ১৬তম সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ওপর আঘাত করে না।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানিতে বলেন, সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ রয়েছে। এটা কারণে দলের বিপক্ষে ভোট দিলে সংসদ সদস্য পদ চলে যায়। এটা থাকার কারণে ইচ্ছা থাকার পরও স্বাধীনভাবে নিজ দলের বিরুদ্ধে মতামত দিতে পারেন না। এক্ষেত্রে কি জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে? হবে না। বিচারক অপসারণের বিষয়েও সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারবেন না। ফলে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে না। তিনি ১৬তম সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দিয়ে বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এতবড় বিষয় যে সংশোধনীর মাধ্যমে তা পরিবর্তন করা যায় না। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ে সংসদ সদস্যদের নিয়ে করা মন্তব্য আপনারা বাদ দিতে পারেন।
ফিদা এম কামাল বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোরই অংশ। সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ে এটা বলা হয়েছে। এছাড়া এই সুপ্রিম কোর্টই রায় দিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে রেখে দিয়েছে। এব্যবস্থাকে আদালত স্বচ্ছ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এ অবস্থায় ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাতিল করতে পারে না। তিনি বলেন, ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় পরিবর্তন আনা হলো। ৯৬ অনুচ্ছেদেও পরিবর্তন আনা হলো। বিভিন্ন সময়ে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিনি বলেন, হাত-পা বেঁধে রাখলেতো সাঁতার কাটা যাবে না।
অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য শেষ হলে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু ইন্টারভেনার হিসেবে আদারতে বক্তব্য বলেন, সংবিধানের ৭অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু সংবিধানের সংশোধনীর প্রয়োজন হলে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব কে করবে। তাদের পক্ষে সংসদ সদস্যরাই প্রতিনিধিত্ব করবেন। কারণ তারাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যরাই জনগণের প্রতিনিধি।
এসময় সিনিয়র বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, আমরাতো জানি যে প্রায় দেড়বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে। সকল পক্ষের মতামত নিয়েই এটা করা হয়েছে। আমরাতো একটি মহৎ উদ্দেশ্যে এ সংশোধনী এনেছি। অসৎ উদ্দেশ্যে আনা হয়নি। বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, এ মামলা যখন হাইকোর্টে বিচারাধীন তখনতো তাড়াহুড়ো করে আইন করলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, একটি নির্বাচনে একটি দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলো। পরের নির্বাচনে বা অন্য কোনো নির্বাচনে একটি দল সরকার গঠন করলেও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলো না। একটি ঝুলন্ত সংসদ হলো।
ওইসময় একজন বিচারকের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ উঠলো। তখন কি হবে? প্রধান বিচারপতি কি করবেন? তিনি বলেন, ৪৫ বছর ধরে দেখছি। এখন এমন হয়েছে যে একজন দাওয়াত দিলে আরেকজন যান না। আপনাদের দাওয়াতে যদি আপনারা না যান। আপনাদের যে ইগো সমস্যা।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ষোড়শ সংশোধনী

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ