পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ : চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে আঘাত আজ
৫ থেকে ৬ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা : নিরাপদ আশ্রয়ে লাখ লাখ উপকূলবাসী
চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রম বন্ধ : চর উপকূল দ্বীপাঞ্চলে জনমনে ভীতি-আতঙ্ক
সরকারের সর্বাত্মক প্রস্তুতি : সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং অব্যাহত
শফিউল আলম : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে আরও ঘনীভূত হয়। ‘মোরা’ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। ধেয়ে আসতে থাকে বাংলাদেশের উপকূলভাগের দিকে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসহ গোটা এ অঞ্চলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখানো হয়েছে। মংলা ও পায়রা বন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখানো হয়েছে। ‘মোরা’ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানতে পারে আজ মঙ্গলবার সকাল নাগাদ। সন্ধায় মহাবিপদ সঙ্কেত ঘোষণার পর থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের শহর-নগর ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আতঙ্কিত মানুষের চরম উৎকণ্ঠায় দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এর আগমনী প্রভাবে গতরাত পর্যন্ত সমগ্র উপকূলে থমথমে গুমোট আবহাওয়া অব্যাহত থাকে। মাঝেমধ্যে বয়ে যায় দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া। কোথাও কোথাও হয় গুঁড়ি বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলে ৪ থেকে ৬ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ইতোমধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু জায়গায় নিরাপদ স্থানে ছুটে গেছে। সর্বত্র বিরাজ করছে দুর্যোগের আতঙ্ক। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ জেলা-উপজেলা প্রশাসন জরুরী কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঘূর্ণিঝড়জনিত সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের নাম এবার ‘মোরা’। ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত ঘোষণার পর থেকেই গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সাইক্লোন শেল্টারগুলোসহ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে যান অগণিত উপকূলবাসী। দুর্যোগের মুখে লাখো রোজাদার নানামুখী কষ্ট ও দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা সম্ভাব্য দুর্যোগ থেকে পানাহ্ চান।
ঘূর্ণিঝড়ের ঘোষণায় গতকাল সোমবার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙরে জাহাজবহরে পণ্যসামগ্রী লাইটারিং, খালাস, ওঠানামা এবং আমদানি-রফতানিমুখী কন্টেইনারসহ যাবতীয় পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্দর জেটি-বার্থ ও স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তায় দেশি-বিদেশি জাহাজবহরকে বহির্নোঙর ও কুতুবদিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ছোট কার্গো জাহাজগুলো কর্ণফুলী সেতুর উজানের দিকে চলে গেছে। চরম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দেশের সকল নৌ-বন্দরের সাথে লঞ্চ-স্টিমার, ফেরি, যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আটকা পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। তাছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও কক্সবাজার বিমান বন্দর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও ৭নং বিপদ সঙ্কেত ঘোষণার প্রেক্ষিতে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমান বন্দর সংলগ্ন সকল প্রতিরক্ষা স্থাপনা থেকে মূল্যবান যান্ত্রিক সরঞ্জাম আগেই নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়।
দিনভর অস্বাভাবিক থমথমে গুমোট আবহাওয়ায় চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলের সর্বত্র জনমনে বিরাজ করছে অজানা ভীতি-আতঙ্ক। গত সন্ধ্যায় কোথাও কোথাও দমকা হাওয়ার সাথে সাময়িক গুঁড়ি বৃষ্টি যেন দুর্যোগের আগাম জানান দিচ্ছিল। সৈকতে প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ে। তবে বিগত টানা ১০ দিনের মতো ভ্যাপসা গরম গতকাল ছিল না। ফিশারি ঘাটগুলোতে শত শত মাছ শিকারি দেশীয় ট্রলার, নৌযান সমুদ্র থেকে ফিরে এসে ভিড় করে। তবে অনেক নৌযান এখনও সাগর থেকে ফিরেনি। তাদের স্বজন-পরিজনরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন গতকাল দফায় দফায় জরুরী সমন্বয় সভা করেছে। খোলা হয়েছে পৃথক কন্ট্রোল রুম। ডাক্তার, নার্সসহ জরুরী সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে মাঠে ও কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। রেডক্রিসেন্ট ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় প্রত্যন্ত উপকূলবাসীকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ অব্যাহত থাকে। চলছে মাইকং। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে হাট-বাজারে দোকান-পাট প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কার্যত অচল ও স্তব্ধ হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। পাল্টে গেছে নিত্যদিনের চালচিত্র। অনেক জায়গায় বিরাজ করছে ভূতুরে পরিবেশ। সহায়-সম্বলটুকু রেখে প্রাণ বাঁচাতে পরিজনসহ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে গিয়ে অনেকে পেছনে ফেলে আসা বাড়িঘরে চুরি-লুটপাটের ভয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
আবহাওয়া ও বন্যা বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিশেষত এটি কেটে গেলে পরবর্তী প্রভাবে বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি ঢল, ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার আংশকা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গুমোট আবহাওয়ার মধ্যে গতকাল দুপুুর থেকে চট্টগ্রামসহ উপকূলের কোথাও কোথাও সাময়িক গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে। জনমনে বেড়েই চলেছে ভয়-আতঙ্ক।
সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়ের মতিগতি
গত সন্ধ্যায় আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে জানা গেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং এর সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে একই এলাকায় (১৮.৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১.৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছিল। এটি গত সন্ধ্যা ৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিমি দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কিমি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কিমি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আজ মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম- কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল ও বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নং বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫নং বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ সহ ঘন্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগুতে থাকা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ও বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজসমূহে পণ্যসামগ্রী খালাস এবং শিপমেন্ট বা জাহাজীকরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। সকালে আবহাওয়া বিভাগের বিশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে বিপদ ও পরে মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার পর বন্দর ও বহির্নোঙরে পণ্যসামগ্রী খালাস কাজ বন্ধ করা হয়। অন্যদিকে সাগর উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলে বসবাসরতদের খুব দ্রæত নিরাপদ স্থানে এবং সাইক্লোন শেল্টারে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। রেডক্রিসেন্ট ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবীরা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজে সহায়তা করছেন। চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং চলে গত রাত অবধি।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ সৃষ্টি এবং মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার কারণে বন্দরের সতর্কতা ও প্রস্তুতিতে বিধি-বিধান অনুযায়ী যা যা করণীয় তাই করা হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা জরুরী সমন্বয় সভা করেছেন।
পোর্ট-শিপিং সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় বড় জাহাজ থেকে ছোট ছোট জাহাজে পণ্যসামগ্রী লাইটারিং পদ্ধতিতে খালাস কাজ বন্ধ রাখা হয়। আর, বন্দরের সব জেটি-বার্থে অবস্থানরত জাহাজে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে প্রধান সমুদ্র বন্দর কার্যত অচল। বন্দরের জেটি-বার্থসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য দেশি-বিদেশি বড় বড় জাহাজ, ট্যাংকারসমূহকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ছোট কার্গোজাহাজ, কোস্টারগুলোকে কর্ণফুলী সেতুর উজানে পাঠানো হয়। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ সৃষ্টি হয়ে চট্টগ্রামের দিকে এগুতে থাকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ও সংস্থাসমূহের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় সভা হয় এবং খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
এদিকে বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর প্রচন্ড উত্তাল রয়েছে। সারা দেশে গত ১৯ মে থেকে টানা ১০ দিনের তাপপ্রবাহ, ভ্যাপসা অসহনীয় গরমের পরই সাগরে সৃষ্টি হলো ঘূর্ণিঝড়। তীব্র গুমোট আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আলামত তৈরি হয়েছে মর্মে প্রথম সংবাদ প্রকাশিত হয় গত শুক্রবার ইনকিলাবে। আবহাওয়া দপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে চলতি মে মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথা জানানো হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’ গত মধ্য-এপ্রিলে মিয়ানমার অতিক্রম করে। এর আগে সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মূলত দক্ষিণ চট্টগ্রামে আঘাত হানে। স্মরণকালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াস ছোবল হানে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে সৃষ্ট ইতিহাসের বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াস এদেশে আঘাত হানে এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বরে। যা দুর্যোগের মওসুম হিসেবেই পরিচিত।
বঙ্গোপসাগরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সৃষ্ট লঘুচাপ ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, এরপর রোববার নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। এটি ঘনীভূত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে রোববার মধ্যরাতের পরই রূপান্তরিত হয় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ে। থাইল্যান্ডের দেয়া নামানুসারে এর নাম দেয়া হয় ‘মোরা’। সর্বশেষ মতিগতি অনুসারে এটি বাংলাদেশ উপকূলের দিকেই ধেয়ে আসতে থাকে গত রাত অবধি। ‘মোরা’র গতিমুখ চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দিকে। সেই সাথে উত্তর-পূর্ব ভারত ও মিয়ানমারের একাংশেও আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।
সর্বশেষ আবহাওয়া ও পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
টাঙ্গাইল, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা অব্যহত থাকতে পারে। এর বর্ধিত ৫ দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুমালা তথা বর্ষার বায়ু কক্সবাজারের টেকনাফ উপক‚ল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদীতে ৩৬.৮ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৩৫ ও ২৭.৩ ডিগ্রি সে.। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় নোয়াখালীতে ৫১ মিলিমিটার।
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ধসের সতর্কতা
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে আজ (মঙ্গলবার) ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
নিরাপদ আশ্রয়ে কক্সবাজার উপকূলের ৫ লাখ মানুষ
কক্সাবজার অফিস জানায়, ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’। ১০ নং মহাবিপদ সংকেত স্বাভাবিক মাত্রা অতিক্রম করায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে উপকূলের মানুষ। ১০ নং মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার সাথে সাথে সোমবার ইফতারের পর থেকে আশ্রয়ে জন্য ছুটছে উপকূলের হাজার হাজার মানুষ। এর আগে বিকাল থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরে যেতে বলা হলেও সরেনি কেউ। বিপদ সংকেত বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে উপকুলের প্রায় ৫লাখ নারী-পুরুষ নিরাপদ স্থানে আশ্র গ্রহণ করেছে।
স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’র আসন্ন প্রভাব থেকে বাঁচতে সোমবার সন্ধার আগেই উপকূলের সব লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশ দেয় প্রশাসন। কিন্তু এতে কেউ সরেনি। সংকেত বেড়ে যাওয়ায় সন্ধার পর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে চলছে হাজার হাজার নারী পুরুষ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, কক্সবাজারের উপকূলীয় উপকূলীয় এলাকা কুতুবদিয়ার সবকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কুতুবজোমের ঘটিভাঙ্গা, তাজিয়াকাটা, শাপলাপুরের জেমঘাট, কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া এবং টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন ও পেকুয়ার বেশ উপকূলীয় এলাকা ঝুঁকির মুখে রয়েছে বেশী।
নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে চলা মানুষগুলো আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উচু জায়গায় ঠাঁই নিচ্ছেন। শহরের সমিতিপাড়ার লোকজন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঝাউতলাসহ বিভিন্ন স্থানের হোটেলে, পাবলিক হল ভবন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়ার জন্য ছুটে চলছিল। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ বাংলাদেশের উপকূলের আরও কাছাকাছি, ৩৪৫ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। এটি আজ মঙ্গলবার সকাল নাগাদ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এজন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল।
এটি সোমবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৮০ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১৫ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল নাগাদ চট্রগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানিয়েছেন, অনিরাপদ স্থানে যেন একটা লোকও না থাকে সে ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কঠোর নির্দেশ দেয়ে হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এই ঘোষণার আলোকে স্থানীয়ভাবে প্রত্যেক উপজেলায় সন্ধা থেকে মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছিল যাতে নীচু জায়গা থেকে লোকজন সরে গিয়ে আশ্রয় কেন্দে অথবা উচুঁ কোনস্থানে আশ্রয় নেয়।
সন্ধ্যার আগে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ও উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণকে সরিয়ে আনার নির্দেশ প্রদান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা রাখা, শুকনো খাবার মজুদ ও সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, রেসক্যু টীম, ফায়ার ব্রিগেড, রেডক্রিসন্টে সদস্যদের সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আগত জনসাধারণের যানমাল ও সম্পদ রক্ষার্থে আনসার-ভিডিপি সদস্যদেরকে নিয়োজিত থাকা, সমুদ্রে যাওয়া মাঝধরা ট্রলার ফেরত আনা, জনসাধারণ সহ সকল উপজেলায় উদ্ধার কার্যক্রমে ন্যস্ত সকল সদস্যদেরকে প্রস্তুুত থাকার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে কক্সবাজার জেলা বিভিন্নস্থানে কাল সারাদিন গুঁড়ি গুঁিড় বৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রচন্ড গরমের উত্তার অব্যাহত ছিল।
মংলা বন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত : সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন
মংলা সংবাদদাতা জানায়, মংলায় গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর মংলা বন্দরের জন্য ৮নং মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে। এই পরিস্থিতিতে জরুরী মিটিং করেছে উপজেলা প্রশাসন এবং সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কারণে মংলা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। এর প্রভাবে মংলাসহ আশপাশের উপকূলীয় এলাকায় আকাশ কিছুটা ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে।
তবে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি হওয়ায় পর থেকে সম্ভাব্য দুযোর্গ মোকাবেলায় মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি কন্ট্রোম রুম খোলার পাশাপাশি বন্দরের আগত ও অবস্থানরত দেশী-বিদেশী জাহাজগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
মংলা উপজেলায় জরুরী মিটিং করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা চেয়ারম্যার আবু তাহের হাওলাদারের সভাপতিত্বে উপজেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জরুরী বৈঠক শেষে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে মাইকিং করে ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তা প্রচার করছে। এছাড়া পৌর কর্তৃপক্ষ সতর্ক সংকেত চিহ্নিত পতাকা উত্তোলনসহ পৌর এলাকায় মাইকিং প্রচারণা চালাচ্ছে।
মংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, দূযোগপূর্ন আবহাওয়া মোকাবেলার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলার সকল কর্মকর্ত- কর্মচারীদের ষ্টেশনে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি প্রতি মুহূর্তে প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
ল²ীপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় প্রস্তুতি সভা
ল²ীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলা করতে মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল ল²ীপুরে প্রস্তুতি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন জেলা প্রশাসক হোমায়রা বেগমের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, রেড ক্রিসেন্ট সদস্য ও স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ল²ীপুরের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা, দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগ কালীন ও পরবর্তী সময়ে খাদ্য সরবরাহ, মেডিকেলটিম গঠন, রেড ক্রিসেন্ট সদস্য ও ৬টি কন্ট্রোলরুম খোলাসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
উপকূল অঞ্চলে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে মাইকিং : ঝ‚ঁকিপূর্ণ বেড়ীবাঁধে ভাঙন শুরু
এ.টি.এম. রফিক ও আশরাফুল ইসলাম নূর খুলনা থেকে জানান, বঙ্গোপসাগরে নি¤œ চাপ থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা সম্পর্কে সতর্ক করতে ও উপক‚লীয় অধিবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। উপক‚লের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। মোরা ধেয়ে আসায় মংলা বন্দরকে ৮নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলা করতে গতকাল দুপুরে জরুরি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসনে। এদিকে, ঝ‚ঁকিপূর্ণ বেড়ীবাঁধ ইতিমধ্যে ভাঙতে শুরু করেছে। খুলনার কয়রা উপজেলার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে নোনাপানিতে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো: আমিন উল আহসান বলেন, খুলনার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জরুরি সভা করে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খুলনার উপক‚লের নয় উপজেলার ২৫০টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় ২৫০টি, সাতক্ষীরায় ৭৪টি ও বাগেরহাটে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জে শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সেচ্চাসেবী সংগঠন গুলোকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মানুষকে সতর্ক করতে ও নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে বলে জানান খুলনা জেলা প্রশাসক। এদিকে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: বদিউজ্জামান বলেন, ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ আটকানোর জন্য পাউবোর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।