Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইরানের নীতির কারণে তাদেরই জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে : ট্রাম্প

আমেরিকান ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পূর্ণ ভাষণ-১

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জেরুজালেম পোস্ট : বিদেশের মাটিতে প্রথম ভাষনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, সেদেশের নীতির কারণে তার নিজের জনগণই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, জঙ্গী গ্রুপ আইএস, আল-কায়েদা, হিজবুল্লাহ, হামাস যুগ যুগ ধর অলীক স্বপ্ন লালন করার জন্য দায়ী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিয়াদে তার প্রথম বিদেশ সফরের প্রথম পর্যায়ে আমেরিকান ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে যে ভখাষণ দেন তার পূর্ণ বিবরণে প্রথম অংশ আজ প্রকাশ করা হল।
ভাষণের পূর্ণ বিবরণ
আমি বাদশাহ সালমানকে তার বিশেষ বক্তব্যের জন্য এবং আজকের এই বিশাল শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করার জন্য চমৎকার এই দেশ সউদী আরবকে ধন্যবাদ জানাই। এমন একজন উদার ব্যাক্তির অভ্যর্থনা পেয়ে আমি নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করছি। আমি সবসময় এ দেশের মহিমার কথা, দেশের মনুষের দয়ার্দ্রতার কথা শুনেছি। তবে শুধু দু’একটি কথা দিয়ে এই বিশেষ দেশটির মহিমার কথা প্রকাশ করলে এর প্রতি ন্যায় বিচার করা হবে না। আমরা বাস্তবে দেখলাম, আমরা যে মূহূর্তে এ দেশের মা্িটতে পা রাখলাম সে মুহূর্ত থেকে কী অবিশ্বাস্য আতিথেয়তায় আমাদের সিক্ত করা হচ্ছে! এ দেশের জনগণকে যিনি ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, আধুনিক সউদী আরবের সেই প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আব্দুল আজিজের প্রাসাদেই আমাকে আপ্যায়ন করে সম্মানিত করেছেন। আমাদের প্রিয় নেতা প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের সঙ্গে একত্রে কাজ বাদশাহ আব্দুল আজিজ আমাদের দু’টি দেশের মধ্যে টেকসই সহযোগিতা শুরু করেন। বাদশাহ সালমান! সেই ঐতিহ্যের ধারা আপনি অব্যাহত রেখেছেন তা দেখে আপনার পিতা শান্তি পাবেন। তিনি যেমন আমাদের মধ্যকার অংশীদারিত্বের প্রথম অধ্যয়ের সূচনা করেছিলেন, আজ আমরাও একটি নতুন অধ্যায় শুরু করছি, যা আমাদের দু’টি দেশের জনগণের স্থায়ী কল্যাণ বয়ে আনবে। আমি এখন আজ এখানে উপস্থিত রাষ্ট্র প্রধানদের প্রত্যেককে আমার গভীর ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা এখানে সমবেত হয়ে আমাদেরকে ব্যাপকভাবে সম্মান্বিত করেছেন এবং আমি আমার দেশের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই উষ্ণ অভিনন্দন। আমি জানি, আপনাদের একটুখানি সময় আমাদের উভয় দেশের জনগণ এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে। বন্ধুত্ব ও আশার বাণী শোনাতে আমেরিকান জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। এ কারণে আমি আমার প্রথম বিদেশ সফরের প্রথম গন্তব্য হিসেবে মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রভূমি ইসলাম ধর্মের দু’টি পবিত্র স্থানের হেফাজতকারী দেশকে বেছে নিয়েছি। আমেরিকানদের জন্য এ এক চমৎকার সময়। আমাদের দেশে আশাবাদের এক নতুন প্রেরণা বইছে। মাত্র কয়েক মাসে আমরা কয়েক মিলিয়ন চাকুরি সৃষ্টি করেছি, ৩ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি নতুন আয় যোগ করেছি, আমেরিকার শিল্পের উপর থেকে বোঝা প্রত্যাহার করেছি এবং আমাদের সামরিক বাহিনীতে বিনিয়োগের রেকর্ড স্থাপন করেছি যা আমাদের জনগণের নিরাপত্তা বিধান করবে এবং আমাদের চমৎকার সব বন্ধু ও মিত্রদের নিরাপত্তা জোরদার করবে যাদের অনেকেই আজ এখানে উপস্থিত রয়েছেন। এখন আমি আপনাদের সাথে আরো সুন্দর একটি খবর শেয়ার করতে চাই। বাদশাহ সালমান, যুবরাজ এবং উপ যুবরাজের সাথে আমার বৈঠকের পর আমার হৃদয় বিপুল আন্তরিকতা ও শুভেচ্ছা এবং অসাধারণ সহযোগিতাবোধে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা সউদি আরবের সাথে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছি যা আমাদের দু’দেশে ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং আমেরিকা ও সউদী আরবে বহু হাজার চাকুরির সৃষ্টি করবে। এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে রয়েছে ১১০ বিলিয়ন ডলারের সউদী অর্থায়নকৃত প্রতিরক্ষা ক্রয়। আমরা আমেরিকার বৃহৎ প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর সাথে ভালো চুক্তি করার ব্যাপারে নিশ্চয়ই সাহায্য করতে পারব। এ চুক্তি নিরাপত্তা কার্যক্রমে এক বড় ভূমিকা নিতে সউদী আরবকে সাহায্য করবে। আমারা আজ এখানে উপস্থিত অনেক দেশের সাথে অংশীদারিত্ব শক্তিশালী এবং মধ্যপ্রাচ্য ব্যাপী ও তার বাইরে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা উন্নয়নে নতুন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছি।আজ দিনের পরের অংশে উগ্রপন্থী মতবাদ মোকাবেলায় একটি নতুন বিশ^ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা আবার ইতিহাস রচনা করব যার অবস্থান হবে এখানে, ইসলামী বিশে^র এই কেন্দ্রীয় অংশে। এই যুগান্তকারী নতুন কেন্দ্র এক সুস্পষ্ট ঘোষণার প্রতিনিধিত¦ করে যে মুসলিম প্রধান দেশগুলোকে উগ্রপন্থা মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিতে হবে। আমি বাদশাহ সালমানের কাছে তার শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রদর্শনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। আজ এখানে উপস্থিত কয়েকজন নেতাকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানাতে পেরে আমি আনন্দিত এবং আমি আপনাদের সবার সাথে কাজ করতে চাই। আমেরিকা একটি সার্বভৌম দেশ এবং আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। আমরা এখানে বক্তৃতা দিতে আসিনি , আমরা এখানে অন্যদের বলতে আসিনি যে কীভাবে বাঁচতে হবে, কী করতে হবে , কে কী করবে অথবা কীভাবে প্রার্থনা করতে হবে। বরং আমরা এখানে এসেছি অংশীদারিত্বের প্রস্তাব নিয়ে, আমাদের সকলের জন্য এক উন্নত ভবিষ্যতের সন্ধানে অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে। এই শীর্ষ বৈঠকে আমরা আমাদের অভিন্ন স্বার্থ সংক্রান্ত বহু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। কিন্তু সর্বোপরি আমাদের একটি লক্ষ্যে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে যা অন্য সকল বিবেচনাকে ছাড়িয়ে যায়। এ লক্ষ্য হচ্ছে ইতিহাসের সে বিরাট পরীক্ষাÑউগ্রবাদের উপর জয়ী হওয়া এবং সন্ত্রাসী শক্তিকে নির্মূল করা। তরুণ মুসলিম ছেলেমেয়েদের ভীতি মুক্ত, সহিংসতা থেকে নিরাপদ এবং ঘৃণামুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে দিতে হবে। মুসলিম পুরুষ ও নারীদের তাদের নিজেদের ও তাদের জনগণের জন্য একটি নতুন অধ্যায় রচনা করার সুযোগ দিতে হবে। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়, এই শীর্ষ বৈঠক তাদের জন্য বিলুপ্তির শুরু করবে যারা সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে ও তার অশুভ শক্তিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। একই সাথে আমরা প্রার্থনা করি যে এই বিশেষ সমাবেশ কোনো এক দিন মধ্যপ্রাচ্যে, এমনকি বিশ^ব্যাপী শান্তির সূচনা হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু এ ভবিষ্যত শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ ও তাদের প্রচারিত মতবাদকে পরাজিত করার মাধ্যমেই শুধু অর্জিত হতে পারে। খুব কম দেশই সহিংসতা থেকে রেহাই পেয়েছে। আমেরিকা বারবার বর্বর হামলার শিকার হয়েছেÑ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে বোস্টন বোমা হামলা, সান বার্নাদিনো ও ওরল্যান্ডোর বর্বর হামলার কথা উল্লেখ করা যায়। ইউরোপীয় দেশগুলোও অবর্ণনীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। একই বর্বরতার শিকার হয়েছে আফ্রিকার দেশগুলো এবং  এমনকি দক্ষিণ আমেরিকাও। ভারত, চীন, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াও সন্ত্রাস কবলিত হয়েছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় নিরীহ আরব, মুসলিম ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছে। ধর্মান্ধদের হত্যাকান্ড ও ধ্বংসের শিকার হয়েছে তারা। কোনো কোনো হিসেবে বলা হয়েছে যে সন্ত্রাসের শিকার ৯৫ শতাংশেরও বেশী মানুষ হচ্ছে মুসলমান। আমরা এখন এ অঞ্চলে যে মানবিক ও নিরাপত্তা বিপর্যয়ের সম্মুখীন তা বিশ^জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ এক মহা বিপর্যয়। কোনো বর্ণনার মাধ্যমে এ দুর্দশা ও বঞ্চনার রূপকে পূর্ণভাবে বোঝানো সম্ভব নয়। ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল কায়েদা, হেজবুল্লাহ, হামাস, এবং অন্যদের ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ অবশ্যই শুধু তাদের নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করলে হবে না। বিলুপ্ত স্বপ্নের প্রজন্মগুলো দিয়ে তার হিসাব করতে হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্পন্দনশীল সংস্কৃতি এবং অপরিমেয় ঐতিহাসিক সম্পদে মধ্যপ্রাচ্য সমৃদ্ধ। এ অঞ্চল ক্রমবর্ধমানভাবে বাণিজ্য ও সুযোগ-সুবিধার বিরাট বিশ^কেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে। এ অঞ্চল এমন হওয়া উচিত নয় যেখান থেকে লোকজন পালিয়ে যাবে না, বরং এটা হওয়া উচিত নতুনদের সমাবেশ স্থল। সউদী আরব হচ্ছে বিশে^ এক মহান ধর্মের পবিত্রতম স্থান। প্রতি বছর হজে অংশ নিতে বিশে^র নানা স্থান থেকে লাখ লাখ মুসলমান এখানে আসেন। প্রাচীন কীর্তির পাশাপাশি এ দেশ স্থাপত্যকর্মে বিপুল সাফল্যসহ আধুনিকতার ধারক। হাজার হাজার বছর আগে থেকেই বিশে^র অন্য কোনো অংশের চেয়ে মিসর ছিল সমৃদ্ধশালী শিক্ষা ও সাধন কেন্দ্র। গিজা, লুক্সর ও আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাচীন কীর্তিগুলো তাদের গৌরব। (চলবে) 



 

Show all comments
  • কাসেম ৩০ মে, ২০১৭, ২:৪৬ এএম says : 0
    ইরানকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • md babul kazi ৩০ মে, ২০১৭, ৪:১৬ পিএম says : 0
    USA is one of the most ......... country of the world.but few Muslim countries do not understand this.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ