পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : বিশাল পদ্মা প্রায় পানিশূন্য। কোনরকমে চুইয়ে আসছে পানি। কোথাও ঢেউ নেই। আছড়ে পড়ছে বুকফাটা আর্তনাদ। পরিণত হয়েছে শীর্ণ খালে। পানি নেই, আছে ধু ধু বালুচর। পদ্মার চেহারা দেখলে যে কারো প্রাণ কেঁদে উঠবে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর উপর দাঁড়ালে পদ্মার মৃতপ্রায় রূপ দেখা যাবে। পদ্মার যৌবন হারিয়ে গেছে বেশ আগেই। তবুও কোনরকমে অস্তিত্ব টিকে ছিল। কিন্তু ভারতের পানি আগ্রাসনে দিনে দিনে করুণ হচ্ছে অবস্থা। পদ্মাপাড়ের বৃদ্ধ তসলিম উদ্দীন জানালেন, ‘পদ্মার তুমুল গর্জন দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আর মরা পদ্মার দৃশ্যও দেখছি। মাত্র ৪০ বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে সবকিছু। সেই পদ্মা আর পদ্মা নেই। কি যে কষ্ট হয়, তা বলে বুঝাতে পারবো না। ভারত ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে কি যে সর্বনাশ করেছে তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি’।
ঢাকা থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু পার হয়ে যশোর ফেরার পথে কিছুক্ষণ পদ্মারপাড়ে দাঁড়ালাম। কথা বললাম স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। তাদের প্রায় প্রত্যেকের কথা‘ পদ্মার খোঁজ নিয়ে আর কি হবে। পদ্মা তো মরে যাচ্ছে। পদ্মার কান্না কারো কানে পৌছাচ্ছে না। আর কখনো আগেকার মতো কেউ পদ্মার ঢেউ দেখতে পাবো কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ পদ্মা শুকিয়ে গেছে। বুক জুড়ে শুরু হয়েছে হাহাকার। পদ্মা এখন রীতিমতো হাউ মাউ করে কাঁদছে। পদ্মার জীবন যৌবন হারিয়ে গেছে। বুক জুড়ে বালু আর বালু। পায়ে হেঁটে পদ্মা পার হওয়ার কথা কেউ কোনদিন কল্পনাও করেনি। বাস্তবে সেটিই হয়েছে। পদ্মার চিরচেনা চেহারা দ্রæত বদলে গেল, চোখের সামনেই ধুকে ধুকে মৃতপথযাত্রী হল, এখন অপেক্ষার পালা, পদ্মার মৃত ঘোষণা করতে আর কতদিন বাকি। ভারত আর্ন্তজাতিক আইন লংঘন করে পানি প্রত্যাহারের ফলে পদ্মার এই হাল হয়েছে। শুধু আইন লংঘন নয়, দু’দেশের পানি চুক্তিও লংঘন করেছে। পদ্মার বুকে চাষাবাধ চলছে। চলছে বালুর ব্যবসা। যা চোখে না দেখলে সহজে কারো বিশ্বাস হবে না। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে যে দৃশ্য দেখা গেছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর দু’দিকে যতদুর চোখ যায় শুধুু বালু আর বালু। মাঝখান দিয়ে সরু খাল ও নালার মতো কোনরকমে চুইয়ে পানি প্রবাহ হচ্ছে। প্রায় পানিশূন্য অবস্থায় বালুচরের ওপর কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি। শুধু পদ্মা নয়, পদ্মার সব ক’টি শাখা নদ-নদীর অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। এমনকি অনেক নদীর অস্তিত্ব মুছে গেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের নদীদেহের অন্যতম হৃদপিন্ড পদ্মা। এখন সেই পদ্মাই স্পন্দনহীন। পদ্মার উপর নির্ভরশীল গড়াইসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর ২৫টি শাখা নদী শুকিয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার ২২ হাজার ৭শ’৩৭ বর্গকিলোমিটার এলাকার কৃষি, শিল্প, বনজ, মৎস্য সম্পদ, পরিবেশ রক্ষা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য পদ্মা ও গড়াইয়ের শাখা নদ-নদীর ওপর নির্ভরশীল। ফারাক্কা বাঁধের পর স্রোতহীন ও শুকানোর কারণে নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। সূত্র আরো জানায়, পদ্মা থেকে গড়াই নদীতে পানি গড়াচ্ছে একেবারে চুইয়ে। পদ্মার ন্যায্য হিস্যার পরিমাপ করা হয় হার্ডিঞ্জ পয়েন্টে। সেখানে পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মোট ১৫টি স্প্যানের মধ্যে ১২টিই এখন পানিশূন্য। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশের লালন শাহ সেতুর নীচেও একই অবস্থা। পদ্মার শাখা-প্রশাখা মাথাভাঙ্গা, গড়াই, ইছামতি, ভৈরব, আপার ভৈরব, কুমার, মধুমতি, ফটকি, বেতাই, চিত্রা, কপোতাক্ষ, শিবনা, নবগঙ্গা ও কোদলাসহ এ অঞ্চলের প্রায় সব নদ নদীর উৎসমুখ গড়াইয়ে পানি গড়িয়ে আসছে না পদ্মা থেকে। বঙ্গোপসাগরে পানি যাচ্ছে না। সুন্দরবন হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মংলা, নদীবন্দর নওয়াপাড়া হুমকির মুখে। জানা যায়, ১৯১৫ সালে যখন বিশাল পদ্মায় ভেড়ামারা-পাকশীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মিত হয়েছিল, তখন গর্জনী স্রোত ছিল। দুই কুল জুড়ে পানি ছিল টয়টম্বুর। ফারাক্কা বাঁেধর কারণে পদ্মা আজ মৃত। অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো প্রশ্ন ছুঁড়ে বসবে বিশাল ব্রিজ তৈরীর প্রয়োজনীয়তা কি ছিল। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর উপর একদন্ড দাঁড়িয়ে পদ্মার করুণ চেহারা দেখে অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। নিন্দা জানান, ভারতের পানি আগ্রাসনের।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পদ্মার উপর ভেড়ামারা-পাকশীতে ১৮৮৯ সালের প্রস্তাবনায় ১৯০৭ সালে শুরু হওয়া হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাজ শেষ হয় ১৯১৫ সালে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি নির্মানের আগে পদ্মা নদীর পূর্ব তীর সাড়াঘাট ছিল দশর অন্যতম বহৎ নদী বদর। সই সময় দশী-বিদশী বড় বড় স্টীমার, লঞ্চ, বার্জ ও মহাজনী নকা ভিড়তা সাঁড়াঘাট বদরর ১৬টি স্পট। বিদশী পর্যটকর ভিড় ছিল। বাণিজ্য হত রমরমা। পরবর্তীত অবশ্য যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনর বিরাট সুবিধা কর দয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। তখনকার পদ্মা আর এখনকার পদ্মার মধ্য রয়ছ বিশাল ব্যবধান। তখন ব্রিজর উপর দিয় পারাপারর সময় পদ্মার ঢউএ বুক কঁপ ওঠতা সবার। আজ সটি অনকর কাছ শুধুই স্মতি। যশোর, খুলনা, নড়াইল, মাগুরা, সাতক্ষীরা, নাভারল, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নওয়াপাড়া, ঝিনাইদহ, ভাটই, গাড়াগঞ্জ, শেখপাড়া, কালীগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মীরপুর ও ভেড়ামারার পথে চলাচলের সময় সড়কের দুইদিকে দৃষ্টি প্রসারিত করলে পরিস্কার চিত্র পাওয়া যাবে পদ্মার কারণে নদ-নদী ও জিকের ক্যানেলগুলোর কি করুণ অবস্থা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।