পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গ্রীস্মের খরতাপে পুড়ছে সারাদেশ। অসহনীয় গরমে মানুষের হাসফাঁস অবস্থা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। দিন দিন তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তাপমাত্রা চল্লিশ ছুঁই ছুঁই করছে। এ তাপদাহ আরও কয়েক দিন থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষ। বিশেষ করে সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে দারুণ দুর্বিপাকে। তারা না পারছে কর্মসম্পাদন করতে, না পারছে তাপদাহ সহ্য করতে। অনেকে ঘর থেকেও বের হতে চাচ্ছে না। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলা। আবার ঘরে থেকেও গরম থেকে রেহাই নেই। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল শহরে লোডশেডিংয়ের কোনো হিসাব নাই। দিনে প্রায় ১০ ঘন্টা লোডশেডিং চলে। রাজধানী জুড়েও চলছে তীব্র লোডশেডিং। কখন বিদ্যুৎ আসে, কখন যায়, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। বিদ্যুৎ সংকটের পাশাপাশি পানি সংকটও দেখা দিয়েছে। পানি সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। বিদ্যুতের অভাবে শিল্পকারখানার উৎপাদন মারাত্মকভবে ব্যাহত হচ্ছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে অর্থনীতিতে।
তীব্র দাবদাহের সাথে রোগবালাই দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়া, হাম, জ্বর, পানিশূন্যতা, হিটস্ট্রোকসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে গরমে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা বিভিন্ন রোগবালাইতে আক্রান্ত হচ্ছে। গরম থেকে বাঁচার জন্য বেশি করে বিশুদ্ধ পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ এবং রোদ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। রোদ হোক, ঝড়-বৃষ্টি হোক- যারা খেটে খাওয়া মানুষ জীবন চালাতে তাদের বের না হয়ে উপায় থাকে না। প্রকৃতির বিরূপ এই আচরণ থেকে রক্ষা পাওয়ারও কোনো উপায় নেই। তবে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় যেসব মানুষ রয়েছে, তাদের বিদ্যুত পাওয়ার অধিকার রয়েছে। দুঃখের বিষয়, গরম বাড়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ তাদের কাছে যেন সোনার হরিণ হয়ে উঠেছে। বিদ্যুতের লাইন থাকলেও প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। অথচ সরকারের তরফ থেকে আমরা প্রায় সময়ই বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ডের কথা শুনি। দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে আলোক উৎসব করতেও আমরা দেখেছি। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষও গর্ব করে বলে দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। এ কথার যে কোনো ভিত্তি নেই, বিদ্যুতের অভাবে দেশের মানুষ এখন তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলকে বঞ্চিত করে শুধু রাজধানীকে আলোকোজ্জ্বল রাখার জন্য যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, তাতেও এখন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সরকারের মধ্যে এ প্রবণতা বিদ্যমান, রাজধানী ঠিক থাকলে বা লোডশেডিং না থাকলে বোঝানো যাবে, দেশ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ন। এ ধরনের শুভংকরের ফাঁকি যে গরম ফাঁস করে দিয়েছে, তা এখন রাজধানীবাসী ভালভাবেই টের পাচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যেখানে খোদ বিদ্যুৎ সরবরাহকারি কর্তৃপক্ষ দেখায় লোডশেডিং নেই, সেখানে বিদ্যুৎপ্রতিমন্ত্রীই বিদ্যুৎ সংকটের কথা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, বিদ্যুতের এই সংকট কাটতে চার-পাঁচ দিন লাগবে। তিনি এ কথাও বলেছেন, রোজায়ও লোডশেডিং হবে। তাহলে বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের যে গর্ব, তা কি জনগণের সাথে এক ধরনের তামাশা নয়? দেশে যে বিদ্যুতের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, তা তীব্র লোডশেডিং থেকেই বোঝা যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের রেকর্ড উৎপাদন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কথা সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত পীড়াদায়ক হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশে যদি বিদ্যুৎ উৎপাদনের এতো রেকর্ডই হয়ে থাকে, তবে মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না কেন? বলা বাহুল্য, তীব্র গরম না পড়লে হয়তো শুভংকরের এই ফাঁকিটি জনগণ উপলব্ধি করতে পারত না। এখন তারা বুঝতে পারছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে সরকার এক ধরনের রঙ্গিন ফানুস তাদের সামনে উড়িয়েছে।
প্রকৃতির উপর মানুষের হাত নেই। বিশেষ করে গরমের মতো বিরূপ আবহাওয়া মোকাবেলা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। গরম ঘরে-বাইরে সব জায়গায়ই আঘাত করে। তবে গরম থেকে রেহাই বা স্বস্তি পাওয়ার জন্য মানুষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। গরমে দুর্বল বা অসুস্থ্য হয়ে পড়া থেকে রক্ষা পেতে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি, শরবত, ডাবের পানি, স্যালাইন পান করা আবশ্যক। বাসি খাবার বর্জন করতে হবে। যতটা সম্ভব প্রখর রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। পরিবেশ শীতল রাখার জন্য বছরব্যাপী প্রচুর পরিমাণে সবুজ গাছপালা রোপন কর্মসূচি হাতে নেয়া উচিত। সরকারের উচিত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতাধীন এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। লোডশেডিং করতে হলে তা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। ১০-১২ ঘন্টা লোডশেডিং করার অর্থ বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ব্যর্থতার চিত্র ফুটে উঠা। এতে বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের বড় বড় কথা বলার বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ না পাওয়ার চেয়েও অসহনীয় হয়ে উঠে। আমরা আশা করব, রোজাকে সামনে রেখে রোজাদারদের স্বস্তি দেয়ার জন্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।