Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্পের ব্যতিক্রমী ভাষণ এবং-

| প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে গত রোববার ৫৫টির মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে তার যে ব্যবধান তৈরি হয়েছিল, তা ঘুচে যেতে পারে বলে  পর্যবেক্ষকদের অনেকে ধারণা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ও পরে তার যে পরিচিতি গড়ে ওঠে, সউদী আরব এসে সেই পরিচিত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি সম্পূর্ণ নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। একদা সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে টাম্প বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, ইসলাম আমাদের ঘৃণা করে।’ আর ‘উগ্রপন্থি ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’ শব্দবন্ধ উচ্চারণ না করায় ওবামাকে বারবার তিনি সমালোচনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। বলা যায়, তিনি নিজেকে একজন, ইসলাম বৈরি ও মুসলিম বিদ্বেষী ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার সেই অবস্থান থেকে তিনি পুরোপুরি সরে এসেছেন কিনা, এখনো বলার সময় আসেনি। তবে সেদিনের ভাষণে তিনি মোটেই সেদিকে যাননি। শুধুমাত্র ‘ইসলামী জঙ্গিবাদ’, ‘ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’ কথাগুলো ব্যবহার করেছেন। ট্রাম্পের এই পরিবর্তনে সবচেয়ে ভূমিকা ও অবদান রয়েছে সউদী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও ক্রাউনপ্রিন্সের। তাদের সদিচ্ছা, যোগাযোগ, ইতিবাচক কূটনৈতিক তৎপরতা ট্রাম্পের সউদী আরব সফরে আসা এবং বিশ্বমুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের সামনে ভাষণ দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তার যে পরিবর্তিত রূপ বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করলো, সেটাও সম্ভব হয়েছে একই কারণে। অবশ্য ট্রাম্পের সউদী আরব সফরের পেছনে আর্থবাণিজ্যিক স্বার্থ বা লক্ষ্যও ছিল, যা ষোল আনার বেশী অর্জিত হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে ৩৫ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি। হোয়াইট হাউসের ভাষায়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক অস্ত্রচুক্তি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ভাষণে উগ্রবাদ নির্মূলের ডাক দিয়েছেন। উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মুসলিম দেশগুলোকে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ করেছেন, সন্ত্রাসবাদের যারা শিকার তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই মুসলিম। তিনি ইসলাম ধর্মকে বিশ্বের মহৎ ধর্ম হিসাবে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাকিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একজন সন্ত্রাসী যখন একজন নিরপরাধ লোককে হত্যা করে এবং সৃষ্টিকর্তার নাম নেয় তখন ধর্ম বিশ্বাসী সব মানুষকে অবমাননা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেনা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, ইসলামের নামে যারা সন্ত্রাসবাদে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে তার দেশ লড়াই করছে। তার ভাষায়, এ যুদ্ধ ভালো-মন্দের মধ্যে, শুভ, অশুভর মধ্যে যুদ্ধ। এ যুদ্ধ বিভিন্ন বিশ্বাস, বিভিন্ন সম্প্রদায় কিংবা বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে নয়, এ যুদ্ধ বর্বর অপরাধীদের বিরুদ্ধে যারা সকল ধর্মের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা দিয়ে যাবে, এই আশ্বাস দেয়ার পাশাপাশি তিনি সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো মানুষকে উৎসাহিত করতে যে পন্থা ব্যবহার করছে তার বিরুদ্ধে কাজ করার এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বলা বাহুল্য, ট্রাম্পের এসব কথা খুবই ইতিবাচক যদিও সকলেরই জানা, বিশ্বে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রেই ভূমিকাই মুখ্য। মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোতে ক্ষমতার পরিবর্তন, তাদের খন্ডিত, সংঘাতময় ও হীনবল করার জন্য সামরিক আগ্রাসন থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যা যুক্তরাষ্ট্র করেনি। এক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য হলো, ইসরাইলকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখা এবং সম্পদ লুণ্ঠনসহ অস্ত্র ব্যবসা চাঙ্গা রাখা। আজকে ইরাক-লিবিয়াসহ মধ্যপাচ্যে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি ও মানবিক বিপর্যয় তার বড় দায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। সর্প হয়ে দংশন ও ওঝা হয়ে ঝড়ার নীতি যে অনুসরণ করছে। সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সহযোগিতা এই হতে পারে, যদি অবিলম্বে সে তার অনুসৃত নীতি পরিত্যাগ করে। যুক্তরাষ্ট্র কি তাতে রাজি আছে?
মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের উত্থান ও ঝুঁকি রহিত করতে মুসলিম দেশগুলোকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপে নিতে হবে। শিয়া-সুন্নীর যে বিরোধ, সেটাও কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ সা¤্রাজ্যবাদীদের সৃষ্টি। ইরানকে এজন্য এককভাবে দায়ী করা যাবে না। অন্যদের দায়, বাইরের উসকানি ইত্যাদিও খতিয়ে দেখতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যকে কোনোভাবেই ভারসাম্যহীন করা ঠিক হবে না। যেখানে রাজনৈতিকভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, ওহাবি ইজম বা সালাফি ইজম উগ্রবাদে উৎসাহ জোগায়। সউদী আরবকে এই ওহাবি ইজম বা সালাফি ইজম থেকে সরে আসতে হবে। নিখাঁদ ইসলামী ভাবধারা অনুযায়ী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এব্যাপারে মুসলিম দেশগুলোকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। কমন রাজনীতি, পারষ্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ব্যাপক কর্মসংস্থান, নাগরিক নিরাপত্তা ইত্যাদি যদি নিশ্চিত করা যায়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ আপনা আপনিও বিদায় হয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন