পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অবৈধ দখল-দূষণ এবং পানিবদ্ধতার কারণে বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ক্রমেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এক সময়ের চট্টগ্রাম মহানগরী এখন প্রাকৃতিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। ১২০ বর্গমাইল আয়তনের শহরটির ভেতর ছিল অপূর্ব ঝরণা, ছরা, বন, উপত্যকা, পাহাড়, টিলা, হ্রদ, প্রবাহমাণ খাল। এসবের সমন্বয়ে চট্টগ্রাম মহানগরী হয়ে উঠে দেশের সৌন্দর্যতিলক। অপরূপ ভূমি গঠন ও সৌন্দর্যের কারণে একে প্রাচ্যের রাণীও বলা হয়। প্রাচ্যের এই রাণীর এখন বেহাল দশা। চট্টগ্রামের খাল ছরা এর শিরা-উপশিরা হলেও এগুলোর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। এগুলোর অধিকাংশ দখল-দূষণে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ১৯৬৯ সালে করা প্রথম ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান করার সময় ৩৪টি খালের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত নির্ণয় করা হয়। এ বছর নতুন ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান করার সময় অস্তিত্ব পাওয়া গেছে ২২টির। ১২টি খালই উধাও হয়ে গেছে। বলা বাহুল্য, হারিয়ে যাওয়া খালগুলো অবৈধ দখলের শিকার হয়েছে। বিদ্যমান ২২টি খালও দখলের কবলে রয়েছে। বাড়িঘর, দোকানপাট, গুদাম, আড়তসহ অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলে দখল করা হয়েছে। নগরীর প্রধান খাল চাক্তাই-এর সাথে যুক্ত ১০-১২টি উপখাল ও ছরা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। নগর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব খাল, উপখাল, ছরা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টিতেই ব্যাপক পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরী পরিণত হচ্ছে বিশাল ভাগাড়ে। তারা তাকিদ দিয়ে বলেছেন, অবিলম্বে এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পানিবদ্ধতা নিরসন করা জরুরি।
দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্পাদনে চট্টগ্রামের গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। দেশের আমদানি-রপ্তানির শতকরা ৮০ ভাগ এ বন্দরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। অর্থনীতির পাইপ লাইন বা প্রাণশক্তি হিসেবে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। বাণিজ্যিক এই রাজধানী যখন অবৈধ দখল এবং দূষণে ধুঁকতে থাকে, তখন অর্থনীতির গতিও কমে যেতে বাধ্য। বছরের পর বছর ধরে বিদ্যমান এবং ক্রমবর্ধনশীল অরাজকতার কারণে বাণিজ্যিক রাজধানী অচল হয়ে যাবে, এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। কিছু লোকের অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে এ নগরী বেহাল বা অচলাবস্থার দিকে ধাবিত হবে, তা বরদাশত করা যায় না। বলার অপেক্ষা রাখে না, চট্টগ্রাম নগরী ভৌগলিক ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বলা হয়, এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে হিসেবে বিবেচিত। এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দৃষ্টিও এ নগর এবং এর বন্দরের দিকে নিবদ্ধ। এর থেকে সুবিধা নেয়ার জন্য তারা উন্মুখ হয়ে থাকে। ভারত, চীন, নেপালসহ অন্যান্য দেশ বন্দর সুবিধা নেয়ার জন্য অনেকটা প্রতিযোগিতায় শামিল হয়েছে। এমনকি পূর্বমুখী অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য পাশ্চাত্যের দেশগুলোও এ বন্দরের সুবিধা নিতে আগ্রহী। ব্যবসা-বাণিজ্যের এই বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, তা যথাযথভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে না। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও নগর ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো টনক নড়েছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে না। অথচ এক বন্দরকে কেন্দ্র করে পুরো চট্টগ্রাম শহরকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা অসম্ভব কিছু নয়। চট্টগ্রাম নগর শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নয়, বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিগণিত হতে পারে। এর যে অপরূপ সৌন্দর্য ও ভৌগলিক গঠন প্রকৃতি, তা যথাযথ সংরক্ষণ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে এটি আন্তর্জাতিকভাবে পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের হাব-এ পরিণত হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন, পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং দখল-দূষণের মতো অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ করা।
অপরূপ প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম নগরীকে দখল-দূষণে পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত করার মতো অপকর্ম চলতে দেয়া যায় না। এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খাল, প্র¯্রবণ, ছরা ইত্যাদির স্বাভাবিক প্রবাহ বহমান রাখার পাশাপাশি দখলদারিত্ব বন্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর বিকল্প নেই। দখলদারিত্বের সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাহাড়, বন কেটে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও সৌন্দর্য বিনষ্ট করা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগরীসহ টেকনাফ পর্যন্ত উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে একে আন্তর্জাতিক মানের শহরে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরিহার্য। আমরা মনে করি, চট্টগ্রাম নগরীর নানা অব্যবস্থাপনা ও অসঙ্গতি দূর করতে পারলে একে সিঙ্গাপুরের মতো করে গড়ে তোলা সম্ভব। তবে এটা নির্ভর করছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার উপর। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দ্ব্যর্থহীন নির্দেশনা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়ক হতে পারে। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক জোন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম মহানগরীসহ এর আশপাশের অঞ্চলকে যদি অর্থনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু বিবেচনা করে কার্যক্রম শুরু করা হয়, তবে দেশে বিনিয়োগ যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতিও ত্বরান্বিত হবে। এক্ষেত্রে আমারা প্রধানমন্ত্রীর আশু দৃষ্টি কামনা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।