Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আপেল খেলে কোলেষ্টেরল কমে

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আপেল খারাপ কোলেষ্টেরলের পরিমাণ কমায়। আপেলে থাকা দ্রবণীয় খাদ্যআঁশে পেকটিন থাকে। সে পেকটিন লিভারে পৌঁছে এলডিএল তথা খারাপ কোলেষ্টরলের ঊৎপাদন কমিয়ে দেয়। হজমতন্ত্রে এ কোলেষ্টেরলকে ঢুকতে না দিয়ে শরীর থেকে বিদায় করে ছাড়ে। দিনে একটা করে বড় আপেল খেলে সিরাম কোলেষ্টেরলের লেভেল আট থেকে এগারো শতাংশ হারে কমে। দুটো করে খেলে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে। আর্কাইভস অফ ইনটারনাল মেডিসিন-এ জানানো হয়েছে, উচ্চমাত্রায় ফাইবার তথা খাদ্যআঁশ রয়েছে যেসব খাবারে, সেসব খাবার, যেমন আপেল খেলে হার্টের রোগ ভোগান্তির আশঙ্কা কমে। খোসা সহ প্রমাণ সাইজের একটি আপেলে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার মেলে তিন গ্রামেরও বেশি। খোসা ছাড়া আপেলে দু’ধরনের খাদ্যআঁশ মেলে ২.৭ গ্রাম। এ দু’ধরনের খাদ্যআঁশ খারাপ চর্বির আস্তরণ জমে ধমনি প্রাচীরকে পুরু হতে দেয় না। ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা কমে। আপেল তাই র্হাটের রোগভোগান্তি হওয়াও রুখে দিতে পারে। আপেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। খোসাসহ আপেলে থাকা পেকটিন যেটা করে, সিসা এবং পারদের মতো বিষবর্জ্যকে মলের সঙ্গে শরীর থেকে বিদায় করে দিতে পারে। মলকে ঘনবদ্ব করার জন্য আন্ত্রিকের রোগীকে আপেল খেতে দেওয়া হয়। আপেলের মধ্যে মলাশয়ে ক্যানসার রোধ করার মতো ক্ষমতা রয়েছে। অন্ত্রের রোগভোগ আটকানোর ক্ষমতাও আছে। স্মৃতিশক্তি তাজা রাখে আপেল। ফিনল্যান্ডের গবেষকরা বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের উপর আপেলের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা প্রদায়ী গুণ পরীক্ষা করে জেনেছেন, নিয়মিত আপেল যাঁরা খান, তাঁদের হার্টের রোগভোগ হওয়ার আশঙ্কা এক রকম থাকে না। আপেলের পাশাপাশি প্রতিদিন যাঁরা দুই টেবিল চামচ পরিমাণ পেঁয়াজের ক্কাথ খান বা পেঁয়াজ এবং চার বড় কাপ গ্রিন টি খেয়ে যেতে পারেন তাঁদের হার্টের রোগভোগ হওয়ার আশঙ্কা ৩২ শতাংশ হারে কমে যায়। আপেলের খোসায় এবং পেঁয়াজে থাকে কুয়ারাসিটিন নামে একটি ফ্ল্যাভোনয়েড গোত্রের যৌগ, যা ভিটামিন সি-র সঙ্গে মিলে শরীরের প্রতিরোধী শক্তিকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে। 

শরীরে রোগ সৃষ্টিকারী মৌলিক অক্সিজেন অণুগুলির ধ্বংসাত্মক তৎপরতা রোখে আপেলে থাকা কুয়ারসিটিন এবং ভিটামিন সি। ইউনিভাসির্টি অফ গøাসগো-র গবেষকরা জানিয়েছেন, আঙুরে, মুসুন্বিতে যেমন প্রচুর পরিফেনল যৌগ পাওয়া যায়, তেমনি মেলে আপেলেও। আপেলের রস অর্থাৎ আপেল জুসেও। আপেল শরীরে বøাড সুগারের স্থিতাবস্থা বজায় রাখে। খোসাসহ আপেল খেলে এ উপকারটা বেশি পাওয়া যায়। নিয়মিত আপেল খেলে কিডনিতে পাথর হয় না। ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্্িরশনে এ মর্মে গবেষণা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে অনেক আগেই। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে আপেলে থাকা পটাসিয়াম। জার্নাল অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে জানানো হয়েছে, জীবজন্তুদের উপর পরীক্ষায় দেখা গেছে, স্তন ক্যানসার হওয়া আটকায় আপেল। খেতে হবে নিয়মিত, অন্তত একটা করে। প্রতিদিন একটু বেশি আপেল খোসাসহ খাওয়া গেলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা অনেকটাই বেশি মেলে। ১০০ গ্রাম খোসাসহ আপেলের ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল তথা মৌলিক অক্সিজেন অণুগুলির বিরুদ্বে যুদ্ধ করার ক্ষমতা ১৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি-র সমতুল্য।
কোলেষ্টেরলের জারণজনিত ক্ষতি হওয়া আটকাতে পারে আপেল। তবে জুসের চেয়ে খোসাসহ আস্ত আপেল বেশি উপকারী। এদকম হালফিলের গবেষণা জানাচ্ছে, আপেল থাকা পেকটিন এবং ফেনলের যৌথ তৎপরতায় টাইগিøসারাইড এবং খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে। আপেল লিভার ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও কমায়। আপেলে ভিটামিন কে থাকে। এছাড়াও থাকে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, কপার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড। আপেলে কোলেষ্টেরল নেই। সোডিয়ামও থাকে না। এবারে দেখা যাক একটা ১৩৮ গ্রাম ওজনের আপেল খেলে কী পাওয়া যায়। প্রথমে আশা যাক ক্যালোরির কথায়। ১৩৮ গ্রাম ওজনের একটা আপেল খেলে ৮১.৪২ ক্যালোরি শক্তি মেলে। কার্বোহাইড্রেট মেলে ২১.০৪ গ্রাম। প্রোটিন ০.২৬ গ্রাম। খ্যাদ্যআঁশ ৩.৭৩ গ্রাম। দ্রবণীয় আঁশ ১৪.২ গ্রাম। অদ্রবণীয় আঁশ ২.৩০ গ্রাম মোট ফ্যাট ০.৫০ গ্রাম। জলীয় ভাগ ১১৫.৮২ গ্রাম। আপেলে কোলেষ্টেরল থাকে না। অ্যাশ থাকে ০.৩৬ গ্রাম। ভিটামিন এ থাকে ৭৩১৪ ইউনিট। বিটা ক্যারোটিন থাকে ২৮.১৫ মিলিগ্রাম । থিয়ামিন তথা ভিটামিন বি ওয়ান থাকে ০.০২ মিলিগ্রাম। রাইবোফ্ল্যাভিন তথা ভিটামিন বি টু ০.২ মিলিগ্রাম। নিয়াসিন তথা ভিটামিন বি থ্রি ০.১১ মিলিগ্রাম। নিয়াসিন সমতুল ভিটামিন থাকে আরও ০.১৫ মিলিগ্রাম। ভিটামিন বি সিক্স ০.০৭ মিলিগ্রাম। বায়োটিন ১.৭৩ মাইক্রোগ্রাম। ভিটামিন সি ৭.৮৭ মিলিগ্রাম। ভিটামিন ই আলফা সমতুল ০.৪৪ মিলিগ্রাম। াভটামিন ০.৯৯ মিলিগ্রাম। ফোলেট ৩.৮৬ মাইত্রে“াগ্রাম। ভিটামিন কে ৩.০ মাইত্রে“াগ্রাম। প্যান্টোথেমিক অ্যাসিড ০.০৮ মিলিগ্রাম। খনিজ পর্দাথের মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে ৯.৬৬ মিলিগ্রাম। কপার ০.০৬ মিলিগ্রাম। আয়রন ০.২৫ মিলিগ্রাম। ম্যাগনেসিয়াম ৬.৯০ মিলিগ্রাম। ম্যাঙ্গানিজ ০.০৬ মিলিগ্রাম। ফসফরাস ৯.৬৬ মিলিগ্রাম। পটাসিয়াম ১৮.৫ মিলিগ্রাম। সেলেনিয়াম ০.৪১ মাইক্রোগ্রাম । আপেলে সোডিয়াম থাকে না। জিংক থাকে ০.০৬ মিলিগ্রাম। ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যথাক্রমে ০.০২ গ্রাম এবং ০.১২ গ্রাম। আপেলে যে সব অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে সে গুলো অ্যালানিন, অ্যার্জিনিন, অ্যাসপারটেট, গøুটামেট, গøাইসিন, আইসোলিউসিন, লিউসিন, লাইসি জন, ফেনাই লাল্যানিন, প্রোলিন, সেরিন, থ্রিওনিন, টাইবোসিন, ভ্যালিন। এছাড়াও থাকে সুগার, অ্যালকোহল, ০৭৯ গ্রাম। সরবিটল ০.৭৭ গ্রাম। জাইলিটল ০.০১ গ্রাম। ম্যালিক অ্যাসিড ৭৮২.৪৪ মিলিগ্রাম সাইট্রিক অ্যাসিড ২১.৬৭ মিলিগ্রাম।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন