Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত মেয়েদের জন্য আতঙ্কের

| প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি বেসরকারি সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার পরিবারগুলো তাদের সন্তানদেরকে পাচারের কবল থেকে বাঁচাতে অনেকেই বাল্যবিবাহের পথ বেছে নিচ্ছেন। ‘জাস্টিস এন্ড কেয়ার’ নামের সংস্থাটি বলছে, শিশু-কিশোরীরা পাচার হতে পারে এই আশঙ্কা করলেও তারা পুলিশ অথবা সীমান্তরক্ষীদের না জানিয়ে ভয়ে চুপ করে থাকেন। পশ্চিমঙ্গের সীমান্ত এলাকার আটটি গ্রামে সংস্থাটির চালানো এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার এ সমীক্ষাটি প্রকাশ করা হয়।
ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আটটি গ্রামের প্রায় তিনশ’ কিশোরী এবং প্রায় দেড়শ’ মায়ের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষকরা জানাচ্ছেন, মূলত প্রলোভন দেখিয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে শিশু-কিশোরী পাচার হচ্ছে।
‘জাস্টিস এন্ড কেয়ার’ সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক সায়ন্তনী দত্ত বলছিলেন, ‘আমাদের সমীক্ষার একটা উদ্দেশ্য ছিল এটা জানা যে, সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ পাচারের ব্যাপারে কতটা জানেন। আমরা দেখেছি তারা সবকিছুই জানেন। কিন্তু তা সত্তে¡ও চুপ করে থাকতে বাধ্য হন। পুলিশ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পাচারের ব্যাপারে জানাতে চান না ভয়ে। পাচারকারী বা তাদের দালালরা ওই এলাকাতেই ঘোরে আর তারা ভীষণ ক্ষমতাবান। তাদের যদি শাস্তি না হয়, তখন যিনি খবর দিয়েছেন, তাকেও বিপদের মুখে পড়তে হবে। এই আশঙ্কাতেই চুপ করে থাকেন সবাই’।
এছাড়াও সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সীমান্ত অঞ্চলটি মেয়েদের কাছে, বিশেষত কিশোরীদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা ছাড়াও অপহরণ করে বা মাদক খাইয়েও মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা।
অনেক মেয়েই সমীক্ষকদের জানিয়েছে যে, তারা স্কুলে বা প্রাইভেট টিউশনি পড়তে যেতেও ভয় পায়। ‘সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অনেক বাবা-মা তাদের মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন যাতে তারা বিপদে না পড়ে, অর্থাৎ পাচারকারীদের খপ্পরে না পড়ে,’ বলছিলেন মিস দত্ত।
আবার বাংলাদেশ থেকে যাদের পাচার করে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষকরা দেখেছেন যে, পাচার হবার বিষয়টি তারা বুঝতেই পারেনি।
সায়ন্তনী দত্তর কথায়, ‘তারা হয়তো ভেবেছে বাংলাদেশেরই কোনও জায়গায় কাজের জন্য বা বিয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাতের বেলা যে তাদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা পরের দিন সকালে তারা টের পেয়েছে। কিন্তু এদেশে কার কাছে সাহায্য চাইবে, সেটা তারা জানে না’।
সমীক্ষক দল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের কাছে সুপারিশ করেছে যে, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে শিশু পাচারের বিষয়ে। যেভাবে সীমান্ত এতদিন পাহারা দিয়ে এসেছে, সে পদ্ধতি বদল করতে হবে। সীমান্ত চৌকিগুলিকে পাচারের শিকার হওয়া শিশু-কিশোরীদের কাছে আরও মিত্রভাবাপন্ন করে তুলতে হবে। বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের সঙ্গেও যৌথভাবে পাচার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিএসএফ’র দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল পি এস আর আঞ্জানিয়েলু বলছিলেন, ‘কারা পাচারের শিকার হয়ে আসছে, আর কারা অনুপ্রবেশ করছে - এই পার্থক্য করাটা বিএসএফ সদস্যদের কাছে খুবই কঠিন। পাচারের বিষয়ে কিছুটা জানা থাকলেও অনেক সময় আমাদের ভুল হচ্ছে, কারণ আমাদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ নেই এ বিষয়ে। সবেমাত্র এই বিষয়টা জানতে বুঝতে শুরু করেছি আমরা’।
সীমান্তরক্ষীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে যাতে পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে অনেক বেশী সংবেদনশীল করানো যায় বাহিনীকে।
প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সীমান্ত প্রহরীদের নিয়মিত দেখা-সাক্ষাত এবং মত বিনিময় করানো হচ্ছে সীমান্তে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাস্টিস এন্ড কেয়ারকে দিয়ে এই সমীক্ষাটি বিএসএফই করিয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলের মানুষদের একটা বড় অংশের মধ্যে বিএসএফের প্রতি যে একটা বিরূপ মনোভাব রয়েছে, শিশুপাচার রোধ নিয়ে কাজ করলে সেই মনোভাবও কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করছে বিএসএফ।
বাংলাদেশ সীমান্তের মতো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্তের গ্রামবাসীদের বিএসএফের প্রতি বিরূপ মনোভাব কাটিয়ে ওঠার উপায় নিয়ে গবেষণা করতে দিল্লিতে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ