Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকিস্তানের অর্থনীতিকে চীনের জন্য উন্মুক্ত করবে সিপিইসি

নিশ্চিত করা হয়েছে পাকিস্তানে চীনা কোম্পানির প্রবেশগম্যতা

প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ১৮ মে, ২০১৭

ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিস্তানের অর্থনীতি ও সমাজকে চীনের জন্য অনেকটাই উন্মুক্ত করবে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি)। শিল্প, পরিবহন ও পরিষেবা অবকাঠামো গড়ার অতিকায় উদ্যোগ হিসেবে সিপিইসিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এ উদ্যোগে প্রকৃত অর্থে কৃষিতেই সবচেয়ে জোরারোপ করা হবে। সিপিইসির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সিপিইসি মহাপরিকল্পনায় চীনা কোম্পানিগুলোর কাছে পাকিস্তানের হাজার হাজার একর কৃষিজমি ইজারার কথা বলা হয়েছে। চীনা কোম্পানিগুলো এসব জমিতে বীজ প্রজাতি থেকে শুরু করে সেচ প্রযুক্তি পর্যন্ত নানা বিষয়ে নমুনা প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করবে। সিপিইসির আওতায় পেশাওয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত পাকিস্তানের শহরগুলোয় নজরদারির পূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এজন্য সড়ক ও বিপণিকেন্দ্রগুলোয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ২৪ ঘণ্টা ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া পাকিস্তানে একটি জাতীয় ফাইবারঅপটিক ব্যাকবোন নির্মাণ করা হবে। এ ফাইবারঅপটিক অবকাঠামো কেবল ইন্টারনেট ট্রাফিকে সহায়তা করবে না, বরং টেরেস্ট্রিয়াল স¤প্রচারকেও এগিয়ে নেবে, যাতে চীনা প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে চীনা সংস্কৃতি উপস্থাপন করা যায়। চীনের নেতৃত্বে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবিওআর) উদ্যোগের অংশীদার প্রকল্পগুলোয় অর্থায়নে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখছে চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। ওবিওআর উদ্যোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত অংশ সিপিইসি। ওবিওআর উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও পরামর্শের লক্ষ্যে চীনের বেইজিংয়ে দুই দিনব্যাপী বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম (বিআরএফ) শেষ হয়েছে। বিশ্বের কমপক্ষে ২৮টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও বিআরএফে অংশ নিয়েছেন। বেইজিং সফরকালে তার এজেন্ডার অগ্রভাগে ছিল সিপিইসির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা (লং টার্ম প্ল্যান-এলটিপি) চূড়ান্ত করা। পাকিস্তান বিষয়ে দুই বছরের সমীক্ষা শেষে চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সিপিইসির এলটিপি প্রণয়ন করে। এতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সিপিইসির বিস্তারিত মহাপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। বেইজিংয়ে চূড়ান্ত আলোচনা উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এলটিপি দলিলটি প্রকাশ করা হয়েছে। এলটিপিতে পাকিস্তানের অর্থনীতির বেশির ভাগ খাতে চীনা কোম্পানিগুলোর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানি সমাজেও চীনা সংস্কৃতির প্রবেশ নিশ্চিত করবে এ মহাপকিল্পনা। এলটিপিতে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি পাকিস্তানের বস্ত্র, তৈরি পোশাক, নির্মাণসামগ্রী, সার ও কৃষি প্রযুক্তি বাজারে নতুন প্রতিযোগীর প্রবেশের জন্য অনুকূল অবকাঠামো ও নীতিসহায়তার কথা বলা হয়েছে। এজন্য শিল্পপার্ক ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গড়তে হবে। দলিল অনুযায়ী এসব শিল্পপার্ক ও এসইজেডে অবশ্যই নির্দিষ্ট অবস্থা, পানি সরবরাহ, যথাযথ অবকাঠামো, পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ ও বিদ্যুত্ সক্ষমতা থাকতে হবে। কৃষি খাতের পুরো সরবরাহ চেইনে অংশীদারিত্বের কথা এলটিপিতে বলা হয়েছে। বীজ, সার, ঋণ, কীটনাশক বিতরণ থেকে শুরু করে চীনা কোম্পানিগুলো পাকিস্তানে নিজস্ব খামার পরিচালনা এবং ফল, সবজি ও শষ্য প্রক্রিয়াকরণ করবে। চীনা লজিস্টিক কোম্পানিগুলো কৃষিপণ্য গুদামজাত ও পরিবহন করবে। চীনের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে অবাধ পুঁজি ও ঋণের সুবিধা নিতে কোম্পানিগুলোকে উত্সাহিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের কৃষিতে অংশগ্রহণের ১০টি উল্লেখযোগ্য খাত শনাক্ত করার পাশাপাশি এলটিপিতে ১৭টি নির্দিষ্ট প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বার্ষিক আট লাখ টন সক্ষমতার এনপিকে সার কারখানা, বার্ষিক দুই লাখ টন সক্ষমতার মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, বার্ষিক এক লাখ টন সক্ষমতার দুটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা ও ৬ হাজার ৫০০ একরের বেশি জায়গাজুড়ে উচ্চফলনশীল বীজের একাধিক নমুনা প্রকল্প। এছাড়া ত্রিস্তরবিশিষ্ট গুদাম ও সংরক্ষণকেন্দ্রের পাশাপাশি আসাদাবাদ, ইসলামাবাদ, লাহোর ও গোয়াদারে ২০ হাজার টন সবজি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, ১০ হাজার টন ফ্রুট জুস ও জ্যাম উত্পাদন কারখানা এবং ১০ লাখ টন শস্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার উল্লেখ রয়েছে। পাকিস্তানে এসব প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের কাশগড় প্রশাসনিক অঞ্চলকে সমর্থন জোগানোর কথা বলা হলেও ডন জানিয়েছে, ৪০ লাখ অধিবাসী অধ্যুষিত ও ৫০ শতাংশ দারিদ্র্যপীড়িত কাশগড়ের বাজার পাকিস্তানের জন্য খুব লাভজনক কিছু হবে না। উত্পন্ন কৃষিপণ্য বিপণন সম্পর্কে এলটিপিতে প্রাথমিকভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারে নির্ভরতার কথা বলা হয়েছে। কাজেই পাকিস্তানের বাজারেই এসব পণ্য বাজারজাত করতে হবে।  দ্য ডন।



 

Show all comments
  • সজিব ১৮ মে, ২০১৭, ১২:০২ পিএম says : 0
    বাংলাদেশেরও উচিত চীনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ