Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিএসপিতে পিছু হটেছে বাংলাদেশ

টিকফা বৈঠক আজ

| প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : জিএসপি ফেরত পেতে সুবিধা হওয়ার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা চুক্তিতে গেলেও সেই মূল দাবি থেকে সরে গেছে বাংলাদেশ। আজকের অনুষ্ঠিতব্য টিকফার তৃতীয় বৈঠকে জিএসপির বিষয়ে কোন আলোচনায় যাবে না বাংলাদেশ। গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মুঠোফোনে ইনকিলাবকে বলেন, ‘এবারের টিকফা বৈঠকে জিএসপি ইস্যুতে কোন আলোচনায় যাবে না বাংলাদেশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশ সহজীকরণ বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির- টিকফা’র তৃতীয় বৈঠক আজ বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি মার্ক লিনসকট।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হকসহ ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করবেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সি এস. বার্ণিকাটসহ ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ সভায় অংশ নেবেন।
টিকফার তৃতীয় বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল গত ১৩ ডিসেম্বর। তার আগে গত ৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে নতুন তারিখের প্রশ্ন ওঠে। গত ২৭ নভেম্বর সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এক বৈঠক করে আগের তারিখটি বাতিল করেন। পরে এই বৈঠকের জন্য ১৭ মে সময় নির্ধারণ করা হয়।
টিকফার আগে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিফা) নামে ২০০৩ সাল থেকেই বাংলাদেশকে একটি চুক্তি সইয়ের তাগিদ দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। পরে চুক্তির কিছু বিষয় পরিবর্তন করে টিফা থেকে করা হয় টিকফা। শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই মাস পর ১৭ জুন মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয় টিকফার খসড়া। এর ঠিক ১০ দিন পর ২৭ জুন বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং পরের মাসেই কারখানা পরিবেশের উন্নয়নসহ বেঁধে দেয় ১৬ দফা শর্ত।
এরপর টিকফা সইয়ের তাগিদ দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছিল, “টিকফা সই হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য স্বার্থসম্পর্কিত বিষয়ে বাংলাদেশের আলোচনার জায়গা তৈরি হবে এবং সুযোগ তৈরি হবে স্থগিত জিএসপি ফিরে পাওয়ারও।’
শেষ পর্যন্ত টিকফা সই হয় ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। চুক্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য খোলামেলা ও দৃষ্টিগ্রাহ্য ভালো পরিবেশ তৈরি করা হবে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথে প্রতিবন্ধকতা ও রক্ষণশীল উপাদানগুলো কমিয়ে আনা হবে। চুক্তি বাস্তবায়নে গঠিত হয় একটি ফোরাম যেটির বছরে কমপক্ষে একবার বৈঠক করার কথা।
সেই অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় বসে ফোরামের প্রথম বৈঠক। আর দ্বিতীয় বৈঠক হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে। দুই বৈঠকেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং স্থগিত জিএসপি ফেরত চাওয়া হয়। এসব বৈঠকে এই দুই ইস্যুতে কোন অগ্রগতি হয়নি। আর এইবারের বৈঠকে এসে এই বিষয়ে কোন দাবিই জানাচ্ছে না বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তি দিচ্ছে, জিএসপি আর পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের বিষয়ে আলোচনার জন্য টিকফা কোন প্লাটফরম নয়। শুল্কের বিষয়টি দেখে কংগ্রেস আর জিএসপি’র আলোচনার জায়গা ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক সংস্থা)।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ একক রপ্তানি বাজার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ হতে যুক্তরাষ্ট্রে ৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে, একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।
আজকে সভায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য ও সেবার প্রবেশাধীকার সহজীকরণ, বাংলাদেশি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ, প্রযুক্তি বিনিময়, ডিজিটাল ইকোনমি, বাংলাদেশের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা হ্রাসকরণ, ওষুধ আমদানি প্রক্রিয়া স্পষ্টিকরণ, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও এনার্জি সেক্টরে বিনিয়োগ, চুক্তি বলবৎকরণ, সরকারি ক্রয় পদ্ধতি ও লেবার ইস্যু বিষয় আলোচনা হতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত নভেম্বরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘জিএসপি স্থগিত করা হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং জিএসপি না পেলে টিকফা অর্থহীন হবে।’




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিএসপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ