Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের বৈরি পানিনীতির অসহায় শিকার বাংলাদেশ

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ শামসুদ্দিন : বৃহত্তর সিলেট ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার হাওরাঞ্চল ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা বিষাক্ত পানিতে ভেসে গেছে। হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে। মরে গেছে হাওরের মাছ, কৃষকের হাঁস, ছাগল, গরু সহ বিভিন্ন প্রাণী। এমনকি মরে গেছে বিষধর সাপ, ব্যাঙ ও জলজপ্রাণীগুলো। কৃষকের মাথায় হাত। মেঘালয়ে অবস্থিত ভারতের পরমাণু স্থাপনার বিষাক্ত বৈজ্য মিশে পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। এমন আশংকার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল উৎস কৃষি। এদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কৃষিনির্ভর আয় বাড়ানোর অবারিত সুযোগ রয়েছে। আমাদের কৃষি উৎপাদন কাঙ্খিত মাত্রায় বাড়াতে পারলে বাংলাদেশ অবশ্যই সুখী ও সমৃদ্ধশালী একটি দেশ হিসেবে বিশ্বমানে পৌঁছাতে  পারবে। কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই। একারনে কৃষি ও কৃষকের প্রয়োজনে সম্পৃক্ত সকল বিষয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচ্য। কৃষিউপকরণের সহজলভ্যতা, যেমন পানি, বীজ, সার, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি
কৃষিক্ষেত্রে দেশের বর্তমান বাস্তবতা ভবিষ্যতের অশনিসংকেত প্রকাশ করছে। প্রথমেই দেশের সার্বিক পানি সংকট জীবনযাপন সহ কৃষি ও সকল উৎপাদনের উপর চরম বৈরী প্রভাব ফেলছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া দেশের প্রধান নদ নদীগুলোর পানির প্রবাহ অত্যন্ত ক্ষীণ। উজানের পানির যথাযথ প্রবাহ ও প্রাপ্যন্যায্য হিস্যায় ভারত বাংলাদেশকে বঞ্চিত করছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যায়। কৃষি উৎপাদনে সহজ ও প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ পানি পাওয়া যায় না। অনেক খরচে বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানীকৃত ডিজেল ও বিদ্যুৎ পুড়িয়ে কৃষক মাটির নীচের পানি কৃষি উৎপাদনে ব্যবহার করে যাচ্ছে। কৃষি উৎপাদনে খরচের পরিমান ও আনুপাতিক খরচ বাড়ছে প্রতিবছর। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৃষকের ক্ষতির মাত্রা বছরের পর বছর। ফলে কৃষি নির্ভর জনগণ দিন-দিন চরম দারিদ্রসীমার নীচে নেমে আসছে এবং বাড়ছে কৃষিক্ষেত্রে ক্রমহ্রাসমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
দেশজুড়ে যে জালের ন্যায় বিস্তৃত নদী প্রবাহ ছিল বেশীর ভাগ মরে নালা এবং খালে পরিনত হচ্ছে। অধিকাংশ নদী, খাল-বিলের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে অনেক আগেই। এক সময়ের নদী-নালা-খাল-বিলের বাংলাদেশ এখন কেবল ইতিহাস মাত্র। এ বাস্তবতায় কৃষির জন্য ভূগর্ভস্থ পানির উৎসই একমাত্র উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বৃষ্টি-মৌসুম বাদে বছরের যে ৮-৯ মাস খাল-বিল ও নালার পানির উপর নির্ভর করা যেত, নদীর বেহালদশায় তা এখন কথার কথা মাত্র। ফলে সারাদেশে গভীর নলকুপ ব্যবহার করে মাটির নীচের পানিতে কৃষি সেচের যোগান দেয়া হচ্ছে। মাটির নীচের পানির মাত্রাহীন উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির¯তর নীচে নেমে বিপজ্জনক পর্যায়ে এসেছে। দেশের বিস্তীর্ণ বনভূমি দ্রæতগতিতে বিরান হয়ে কী ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের জন্য আপেক্ষমান তা সবার কাছেই খুব শিগ্রই পরিস্কার হয়ে যাবে। শুষ্ক মৌসুমে মৃতপ্রায় নদীগুলোর পানিশূন্যতা এবং কৃষি সেচের জন্য অবিরাম ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে দেশের উল্লেখযোগ্য বিস্তীর্ণ এলাকা মরুপ্রায়, এই মরুকরণের থাবায় বিদীর্ণ সারাদেশ। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। ভূমিকম্প, সুনামী, ঝড়-ঝঞ্জাসহ ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখী বাংলাদেশ। এখানেই শেষ নয়, ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের সৃষ্ট এই শূন্যতা সমুদ্রের নোনা জলে পূরণ হতে থাকলে দেশের অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে বললেও অত্যুক্তি হবেনা। এ’সবই ভারতের পানি প্রত্যাহারে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানির ন্যায্য হিস্যার প্রতি ভারতের বিধ্বংসী মনোভাব আর উদাসীনতার দায় নয় কী?
১৯৭২ সালের ১৭ই মার্চ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ২৫ বছর মেয়াদী যে মৈত্রিচুক্তি সম্পাদিত হয় তার ৬ ধারায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী অববাহিকা উন্নয়ন এবং জলবিদ্যুৎ ও সেচ সম্পর্কিত ব্যাপারে যৌথ সমীক্ষা ও কার্যক্রম গ্রহণ করার অঙ্গীকার করা হয়। এই চুক্তিকে অবজ্ঞা করে ১৯৭৫ সালের ১৮ই এপ্রিল এডহক চুক্তিতে ২১শে এপ্রিল থেকে ৩১ মে এই ৪১ দিনে ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ থেকে সম্মতি আদায়ে বাধ্য করে। তৎপরবর্তী ১৯৭৫-১৯৭৬ সালে এ চুক্তিও লংঘন করলে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সরকারের প্রতারণার যে স্বরূপ উৎঘাটিত হয়েছে তা আজও চলমান। ১৯৭২ সালের মৈত্রি ও তৎপরবর্তী এডহক উভয় চুক্তি সাংঘর্ষিক, ভারতীয় স্বার্থ রক্ষা ও বাংলাদেশের স্বার্থ বিকানোর অপকৌশল। তদুপরি এ চুক্তিও লংঘনের মাধ্যমে পানিলুটের ঘটনা আধিপত্যবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।
নদী ও পানির অভাবে আমাদের ফসলচক্র ভেঙ্গে গেছে, কৃষক হারিয়েছে প্রাকৃতিক জৈবসারের উৎস। আবাদি কৃষি জমি হারিয়েছে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্য উর্বরতা। কৃষি জমির কর্ষনযোগ্য জলীয় উর্বর স্তর বেশী নেই। প্রাকৃতিক সারের উৎস নেই বলে রাসায়নিক সারের উপর আমাদের কৃষি ব্যপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এতে জমির উপরিভাগ ক্রমগত জলীয়তা হারিয়ে শক্ত হয়ে যাচ্ছে, দিন-দিন উর্বরতা হারিয়ে উৎপাদন মাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। তাই জমির জলীয়তা চাষের উপযোগী ও কর্ষনযোগ্য রাখতে জমিতে পানির প্রয়োজনও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। চাষাবাদের জন্য পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে বিরামহীন এবং বছরজুড়ে। এই অবস্থায় পানির প্রয়োজনীয়তা ক্রমবর্ধমান। এদিকে মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত আরেক বাস্তবতা ক্রমবর্দ্ধমান জনগোষ্ঠীর আবাসনে জমি ব্যবহারের ফলে দিন দিন কমছে কৃষি ও আবাদী জমি। ক্রমবর্দ্ধমান এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটানোর একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সীমিত জমিতে অধিক ফসল ফলানো। তাই বিশাল জনগোষ্ঠির চাহিদা মেটাতে কৃষক একই জমিতে রাসায়নিক সারের যথেচ্ছা প্রয়োগে বছরে একাধিকবার চাষ করছে একই অথবা সমগোত্রীয় ফসলের।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অহংকার ছিল পাট, এই সোনালী আঁশের চাষ থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগ পর্যস্ত পানি শুন্যতায় সৃষ্ট বেহাল দশা পাটের উৎপাদন ও বাজারের বিরাজমান বর্তমান বাস্তবতা চরম হতাশাব্যঞ্জক। পাটের উৎপাদন ব্যহত হয়েছে পানির অভাবে। পাট চাষীদের অবস্থা খুবই খারাপ। যারা আগ্রহ নিয়ে জমিতে পাট চাষ করেছেন তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় তাদের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। গাছ উৎপাদন ও পাট পচানোর ক্ষেত্রে পানির অভাবে দারুণ সমস্যায় পড়েছে আমাদের পাট চাষীগণ। বিরূপ আবহাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় খালে ও ডোবায় পাট পচানোর প্রয়োজনীয় পানি পায়নি পাট চাষীগণ। এতে পাটের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া পাটের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত। ২০১০ সালে পাটের দাম মন প্রতি ৩ হাজার টাকা ছিলো। ২০১১ সালে ২ হাজার থেকে ২৫০০ হাজার টাকা ছিলো। যে পাটের মন প্রতি ২০১২ সালে মূল্য ছিল ২ হাজার ২শ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা ২০১৩ সালে তা ১ হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায় নেমে এসেছে যে পাট ২০১৪ সালে ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা ছিলো ২০১৫ সালে তার দাম মাত্র ৮০০ টাকা। ২০১৬ সালের কোন গ্রহণযোগ্য স্বীকৃত মূল্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি।
আমাদের ৫৭টি অভিন্ন নদীর মধ্যে ৫৪টি নদীর পানি লুট হচ্ছে। লুট করছে উজানের দেশ ভারত। ফেনী নদীর পানি লুটের বর্ণনা দেওয়ার ব্যাকরণ আমার জানা নেই। নদীগুলোকে আমাদের শরীরের শিরা ধ্বমনীর সাথে তুলনা করা যায়। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আমাদের কৃষি নির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠেছে এ সকল নদীর পানির প্রবাহের উপর নির্ভর করে। মাটির সকল উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য মাটিতে আদ্রতার মাত্রা প্রযোজ্য অনুপাতে থাকতে হয়। সে আদ্রতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ বছরব্যাপী অব্যাহত রাখতে হয়। তাছাড়া ব্রি (ইজজও) এবং ইরি (ওজজও) জাতের ধান চাষের জন্য জমিতে পানি ধরে রাখতে হয়। পানিকে কৃষির প্রাণ বললে অত্যুক্তি হবে না। ব্যাপক জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমদানী নির্ভর অর্থনীতিকে যদি স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হয় অবশ্যই আমাদের কৃষি জমিতে প্রয়োজনীয় সেঁচের পানির জন্য সরকারকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কৃষির প্রাণ সঞ্চারী পানির যোগানে সরকারের ব্যর্থতা চরম আত্মঘাতী । এতে কৃষকের পানির চাহিদা পূরণে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর প্রায় শতভাগ নির্ভর করতে হচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলণে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানীকৃত পেট্রোলিয়াম ও চরম বিদ্যুৎ ঘাটতির মধ্যে বিদ্যুতের অতিরিক্ত খরচ দেশের বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী ব্যবস্থার উপর একটি বাড়তি চাপ। ক্রমাগত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলণের ফলে পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। সুপেয় পানির জন্য চারিদিকে হাহাকার। বিজ্ঞানিরা আশংকা করছেন খুব নিকট ভবিষ্যতে সাগরের লবণাক্ত পানি ভূ-গর্ভস্থ পানির শূন্যস্থান পূরণ করবে। সর্বনাশা সেদিন ঘনিয়ে আসছে। সুপেয় পানির দুষ্প্রাপ্যতার সে ভয়ানক চিত্র হবে কল্পনাতীত। প্রাণের অস্তিত্বের প্রতি হবে তা সংঘাতময়। কৃষি উৎপাদন তথা খাদ্য উৎপাদন হবে অসম্ভব। কৃষক-চাষী ও কৃষির সাথে সম্পৃক্ত এদেশের শতকরা আশিভাগের অধিক জনগণ এক চরম সংকট পূর্বাভাস পাচ্ছি। পানি উত্তোলণ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ব্যবহৃত পানি খুব দ্রæত মাটি চুষে নিয়ে পুনঃপুনঃ উত্তোলণ ও ব্যবহারের প্রয়োজন হয় বিধায় খরচ অনেক বেড়ে যায়। আমাদের দেশের কৃষিজ পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে কৃষককে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। তা উৎপাদিত পণ্যের দামের সাথে যোগ করলে পণ্যের বাজারজাত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কৃষি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানিরা নিরলস পরিশ্রম করে উৎপাদন বৃদ্ধি করে। জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাদের পরিশ্রমের ফসল আমরা অনেকাংশে পাচ্ছি। বিআরআরআই ধানের বিভিন্নজাত, পাটের জেনোনেম, শস্য বহুমুখীকরণের ফলে কৃষি বিজ্ঞানীগণের মধ্যে অনেকেই জাতির জন্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। মৃত্তিকা বিজ্ঞানীগণ গভীর মনোনিবেশ করে ও গবেষণা করে যাচ্ছেন  কিন্তু পানির অপর্যাপ্ততা তাদের অর্জনগুলোকে সফলতার মুখ দেখতে দিচ্ছে না। জীবনের ঝ্ুঁকি নিয়ে মানবেতর অবস্থায় বিদেশে যাঁরা শ্রম দাসত্ব করে তাঁদের অর্জিত রেমিট্যান্সের সাথে আমার কৃষি জমির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে কৃষকের ঘরে ঘরে আনন্দের জোয়ার বইবে।
ভারতে বিপিএল ও এপিএল এই দুই ধরণের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছে। এ সকল রেশন কার্ডধারীদের মধ্যে যারা কাজ পায়না তাদের ক্সদনিক শ্রম ক্রয় করে নদীর উজান থেকে খালে ও খালের সাথে নালা কেটে জমিতে পানি সেঁচে নদীর পানি শোষণের ব্যবস্থা করছে। তাতে শুষ্ক মৌসুমে আমাদের দেশের নদীগুলো যে পানি পেত, সে পানি নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের নদীগুলোর পানি প্রবাহ চরমভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তা’ছাড়া বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলাদের কর্মসৃজনের জন্য একই পদ্ধতিতে উজানে নদীর পানি খালে ও খালের পানি নালাকেটে জমিতে নিয়ে যাওয়ার কর্মসূচী দিয়েছে ভারত সরকার। বর্তমানে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নামে গৃহীত বিশাল পরিকল্পনায় গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা থেকে পানি প্রত্যাহার করে ভারতের রাজস্থান, দাক্ষিণাত্যসহ সমগ্র ভারতে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। এ প্রকল্প আমাদের জন্য ধ্বংসাত্মক। ফারাক্কা-গজলডোবা বাঁধের নগদক্ষতি ও সুদূরপ্রসারী ক্ষতির জন্য এদেশে কৃষি নির্ভর অর্থনীতি চরম মূল্য দিচ্ছে। আর টিপাইমুখ বাঁধ হলে কল্পনাতীত ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষি নির্ভর অর্থনীতি। বিপর্যস্ত হবে পরিবেশ, চরম বাধাগ্রস্থ হবে অর্থনীতি। খাদ্য উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হবে, খাদ্য-দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে এসে দেশে দূর্ভিক্ষ আনবে। কৃষকের দারিদ্রতার ক্রমঅবনতিশীলতা স্থায়ী হবে।
দেশের কৃষি ও অর্থনীতি বাঁচাতে, মরুকরণ ঠেকাতে ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় রাজনৈতিক, কুটনৈতিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এক্ষুনি সোচ্চার হওয়া দরকার। এইসাথে কৃষির জন্য রক্ষা কবচ হিসেবে বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখতে নদী খনন, খাল খনন ও ভারতের অনুরূপ কৃষি জমির সন্নিকটে নালার মাধ্যমে, পুকুর কেটে পানি টেনে এনে ধরে রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, কৃষি ও কৃষকদের দরিদ্র এবং অবহেলিত রেখে সমৃদ্ধ অর্থনীতি আর সুখী বাংলাদেশ গড়ার চিন্তা কেবল দিবা স¦প্নের মত।
সার্বিক আলোচনায় একটি বিযয় স্পষ্ট যে নদী ও নদী ব্যবস্থার সুষ্ঠুও ন্যয্যবন্টন বাংলদেশের কৃষি ও কৃষকের বেঁচে থাকার অনিবার্য দাবী যা ভারতের আগ্রাসী আচরন ও আধিপত্যবাদে লুন্ঠিত। বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার প্রয়োজনে এ আগ্রাসী আচরন ও আধিপত্যবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশকে যে কোন উপায়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এটা সম্ভব,বাংলাদেশের রাজনৈতিক তৎপরতা ও বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বপূর্ন সফল কুটনৈতিক কার্যক্রম এবং বাংলাদেশ-ভারতের পানির বন্টনে নদীগুলোর দু’দেশের পানি প্রবাহের ন্যায্য পাওনা আদায়ে বিশ^ ফোরাম যেমনÑ জাতিসংঘ ও আর্স্তজাতিক আদালতের সহায়তায় অধিকার অর্জন করার এবং বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখতে নদী খনন, খাল খনন ও ভারতের অনুরূপ কৃষি জমির সন্নিকটে নালার মাধ্যমে, পুকুর কেটে পানি ধরার পদক্ষেপ গ্রহন করার মধ্যে।
লেখক: আহŸায়ক, নাগরিক পরিষদ



 

Show all comments
  • MD. Akhtar Hossain ২০ মার্চ, ২০২০, ৩:২৪ এএম says : 0
    পিতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা জাতীয় মুক্তি ও গনতন্ত্র অর্জনের লড়াই এগিয়ে নিতে হবে এবং বৈদেশিক আগ্রাসন ও সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ,বাংলাদেশের নদী ,পানি ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আন্দোলন এবং সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা জাতীয় আন্দোলন আরো এবং আরো বেশী জোড়দার করতে হবে ।বৈদেশিক আগ্রাসন ও সম্প্রসারণবাদ পরাজিত হোক।বাংলাদেশ জিন্দাবাদ :মোঃ আখতার হোসেন -প্রেসিডিয়াম সদস্য: ভাসানী অনুসারী পরিষদ , সাবেক প্রেসিডেন্ট- বাঙলা ছাত্র ইউনিয়ন জাতীয় কার্যকরী সংসদ ১৯৭৯ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন গেরিলা ইউনিট-কমান্ডার এবং ভাইস-প্রেসিডেনট: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল-জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন