ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
ইশতিয়াক আহমেদ : মাদক নেশা সর্বনাশা। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক বিষের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টা এমন যে, মানুষ জেনে বুঝে নিজ হাতে বিষ খাচ্ছে। মাদক আমাদের সমাজের শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সচেতন-অসচেতন, ধনী-গরিব, নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে গ্রাস করছে। যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী সবাইকে এক ভয়াবহ ধ্বংস ও বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করছে।
মাদক কি : মাদকদ্রব্য হলো একটি ভেষজদ্রব্য যা ব্যবহারে বা প্রয়োগে মানবদেহে মস্তিস্কজাত সংজ্ঞাবহ সংবেদন হ্রাসপায় এবং বেদনাবোধ কমায় বা বন্ধ করে। মাদক দ্রব্যের বেদনানাশক ক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকে তন্দ্রাচ্ছন্নতা, আনন্দোচ্ছ¡াস, মেজাজ পরিবর্তন, মানসিক আচ্ছন্নতা, শ্বাস প্রশ্বাস অবনমন, রক্তচাপ হ্রাস, বমনেচ্ছা ও বমি, কোষ্টবদ্ধতা ও মূত্ররাস। মাদক দ্রব্যকে সহজভাবে বলা যায় যা গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়ে এবং যে দ্রব্য আসক্তি সৃষ্টি করে, তাই মাদকদ্রব্য।
পবিত্র কুরআনে ‘মদ’ বা ‘মাদক’ প্রসঙ্গে আরবি ‘খামর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার বাংলা প্রতিশব্দ মাদক; মদ; মাদকতা; নেশাগ্রস্ততা ইত্যাদি। মাদক শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল: an intoxicant consisting of opium, used for smoking। আর ‘খামর’ বা মদ এর ইংরেজি প্রতিশব্দWine, port; liquor, alcoholic beverage, (alcoholic) drink, intoxicant, inebriant, booze; alcohol, sprits ইত্যাদি। খামর শব্দটির আভিধানিক অর্থ বিলুপ্ত করা, লুকিয়ে ফেলা। বিবেক ও বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে দেয় এমন সব কিছুই হলো মদ তথা নেশার জিনিস বা মাদ্রকদ্রব্য। যেহেতু মদ মানুষের বিবেক ও চেতনাকে বিলুপ্ত করে দেয়, তাই একে ‘খামর’ বা মদ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
প্রতিনিয়ত এই বিষাক্ত মাদকের শিকার হচ্ছে শত শত ব্যক্তি এবং পরিবার। মাদক নষ্ট করে দিচ্ছে হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। মাদকাসক্ত হয়ে স্বামী নির্যাতন করছে স্ত্রীকে। মাদকাসক্ত হয়ে ছেলে অসভ্যতা করছে মা-বাবার সাথে। সমাজের দিকে চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পাওয়া যায় এসব। মাদকের কবলে পড়ে খুন, ধর্ষণ এবং নানান রকম অপরাধ ঘটাচ্ছে মাদকাসক্তরা। দেশের এমন কোনো স্থান খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই।
স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার বেড়েই চলেছে। সাধারণ জনগোষ্ঠীর মাঝেও এর দানবীয় বিস্তার দেশের বিবেকমান ও সচেতনদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। অবৈধ মাদকদ্রব্যের বিষাক্ত অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের জনসংখ্যার বিরাট একটা অংশ। শুধু অন্ধকারেই হারিয়ে যাচ্ছে না, বিষাক্ত মাদকদ্রব্য সেবন করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অসংখ্য মানুষ। ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে মদ বা মাদকদ্রব্য সেবন বা গ্রহণ খুবই ক্ষতিকর ও খারাপ কাজ। ইসলাম ধর্ম ও আদর্শে তথা ইসলামী শরীয়াত বিশ্বাসীদের দৃষ্টিতে মদ বা মাদকদ্রব্য হারাম এবং তা অবশ্যই বর্জনীয়। ইসলামী শরীয়াতের দৃষ্টিতে মদ বা মাদকদ্রব্য সেবন বা গ্রহণ করা ঘৃণ্য পাপাচার অর্থাৎ কবীরাহ্ গুনাহ। আর মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ এক চরম অপরাধ।
হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, নেশা সৃষ্টি করে এমন প্রত্যেক জিনিসই হারাম। আর আল্লাহর প্রতিজ্ঞা হল এই যে, যে লোক নেশা সৃষ্টিকারী জিনিস পান করবে, তিঁনি তাকে ‘তীনাতুল খাবাল’ পান করাবেন। উপস্থিত লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) ! ‘তীনাতুল খাবাল’ জিনিসটা কি ? তিঁনি বললেন, তা জাহান্নামীদের গায়ের ঘাম, অথবা তিঁনি বলেছেন, দোযখীদের রক্ত ও পুঁজ মুসলিম হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমার (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, মাতা-পিতার সঙ্গে না-ফারমানি (দুর্ব্যবহার) কারী, জুয়াড়ি, উপকার করে খোটাদানকারী ও হামেশা মদ্যপায়ী বেহেশেÍ প্রবেশ করবে নাÑ দারেমী।
হযরত ইবনে উমার (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, তিন শ্রেণির লোকদের জন্য আল্লাহ্ বেহেশÍ হারাম করে দিয়েছেন। নিত্য মদপানকারী (মদ্যপায়ী), পিতা-মাতার নাফরমান-অবাধ্য লোক এবং দাইউস অর্থাৎ যে লোক তার পরিবারের কুকর্মকে স্বীকৃতি দেয়Ñআহমাদ ও নাসায়।
একজন মানুষ যখন মাদকে আসক্ত হয়, তখন তার দ্বারা অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক নানাবিধ ক্ষতি সাধিত হয়। বাংলাদেশের মতো হতদরিদ্র দেশে, যেখানে জনসংখ্যা ধারণ ক্ষমতার চাইতেও বেশি এবং দরিদ্র, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের অভাব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক মন্দাভাব, হত্যা, সন্ত্রাসসহ হাজারো সমস্যা প্রতিনিয়িত মানুষকে তাড়া করছে সেখানে মাদকের হিং¯্র থাবা বিস্তার করলে পরিস্থিতি কেমন ভয়াবহ হবে তা চিন্তা করলে গা শিউরে উঠে। শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে করে তুলছে বিপর্যস্ত। বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবহার রোধ করা গেলে প্রতি বৎসর জাতীয় বাজেটে সাশ্রয় হবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। মাদকাসক্তির ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে গিয়ে বের হয়ে আসে এমন একটি তথ্য, যা বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা। চাঙ্গা করতে পারে বিপর্যন্ত, ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতিকে।
গণসচেতনতাই এই সমস্যা উত্তরণের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পথ। মাদক বিরোধী সকল কার্যক্রম পরিচালনা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের দায়িত্বও কোন অংশে কম নয়। কেননা এই মাদকাসক্ত ব্যক্তি আমি, আপনি অথবা আমাদেরই সন্তান। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি একদিকে যেমন অনুৎপাদনশীল অর্থাৎ সে কোন উৎপাদনে অংশ নিচ্ছে না, তেমনি নানাভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করছে। এখন আমাদের কাজ-সচেতনতার মাধ্যমে এটা দেখা যে, নতুন করে কেউ যেন আর মাদকাসক্ত না হয় এবং মাদক চক্রকে প্রতিরোধ করা। যারা ইতোমধ্যে মাদকাসক্ত হয়েছে তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা।
লেখক : কলামিস্ট, সমাজসেবক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।