Inqilab Logo

বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আয় হবে ১০ হাজার কোটি টাকা

অপ্রচলিত পণ্য রফতানি

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামে রয়েছে কর্মসংস্থানের বড় ক্ষেত্র : অপ্রয়োজনীয় আমদানিতে বিরাট অপচয়
শফিউল আলম : অপ্রচলিত বা খুব কম প্রচলিত পণ্যসামগ্রী রফতানি বাবদ বর্তমান আয়ের চেয়ে আরও বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম হতে পারে। আর এরজন্য বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে রয়েছে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র। নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতি, কারচুপি, রফতানি ডকুমেন্টে জালিয়াতির কারণে এবং সুষ্ঠু তদারকি ব্যবস্থার অভাবে থমকে আছে অপ্রচলিত বা কম প্রচলিত রফতানিমুখী পণ্যের সুবিশাল বাজার। রফতানি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, বার্ষিক অন্তত ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অপ্রচলিত ও কম প্রচলিত পণ্যসামগ্রী বিশেষ করে খাদ্যপণ্য ও গৃহস্থালী সৌখিন সামগ্রীর রফতানি বাজার বিভিন্ন দেশে প্রসারিত করা অনায়াসেই সম্ভব। কেননা এর বাজার চাহিদা ও কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য সেই বাজার কাজে লাগানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
রফতানি বাজার বিশ্লেষক সূত্র জানায়, পান সুপারি, পানের খয়ের, মিষ্টি জর্দাসহ পানের রকমারী মসলা, চিড়া, মুড়ি, খৈ, গুড়, আলুর চিপস, চানাচুর, নুডুলস, দেশজ বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি, তাজা দেশজ ফুল, কাগজ ও কাপড়ের ফুলসহ হস্ত-কুটির ও মৃৎশিল্পজাত পণ্য, বেত ও বাঁশের ফালি থেকে শুরু করে দেশজ অতি সাধারণ দ্রব্য এমনকি মানুষের পরিত্যক্ত চুল, ভাঙা কাচের মতো ফেলনা বস্তু পরিকল্পিতভাবে রফতানির মাধ্যমে অপ্রচলিত বা কম প্রচলিত পণ্যসামগ্রীও হয়ে উঠতে পারে একটি নিশ্চিত, গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী খাত। বিভিন্ন দেশের আমদানিকারক ও তাদের এজেন্টরাই এসব পণ্যসামগ্রী কেনার জন্য প্রতিনিয়ত ফরমায়েশ দিচ্ছেন। বিশেষত চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাঁশখালী ও মহেশখালীর (কক্সবাজার) বরজে আবাদকৃত অতি সুমিষ্ট পানের খ্যাতি রয়েছে এ উপমহাদেশ ছাড়িয়ে সুদূর মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর আর ইউরোপ পর্যন্ত। ভারতের লক্ষেèৗর পানের পরেই এর সগৌরব অবস্থান। তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় উপজাতীয়দের নজরকাড়া হাতের কাজের সৌখিন ও গৃহস্থালী জিনিসপত্র, শো-পিস, সেখানে জমির আবাদকৃত ফলমূল ও মসলার সুখ্যাতি রয়েছে। যা রফতানির মাধ্যমে হতে পারে সেরা অর্থকরী পণ্য।  
কিন্তু পরিকল্পিত উদ্যোগ ও প্রণোদনার অভাবে রফতানি বাজারের সেই স্থান দখল করে নিচ্ছে ভারত, ভিয়েতনাম, চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এমনকি ভূটানসহ বিভিন্ন দেশ। অথচ বাংলাদেশ থেকে অপ্রচলিত বা কম প্রচলিত পণ্যসামগ্রী রফতানির সুযোগ এ মুহূর্তে রয়েছেÑ সউদি আরব, আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, মিয়ানমারসহ এশীয় বিভিন্ন দেশের গÐি অতিক্রম করে সুদূর আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়ায় পর্যন্ত। তবে বর্তমানে এরমধ্যে কয়েকটি দেশে প্রকৃত বাজার চাহিদার বিপরীতে খুবই সীমিত আকারে কয়েক শ’ কোটি টাকা মূল্যের কিছু কিছু অপ্রচলিত পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। যা সুযোগের তুলনায় অনেক সামান্য।  
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান অবস্থায় অপ্রচলিত বা কম প্রচলিত পণ্যসামগ্রী খুব সীমিত পরিসরে রফতানি হচ্ছে, তাও আবার কাগজে-কলমে। এতে আয় হচ্ছে মাত্র ২-৩ শ’ কোটি টাকার মধ্যে। ‘কাজির গরু কিতাবে আছে’র মতো রফতানিতে গোঁজামিল করা হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে দেয়া ভর্তুকি সুবিধার (ক্যাশ ইনসেনটিভ) অপব্যবহার হচ্ছে। কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী রফতানি চালানের ডকুমেন্টে মিথ্যাঘোষণা, বিভিন্ন উপায়ে জাল-জালিয়াতি, কারচুপির আশ্রয় নিচ্ছে। এর ফলে রফতানি পরিমাণগতভাবে বাড়ছে না। বাজার সুবিধারও কোন প্রসার নেই। বরং মিয়ানমার, ভূটান, ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকেই উল্টো স্রোতে অবিরাম আসছে অপ্রচলিত এমনকি খুব মামুলি ধরনের কিছু খাদ্যপণ্য। তাতে বিদেশি আচার, সচ, চিপস, বিস্কুট, চানাচুর, নুডুলস, লজেন্স আর চকোলেট দিয়ে তৈরি খাদ্যসামগ্রীর মতো অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বাবদ দেশের মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় ঘটছে।      এদিকে অপ্রচলিত ও কম প্রচলিত পণ্যদ্রব্য রফতানিখাতে হরেকরকম গোঁজামিলের কারণে রফতানি বহুমুখীকরণ লক্ষ্যচ্যূত হচ্ছে। বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ বেহাত হতে চলেছে। ঘোষণা অনুসারে পণ্য সরবরাহ না করে ভিন্ন ধরনের পণ্যের চালান শিপমেন্ট করা, গুণগত মান ও ওজনে কারচুপিসহ বিভিন্ন অনিয়মের আগাগোড়া প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। অপ্রচলিত খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য দ্রব্য রফতানি বাজার প্রসারে এ চক্রটিই মূল বাধা হয়ে আছে। অপ্রচলিত পণ্যসামগ্রীর রফতানি চালানের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরভিত্তিক কাস্টমস এবং শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাছে মাঝেমধ্যে ধরা পড়ছে মিথ্যাঘোষণা, অনিয়ম, গোঁজামিল আর জালিয়াতির ঘটনা। মিথ্যাঘোষণায় নির্ভর করে ‘অপ্রচলিত পণ্যে’র নামের আড়ালে শিপমেন্ট হয়ে যাচ্ছে অন্য চালান, যেগুলো ভূয়া ঘোষণাকৃত পণ্যের চেয়েও অনেক বেশি মূল্যমানের। এসব রফতানি চালানে সরু ও সুগন্ধী চালও বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। মূল্যের তারতম্যের কারণে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বা অপচয় হচ্ছে। তদুপরি রফতানি জালিয়াতি ও প্রতারণার কারণে বিদেশের ব্যবসায়ী, শিপিং অঙ্গনে হচ্ছে দেশের সুনামহানি।  
রফতানিকারক সূত্র জানায়, দেশজ কৃষি-খামারজাত খাদ্যসামগ্রী ও কিছু কিছু ভোগ্যপণ্যের বেশ ভাল মূল্যে বাজার চাহিদা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, সিঙ্গাপুর, হংকং, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া এবং ইউরোপীয় ও পূর্ব-ইউরোপ, রাশিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে। রফতানির ব্যাপক বাজার সম্ভাবনা থাকলেও তা সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। রফতানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে অপ্রচলিত পণ্য রফতানি বাবদ সরকারের বরাদ্দ দেয়া নগদ সহায়তা অর্থাৎ ক্যাশ ইনসেনটিভের কোটি কোটি টাকা ধূর্ত জালিয়াতদের পকেটে চলে যাচ্ছে।   
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপ্রচলিত পণ্য রফতানি খাতে জালিয়াতির পেছনে গুটিকয়েক ব্রিফকেস সর্বস্ব মৌসুমী ব্যবসায়ী, অসৎ সিএন্ডএফ ও শিপিং এজেন্ট, বেসরকারি আইসিডি’র কিছু অতিলোভী লোকজন জড়িত। অপ্রচলিত পণ্যসামগ্রী রফতানিতে শুভঙ্করের ফাঁকির পাশাপাশি সুযোগ বুঝে অনেকক্ষেত্রেই আমদানি চালানের বিপরীতে ভূয়া ও জাল ডকুমেন্ট দাখিল করে এবং মিথ্যা ঘোষণায় পণ্যসামগ্রী খালাস, ডেলিভারি, পরিবহনের অপচেষ্টা চালানো হয়। আমদানি ঘোষণায় অত্যন্ত নিম্নদামের এমনকি ফেলনা ধরনের কোন না কোন পণ্যের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। অথচ আমদানি করা হচ্ছে এইচএস কোড অনুসারে ঘোষণার চেয়েও অনেক বেশি মূল্যের পণ্যসামগ্রী। এহেন মিথ্যা ঘোষণার কারণে উচ্চহারের শুল্ককর ফাঁকি এবং কম দামের জিনিসকে বেশি দামে দেখিয়ে বিপুল হারে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করা হয়। অপ্রচলিত পণ্য রফতানিতে সরকার যেখানে উৎসাহ যোগাচ্ছে, বিভিন্ন ইনসেনটিভ পাচ্ছেন রফতানিকারকরা, সেক্ষেত্রে রফতানি ডকুমেন্ট জালিয়াতি ও মিথ্যা ঘোষণায় তা বিফলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আবার সেই একই জালিয়াত চক্র পণ্যসামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে, নামমাত্র শুল্ককর এমনকি শূণ্য শুল্কের (শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল প্রভৃতি) আমদানির ঘোষণা দিয়ে প্রকৃতপক্ষে উচ্চ শুল্ককর-যোগ্য পণ্য ও আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য এনে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টা করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আয়

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২
৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ