পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীর বনানীতে ধর্ষণ মামলার দুই আসামি সাফাত আহমেদের ৬ দিন ও সাদমান সাকিফের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে পুলিশ গ্রেফতারকৃত সাফাত ও সাদমানকে মহানগর হাকিম রায়হানুল ইসলামের আদালতে হাজির করে। শুনানি শেষে আদালত তাদের আলাদা আলাদা রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে, গ্রেফতারকৃত সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে জিজ্ঞাসাবাদে বনানীর একটি আবাসিক হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের নির্দেশে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি দল গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট থেকে সাফাত আহমেদ ও তার সহযোগী সাদমান সাকিফকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের ঢাকায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
রিমান্ডের আবেদনে যা বলা হয়েছে
আদালত সূত্র জানায়, আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফের রিমান্ড চাওয়ার আবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা এই দুই শিক্ষার্থী ছাড়া আরও অনেক তরুণীকে জোর করে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, আসামিরা দুশ্চরিত্র। তাই মামলার রহস্য উদঘাটনসহ এজাহারনামীয় আসামিদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন। আসামিদের রিমান্ডে পেলে নিবিড়ভাবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে অন্যান্য পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করার সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশের আবেদনে বলা হয়, আসামিরা জামিনে মুক্তি পেলে পালিয়ে যেতে পারে। আদালতে রিমান্ডের আবেদন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের ইন্সপেক্টর ইসমত আরা এমি। আদালত সূত্র জানায়, আদালতে কাঠগড়ায় উঠেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই আসামী সাফাত ও সাদমান। এসময় আইনজীবীরা তাদের সান্তনা দিতে থাকেন। আইনজীবীরা তাদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেন এবং তাদের কিছুই হবে না বলে জানান। শুনানি শেষে আদালত সাফাতের ছয় দিন ও সাদমানের পাঁচ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ সদর দফতরের একটি বিশেষ টিম সিলেট পুলিশের সহযোগিতায় গত ১১ মে রাত ৯টার সময় সিলেটের জালালাবাদের মদিনা মার্কেটের রশিদ ভিলা থেকে আসামিদের গ্রেফতার করে। পরে সেখান থেকে তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এরপর আসামিদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে ২৯ মার্চ সকাল ১০টা পর্যন্ত বনানীর রেইনট্রি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে দুই তরুণীকে আটক রেখে আসামীরা মারধর ও অস্ত্রের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় তাদের রুমের মধ্যে নিয়ে জোরপূর্বক মদ্যপান করায়। পরে মামলার বাদীকে আসামি সাফাত আহমেদ ও বাদীর বান্ধবীকে নাইম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করে। আবেদনে বলা হয়, গ্রেফতার হওয়া আসামি সাদমান সাকিফের সঙ্গে বাদীর দুই বছর আগে থেকে পরিচয় ছিল। ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে গুলশানের পিকাসো রেস্টুরেন্টে বাদী ও তার বান্ধবীর সঙ্গে সাদমান সাকিফের মাধ্যমে সাফাত আহমেদের পরিচয় হয়। এরপর জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে গত ২৮ মার্চ সাফাত আহমেদ তার গাড়ির ড্রাইভার বিল্লাল ও বডিগার্ড আবুল কালাম আজাদকে দিয়ে নিকেতনের বাসা থেকে বাদী ও তার বান্ধবীকে বনানীর রেইনট্রি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা দুই তরুণীকে বিভ্রান্ত করে এবং বাদীর অপর বন্ধু শাহরিয়ার ও অন্য একজন তরুণীকে আরেকটি কক্ষে আটকে রাখে। এরপর ৭০০ নম্বর কক্ষে নাইম আশরাফ বাদীর বান্ধবীকে এবং সাফাত বাদীকে রাতভর ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের সত্যতা পাওয়া গেছে
এদিকে, গতকাল শুক্রবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রাথমিক তদন্তে দুই তরুণীকে ধর্ষণের সত্যতা পাওয়া গেছে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভিকটিমরা যাতে সুবিচার পেতে পারে সে জন্য সহায়ক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিলম্বে রুজু হওয়ার কারণে মামলা যেন সঠিক পথে এগোয়, আমরা যেন তথ্যপ্রমাণসহ আদালতে প্রতিবেদন পেশ করতে পারি সে লক্ষ্যে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে এই তদন্ত সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামিরা ধনাঢ্য এবং প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হলেও পুলিশকে নিয়ে কোনো ধরণের সন্দেহ ও সংশয়ে না থাকতে অনুরোধ করে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, কয়েক বছর আগে রাজধানীর মগবাজারে জোড়াখুনের ঘটনায় নাম আসা ব্যক্তিরাও প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য ছিল। আর খুন হয়েছিলেন নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু আসামি এবং ভুক্তভোগীরা কোন অর্থনৈতিক শ্রেণির সদস্য, সেটা বিবেচনা না করে তদন্ত করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, বনানী থানার দায়িত্ব পালনে কোনো অবহেলা আছে কিনা সেটি খুঁজতে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভিকটিমরা যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলো তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দিবেন। কৃষ্ণ পদ রায় আরো জানান, সাফাত-সাকিফকে গ্রেফতার করা হলেও অভিযান শেষ হয়নি। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
থানা পুলিশের অবহেলা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি
দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে ও তদন্তে বনানী থানার ওসি বিএম ফরমান আলীসহ থানার অন্য কর্মকর্তাদের কোনো অবহেলা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) মো. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়, যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গতকাল শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় এ সব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মামলা নিতে বিলম্ব, আর্থিক লেনদেনসহ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখতে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশক্রমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানার কর্মকর্তাদের আসলেই কোনো দায় আছে কিনা এই বিভ্রান্তি নিরসনে কমিটি কাজ করবে। এর আগে, বনানী থানায় মামলা না নিতে চাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানির অভিযোগ করেছেন বাদীপক্ষ। এর পর পরই ওসি ফরমান আলী ৯ মে থেকে ‘একান্ত পারিবারিক’ কারণ দেখিয়ে ৫ দিনের ছুটিতে যান। ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর একজন অভিযোগ করে বলেন, ৪ মে ধর্ষণের মামলা করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল আরও কয়েকবার ধর্ষিত হচ্ছি। পুলিশ বার বার একই ঘটনা (ধর্ষণের) শুনতে চাইছিল। অনেকবার শোনার পরে একপর্যায়ে ওসি বলেন, এ সব কথা লিখতে হবে। বাদী সেগুলো লেখার পর ওসি বলেন, আপনারা আজ চলে যান, আমরা তদন্ত করব। যদি দেখি ওরা অপরাধী তাহলে আমরা মামলা নেব। ওই তরুণী আরো বলেন, পরদিন (৫ মে) আমাদের দু’জনকে ডেকে একই ঘটনা আবারও জিজ্ঞেস করেছে পুলিশ। বলেছে, এটা আপনারা বলেন নাই, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি। তখন আমরা বলছি, আমরা কোনো জিনিস বাদ দেই নাই। ওই তরুণীর ভাষায়, পরদিন (৬ মে) রাতে আমাদের ডাকা হয়, মামলার কপি দেওয়ার জন্য। যাওয়ার পরে পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। আমাদের বলা হয়- ছবি তুলতে হবে। আমরা তো ব্যাপারটা ভয় পাই- ছবি তুলব, আবার কী হয় না হয়। তখন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ফোন করে বিষয়টি জানাই। ছবি তুলতে না চাওয়ায় কয়েকজন মহিলা পুলিশ বাজে ব্যবহার করেন। নিয়ম না থাকলেও সেদিন রাতে আমাদেরকে থানায় থাকার কথা বলে। পরে অবশ্য আমাদের থানায় না রেখে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ করে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের একজন গত ৬ মে বনানী থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নাঈম আশরাফ (৩০), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল (২৬) ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।