Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দখল-বেদখলে সংকীর্ণ সরকারি খাল

বর্ষায় খুলনা শহর জুড়ে পানিবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : দখল-বেদখলে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে খুলনার সরকারি খালগুলো। বিগত সব সরকারের আমলে প্রভাবশালীরা খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে। নিজ নামে খালের জমি রেকর্ড করে অন্যের কাছে তা বিক্রিও করেছে। অবৈধ দখল প্রবণতার কারণে খালের আয়তন আশঙ্কাজনক কমে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রতি বছরের ন্যায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও শহরের বড় অংশ জুড়ে সৃষ্টি হবে পানিবদ্ধতা। সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খাল ও জমি দখলের মূল অভিযোগটাই স্থানীয় প্রভাবশালী ও সরকার দলের কতিপয় নেতাকর্মীদের দিকে। ২০০৯ সাল থেকে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা/প্রতিনিধি সমন্বয়ে মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ময়ূর নদী ও খালসমূহ অবৈধ দখল মুক্ত করার জন্য জরীপ, অনুসন্ধান ও সুপারিশের সিংহভাগই বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এবার শক্তহাতে অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও তাদেরকে উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও খুলনা মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান। তিনি বলেন, যারা দলের নাম ব্যবহার করে মানুষকে কষ্ট দেবে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। দলে অনুপ্রবেশকারীরা অত্যন্ত সুকৌশলে দলের নাম ব্যবহার করে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারে। সেজন্যে তাদের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে খুলনায় সরকার দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতার এই শক্ত ভ‚মিকায় আশ্বস্ত হয়েছেন পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি মহানগরীর লবণচরা এলাকায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদকালে তিনি এসব কথা বলেন।
‘ময়ূর নদী ও সংযুক্ত খালসমূহ রক্ষা’ শীর্ষক খুলনার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খুলনা শহরে বসতি বাড়ার সাথে ময়ূর নদী ও সংযুক্ত ২২ খাল দখলের প্রক্রিয়া বেড়েছে। গত দশ বছরে ময়ূর নদী ও ২২ খালের প্রায় ১৪ হাজার বর্গমিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে ময়ূর নদীর বেদখল হওয়া জমির পরিমাপ ১০৭৫ বর্গমিটার। নদীর আয়তন কমেছে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। সংযুক্ত হাতিয়া নদীর ৫৬৮০ বর্গমিটার ও ক্ষুদের খালের ১০১০ বর্গমিটার জমি বেদখল হয়েছে। বাস্তুহারা খাল, সøুইসগেট খাল, গল্লামারী নর্থখাল, কাস্টমঘাট ইত্যাদি এলাকায় খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গত দশ বছরে আড়ংঘাটা খালের বেদখল হয়েছে ৩৪৮ বর্গমিটার জায়গা, দেয়ানা চৌধুরী খালের ৩৪১ বর্গমিটার, বাস্তুহারা খালের ২৪২ বর্গমিটার, দুয়ানে খালের ১৩৭ বর্গমিটার, তালতলা খালের ১২১ বর্গমিটার, কাদেরের খালের ৪০৫ বর্গমিটার, নিরালা খালের ১২০৪ বর্গমিটার, ছড়িছড়া খালের ১২৩ বর্গমিটার, খোলাবাড়িয়া খালের ৫১ বর্গমিটার, নারকেলবাড়িয়া খালের ৫০০ বর্গমিটার, হরিণটানা খালের ১৭৮ বর্গমিটার, মতিয়াখালি খালের ২৬৩ বর্গমিটার, শুরি খালের ২১৭ বর্গমিটার, রংমারী খালের ২৪৬ বর্গমিটার, কাশেমবাড়ি খালের ৪৮৯ বর্গমিটার, মাথাভাঙ্গা খালের ৭৫ বর্গমিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব আশরাফ-উজ জামান বলেন, বেদখল হওয়া খালের জায়গা উদ্ধার করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে না পারলে খুলনা মহানগরী ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, বন্যা, পরিবেশ বিপর্যয় ও পানি সংকটের সম্মুখীন হবে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তুষার কান্তি রায় বলেন, খালের আশেপাশের জমির মালিকদের খাল ভরাট করে নিজের জায়গার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রবণতা আগের থেকেও বেড়েছে। এছাড়া যাতায়াতের সুবিধার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের খাল ভরাট করে রাস্তা তৈরির প্রবণতা ও আইনের অনুশাসনের অভাবও খাল দখলকে উৎসাহিত করছে।
জন উদ্যোগের সমন্বয়কারী মহেন্দ্র নাথ মন্ডল বলেন, অবিলম্বে বেদখল হওয়া খালের জায়গা উদ্ধার করে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে খুলনা মহানগরী ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, বন্যা, পরিবেশ বিপর্যয় ও পানি সংকটের সম্মুখীন হবে।
এদিকে নগরীর লবণচরা এলাকায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদকালে খুলনা ১৪ দলের সমন্বয়ক আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান এমপি বলেছিলেন, জনস্বার্থ বিঘœকারীদের কোন ক্ষমা করা হবে না। যারা নগরীতে অবৈধভাবে জায়গা দখল করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে। তিনি বলেন, যারা জমি দখল করে মানুষের দিন যাপনের অন্তরায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা দলের নাম ব্যবহার করে মানুষকে কষ্ট দেবে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অনুপ্রবেশকারীরা অত্যন্ত সুকৌশলে দলের নাম ব্যবহার করে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারে। সেজন্যে তাদের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। জনগণের পাশে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে তরান্বিত করতে হবে।
কেসিসি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা চলমান প্রক্রিয়া। উচ্ছেদের পর আবারও দখল হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দখলদারদের থেকে জায়গা উদ্ধার করে জলাবদ্ধতা নিরসনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দখল

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৩ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ