Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিশোধ নয়, তারা যেন বুঝে কী খারাপ কাজ করেছে

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ২০০২ সালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ গুজরাটে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার সময় উগ্র হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকেরা বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ করে ও তার পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। বিচারের জন্য তার ১৫ বছরের যুদ্ধ অবশেষে তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। গণধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গত সপ্তাহে বোম্বাই হাই কোর্টে ১১ জনকে মৃত্যুদÐের আদেশ দিয়েছে। এছাড়াও, প্রমাণ নষ্ট করে ফেলার জন্য আদালত পাঁচ পুলিশ এবং দুইজন ডাক্তারকে অভিযুক্ত হয়েছে। এর আগে বিচারিক আদালতে তাদেরকে খালাস দেয়া হয়েছিল। দিল্লিতে বিবিসি সংবাদদাতাকে বিলকিস বানু জানান, অবশেষে তাকে শান্তির আশা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ওপর সবসময় আমার পূর্ণ আস্থা ছিল এবং এই আদেশের জন্য আমি বোম্বে হাইকোর্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি এই রায়ে অত্যান্ত খুশি হয়েছি। তিনি বলেন, প্রতিশোধ নয়, তারা যেন বুঝতে পারে কী খারাপ কাজ করেছে। তিনি আরো বলেন, রাজ্য সরকার এবং পুলিশও এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বলে আমি মনে করি। কারণ তারা অভিযুক্তদেরকে ধর্ষণ ও লুটপাটের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল। বিলকিস বানু বলেন, আদালত পুলিশ ও ডাক্তারদেরকেও দোষী সাব্যস্ত করেছে। মনে হচ্ছে আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। ন্যায়বিচারের জন্য বিলকিস বানুকে দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি বলছেন, এই সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প ছিল না। এটা ভালভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে যে, কিছু পুলিশ ও রাজ্য কর্মকর্তারা তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন, প্রমাণ ধ্বংস করা হয়েছিল এবং লাশগুলো কোনো রকম ময়নাতদন্ত ছাড়াই সমাহিত করা হয়েছিল। যে ডাক্তাররা তাকে পরীক্ষা করেছিল, তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, তাকে ধর্ষণ করা হয়নি এবং তাকে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিকূলতা সত্তে¡ও তিনি আক্রমণকারীদেরকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। ২০১৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার ফেডারেল তদন্তকারীদের কাছে হস্তান্তর করার পর প্রথমবারের মতো অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। গুজরাটের আদালত তাকে ন্যায়বিচার প্রদান করতে পারেনি বলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলে সুপ্রিম কোর্ট তার এই আবেদন মঞ্জুর করে এবং তার মামলা মুম্বাইয়ের একটি আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এই দীর্ঘ যুদ্ধে তার পরিবারকে ব্যাপকভাবে দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়েছে। গত ১৫ বছরে তিনি ও তার স্বামী ইয়াকুব রসুলকে ১০ বার বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তাদের পাঁচ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে গুজরাটের পথে পথে ঘুরতে হয়েছে। রসুল বলেন, হুমকির কারণে আমরা এখনো নিজেদের ঘরে যেতে পারছি না। পুলিশ এবং রাজ্য প্রশাসন সবসময়ই আমাদের আক্রমণকারীদের সাহায্য করেছে। আমরা যখন গুজরাটে ছিলাম তখনো আমরা আমাদের মুখ ঢেকে রেখেছি, ভয়ে আমরা কখনো আমাদের ঠিকানা প্রকাশ করতাম না। দাঙ্গা চলাকালে বিলকিস বানো ও তার পরিবারের উপর এই হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ। গুজরাটের গোধরা শহরে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে অগ্নিকাÐে ৬০ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হলে এই দাঙ্গা শুরু হয়। উগ্র হিন্দুরা এই অগ্নিকাÐের জন্য মুসলমানদের দোষারোপ করলে হিন্দু জনগোষ্ঠী বিক্ষোভ শুরু করে। তারা আশেপাশের মুসলিম এলাকায় নগ্ন হামলা চালায় এবং তাদের সম্পত্তি ধ্বংস করে। তিন দিনের জন্য দাঙ্গাবাজদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশ। এ ঘটনায় ১,০০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়। তাদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এই দাঙ্গা থামাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য তিনি বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন। এই অন্যায়ের সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে সর্বদা দাবি করে আসছেন এবং দাঙ্গার জন্য তিনি কখনো ক্ষমা প্রার্থনাও করেননি। অপর্যাপ্ত প্রমাণের উদ্ধৃতি দিয়ে ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেল তার বিচার করতে অস্বীকৃতি জানায়। যাইহোক কয়েক বছর ধরে চলা এই মামলায় আদালত দাঙ্গায় জড়িত থাকার জন্য কয়েক ডজন লোককে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ২০১২ একজন সাবেক মন্ত্রী ও মোদির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ২৮ বছরের কারাদÐ দেয় আদালত। তবে, এখনো অনেক মানুষ ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। পনেরো বছর পর বিলকিস বানোর চোখে এখনো অশ্রæ ঝরছে কারণ তিনি সেই দিনের ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। দাঙ্গার সময় তিনি তার বাবার বাড়িতে ছিলেন। গোধরা শহরের অদূরে রন্ধুপুর গ্রামে তার বাবা-মা বসবাস করেন।  বিবিসি।



 

Show all comments
  • Nannu chowhan ১১ মে, ২০১৭, ৭:২৩ এএম says : 0
    Congratulations, all the judges,at last long you have given the true verdict in favour of victims, One day world will observe the more favourable verdicts to all the victims of terrorised by ........... & other terrorist group in India.
    Total Reply(0) Reply
  • Lablu ১১ মে, ২০১৭, ১০:৪৭ এএম says : 0
    Asa kori ai ray dekhe baki ra thik hoye jabe
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতিশোধ

২১ জানুয়ারি, ২০১৯
২১ জানুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ