দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
হাফিজ মাওলানা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ইসলামী শিক্ষা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের মুসলমান সমাজ ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী আলেম-ওলামার স্মরণাপন্ন হতেন। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার যে কয়টি পরিবার নিজের সন্তানদের দ্বীনি শিক্ষা প্রদান করে প্রৃকৃত আলিম তৈরির প্রচেষ্টা করেন তাদের মধ্যে মাওলানা আবদুস সালাম পীর সাহেবের পরিবার উল্লেখযোগ্য। তিনি ভারতের ঐতিহ্যবাহী জৈনপুর সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা কারামত পীর সাহেবের খলিফা ছিলেন। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা ইউনুস (রহ.) এর নিকট বায়াত হন এবং খিলাফত লাভ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম জুহুরুন্নিসা। তাঁদেরই ঔরসজাত সন্তান হযরত মাওলানা নূরুল হক। তিনি কর্মজীবনে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সমাজে ভূমিকা রেখেছেন।
হযরত মাওলানা নূরুল হক (র.) ১৯১০ কিংবা ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁর পিতামহ মুন্সী আফতাব উদ্দিন আহমদ। বর্তমানে এ পদটিকে চেয়ারম্যান বলা হয়।
পিতা-মাতার তত্ত¡াবধানে থেকে পবিত্র কুরআন শিক্ষা লাভ করেন। নিজ উপজেলা সরাইলের অন্তর্গত বৈরাগী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন্্। মাদরাসা ধারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন জেলার প্রসিদ্ধ মাদরাসা জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়ায় জামায়াতে ইয়াজদাহমে ভর্তি হয়ে জামায়াতে চাহারম অর্থাৎ শরহে বেকায়াহ সমাপ্ত করেন। পরে ঢাকাস্থ বড়কাটারা মাদরাসায় ভর্তি হয়ে ২ বছর পড়া লেখা করে ১৯৪১ অথবা ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে চলে যান ভারতের উত্তর প্রদেশের দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হন। সেখানে হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহ) এর নিকট বুখারী শরীফ ও অন্যান্য খ্যাতনামা উস্তাদগণের নিকট দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে ৩ বছর অবস্থানের পর নিজ দেশে ফিরে আসেন। ইলম অর্জন করতে যেসব উস্তাদগণের ভূমিকা ছিল তাঁরা হলেন; ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা হযরত মাওলানা তাজুল ইসলাম (রহ.), রইসুল মুফাসসিরীন হযরত মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বড় হুজুর (রহ.), মাওলানা ইসমাঈল (রহ.), মাওলানা সফিউল্লাহ চান্দপুরী (রহ.), মাওলানা মুফতি আলী আমজাদ (রহ.) হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.), পীরজী হুজুর (রহ.), হযরত মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.), হযরত মাওলানা মুফতি কেফায়াতুল্লাহ (রহ.), হযরত মাওলানা মুফতি শফী (রহ.), শায়খুল আদব হযরত মাওলানা এযাজ আলী (রহ.), মাওলানা মুহাম্মদ মিয়া (রহ.), মাওলানা ইবরাহিম বিলয়াভী (রহ.) প্রমুখ।
দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ফিরে এসে তিনি তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত কাসেমুল ঊলূমে জামায়াতে উলা পর্যন্ত চালু করেন। ১৯৫৪ সালে এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝরে মাদরাসার ভবন বিনষ্ট হয়ে যায়। সেখানে মাদরাসাটিকে পূণ:প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নাই। তাঁর ভগ্নিপতি মরহুম মাওলানা শরীফ উদ্দিনসহ নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চালাকচর মাদরাসায় অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন অব্যাহত রাখেন। ৩ বছর পর ১৯৫৯ সালে তিনি হবিগঞ্জ ইসলামিয়া আরাবিয়া উমেদনগর মাদরাসায় মুহাদ্দিস পদে যোগদান করেন। ১৯৬১ সালে তদানিন্তন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব খানের শাসনামলে তাঁর মুরুব্বীগণের পরামর্শ তথা নির্দেশিত হয়ে মাওলানা নূরুল হক নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেন। জনগণের ব্যাপক সারা পেয়ে তিনি চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হন। পরবর্তী ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি ২৫ বছর এ পদে থেকে জনসেবার সুযোগ লাভ করেন। এছাড়াও নিজ বাড়ীর মসজিদে তিনি ইমামতি করতেন ও মক্তবে নিয়মিত কুরআন তালিম দিতেন।
তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়ায় অধ্যয়নকালে সরাইল উপজেলার দেওড়া গ্রামের মুন্সী ফুরকান উল্লাহ’র ৩য় কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আক্দ পড়ান উস্তাদুল আসাতেজা হযরত মাওলানা ইউনুস (রহ.)। তাঁর ছেলে হযরত মাওলানা মুহাম্মদ শামসুজ্জামান, জামাতা হযরত মাওলানা মুফতি সাদেকুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল আউয়াল মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে দ্বীনি কাজে আঞ্জাম দিচ্ছেন।
হযরত মাওলানা নূরুল হক (রহ.) ১৯৮৯ সালে ইন্তিকাল করেন। তাঁর জানাযায় হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উপস্থিতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম হযরত মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বড় হুজুর ইমামতি করেন। নামাযে জানাযা শেষে নিজ গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।