বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানুষকে তার মূল ঠিকানা ও পরকালে পুনরায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া নবুওয়াত ও রিসালাতের অন্যতম মৌলিক উদ্দেশ্য। মানুষের জন্য তাদের স্রষ্টার হেদায়েত বা পথনির্দেশ যে নির্বাচিত, বাছাইকৃত মানুষদের দ্বারা হাজার হাজার বছর পথ দেখানো হয়েছে এর বাইতুল মুকাদ্দাসকেন্দ্রিক একটি চিত্র আমাদের সামনে এসে গেছে। হযরত ইবরাহীম (আ.) এরই আরেকটি রক্তধারা বাইতুল্লাহ শরীফের ভিত্তিতে আল্লাহর বান্দাদের পথনির্দেশ দানের মহান কাজ সম্পাদনের জন্য আল্লাহ নির্মাণ করেছেন। হযরত ইসমাঈল (আ.) থেকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) পর্যন্ত দুনিয়ার মানুষের ইহকালীন এই ভ্রমণের শেষ পর্ব তার সামগ্রিক ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে থাকে। একটি জীবনকালনির্ভর সরল হিসাবে পৃথিবীর প্রথম মানুষ থেকে বিশ্বনবী (সা.) পর্যন্ত কমবেশি ছয়-সাত হাজার বছর ধরা হলে তাঁর জীবন ও সময়কালটি হয় মানব জীবনযাত্রার শেষ যুগ। এরপর এখন পর্যন্ত আরো প্রায় দেড় হাজার বছর পেরিয়ে গেছে।
পূর্বকার সব নবী যে অভিন্ন মিশন নিয়ে কাজ করেছেন বিশ্বনবী (সা.)-এর মিশনও এর বাইরে নয়। মানুষকে তার সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে, দুনিয়ায় আগমন থেকে আজও পর্যন্ত তার স্রষ্টা ও মালিকের সাথে পরিচিত করা এবং আত্মসমর্পিত করা নবী-রাসূলগণের প্রধান কাজ। যে কথাটি পবিত্র কোরআন এভাবে বর্ণনা করেছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে, আর যা আমি ওহী পাঠিয়েছিলাম তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা দ্বীনকে কায়েম করো এবং এ বিষয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়ো না। (সূরা শূরা : ১৩)।
মানবজাতির প্রতি মহান প্রভুর নির্দেশনার যে ধারা ওহীর মাধ্যমে প্রচলিত ছিল তা সমাপ্ত হয় বিশ্বনবীর মাধ্যমে। হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে নবী-রাসূলগণের প্রতি ওহী প্রেরণের যে নিয়ম অতীতে চালু ছিল তারও সমাপ্তি ঘটে আল্লাহর চূড়ান্ত বাণী ও শেষ আসমানী কিতাব পবিত্র কোরআন নাজিলের মাধ্যমে। এরপর আর কোনো ওহী আসবে না। হযরত জিবরাঈল আর কারও কাছে ওহী নিয়ে আসবেন না। দুনিয়ায় নবুওয়াত ও রিসালাতের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটেছে শেষ নবী ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। তিনিই শেষ নবী। তার পর আর কোনো নবী আসবেন না। বিশ্বনবী নিজেই বলেছেন, আমার নবুওয়াত ও কেয়ামত, এ দুটি বিষয় আমার এ দুই আঙ্গুলের মতোই অব্যবহিত সংলগ্ন।
মানুষের প্রতি আল্লাহর যে নিরন্তর বিধান ও নির্দেশনা শুরু থেকে চালু ছিল সেটাও পরিপূর্ণতা এবং সমাপনীর ঘোষণা লাভ করে শেষ নবীর মাধ্যমেই। আল্লাহ ঘোষণা করেন : আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা : ০৩)।
এর পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবীকে সারা পৃথিবী তথা গোটা মানবজাতির জন্য নবী হিসেবে ঘোষণা করেন। আল্লাহ বলেন : আমি আপনাকে সমগ্র মানব জাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি। (সূরা সাবা : ২৮)। পবিত্র কোরআনকেও ‘মানবজাতির জন্য হেদায়েত স্বরূপ’ বলা হয়েছে এবং কোরআন প্রয়োজন অনুসারে গোটা মানবজাতিকেই আল্লাহর হেদায়েতের দিকে ‘হে মানব সকল’ বলে সম্বোধন করেছে। যার আলোকে আমরা শেষ নবীকে বিশ্বনবী বলে আখ্যা দিতে সক্ষম হচ্ছি।
নবী করীম (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা সারাবিশ্বের জন্য মহান শিক্ষকরূপে প্রেরণ করেছেন। তিনি প্রধানত মানুষকে আল্লাহর দিকে আহŸান করেছেন। আল্লাহর পথে মানুষকে আহŸান করাকে তিনি তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের কাজ বলেও উল্লেখ করেছেন। বলেছেন : বলুন, এটাই আমার পথ যে, আমি ও আমার অনুসারীরা আল্লাহর পথে মানুষকে আহŸান করি সজ্ঞানে। (সূরা ইউসুফ : ১০৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।