Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বনবীর মহান মিশন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মানুষকে তার মূল ঠিকানা ও পরকালে পুনরায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া নবুওয়াত ও রিসালাতের অন্যতম মৌলিক উদ্দেশ্য। মানুষের জন্য তাদের স্রষ্টার হেদায়েত বা পথনির্দেশ যে নির্বাচিত, বাছাইকৃত মানুষদের দ্বারা হাজার হাজার বছর পথ দেখানো হয়েছে এর বাইতুল মুকাদ্দাসকেন্দ্রিক একটি চিত্র আমাদের সামনে এসে গেছে। হযরত ইবরাহীম (আ.) এরই আরেকটি রক্তধারা বাইতুল্লাহ শরীফের ভিত্তিতে আল্লাহর বান্দাদের পথনির্দেশ দানের মহান কাজ সম্পাদনের জন্য আল্লাহ নির্মাণ করেছেন। হযরত ইসমাঈল (আ.) থেকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) পর্যন্ত দুনিয়ার মানুষের ইহকালীন এই ভ্রমণের শেষ পর্ব তার সামগ্রিক ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে থাকে। একটি জীবনকালনির্ভর সরল হিসাবে পৃথিবীর প্রথম মানুষ থেকে বিশ্বনবী (সা.) পর্যন্ত কমবেশি ছয়-সাত হাজার বছর ধরা হলে তাঁর জীবন ও সময়কালটি হয় মানব জীবনযাত্রার শেষ যুগ। এরপর এখন পর্যন্ত আরো প্রায় দেড় হাজার বছর পেরিয়ে গেছে।

পূর্বকার সব নবী যে অভিন্ন মিশন নিয়ে কাজ করেছেন বিশ্বনবী (সা.)-এর মিশনও এর বাইরে নয়। মানুষকে তার সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে, দুনিয়ায় আগমন থেকে আজও পর্যন্ত তার স্রষ্টা ও মালিকের সাথে পরিচিত করা এবং আত্মসমর্পিত করা নবী-রাসূলগণের প্রধান কাজ। যে কথাটি পবিত্র কোরআন এভাবে বর্ণনা করেছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে, আর যা আমি ওহী পাঠিয়েছিলাম তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা দ্বীনকে কায়েম করো এবং এ বিষয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়ো না। (সূরা শূরা : ১৩)।

মানবজাতির প্রতি মহান প্রভুর নির্দেশনার যে ধারা ওহীর মাধ্যমে প্রচলিত ছিল তা সমাপ্ত হয় বিশ্বনবীর মাধ্যমে। হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে নবী-রাসূলগণের প্রতি ওহী প্রেরণের যে নিয়ম অতীতে চালু ছিল তারও সমাপ্তি ঘটে আল্লাহর চূড়ান্ত বাণী ও শেষ আসমানী কিতাব পবিত্র কোরআন নাজিলের মাধ্যমে। এরপর আর কোনো ওহী আসবে না। হযরত জিবরাঈল আর কারও কাছে ওহী নিয়ে আসবেন না। দুনিয়ায় নবুওয়াত ও রিসালাতের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটেছে শেষ নবী ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। তিনিই শেষ নবী। তার পর আর কোনো নবী আসবেন না। বিশ্বনবী নিজেই বলেছেন, আমার নবুওয়াত ও কেয়ামত, এ দুটি বিষয় আমার এ দুই আঙ্গুলের মতোই অব্যবহিত সংলগ্ন।

মানুষের প্রতি আল্লাহর যে নিরন্তর বিধান ও নির্দেশনা শুরু থেকে চালু ছিল সেটাও পরিপূর্ণতা এবং সমাপনীর ঘোষণা লাভ করে শেষ নবীর মাধ্যমেই। আল্লাহ ঘোষণা করেন : আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা : ০৩)।

এর পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবীকে সারা পৃথিবী তথা গোটা মানবজাতির জন্য নবী হিসেবে ঘোষণা করেন। আল্লাহ বলেন : আমি আপনাকে সমগ্র মানব জাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি। (সূরা সাবা : ২৮)। পবিত্র কোরআনকেও ‘মানবজাতির জন্য হেদায়েত স্বরূপ’ বলা হয়েছে এবং কোরআন প্রয়োজন অনুসারে গোটা মানবজাতিকেই আল্লাহর হেদায়েতের দিকে ‘হে মানব সকল’ বলে সম্বোধন করেছে। যার আলোকে আমরা শেষ নবীকে বিশ্বনবী বলে আখ্যা দিতে সক্ষম হচ্ছি।

নবী করীম (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা সারাবিশ্বের জন্য মহান শিক্ষকরূপে প্রেরণ করেছেন। তিনি প্রধানত মানুষকে আল্লাহর দিকে আহŸান করেছেন। আল্লাহর পথে মানুষকে আহŸান করাকে তিনি তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের কাজ বলেও উল্লেখ করেছেন। বলেছেন : বলুন, এটাই আমার পথ যে, আমি ও আমার অনুসারীরা আল্লাহর পথে মানুষকে আহŸান করি সজ্ঞানে। (সূরা ইউসুফ : ১০৮)।



 

Show all comments
  • Md Jahangir ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৫২ এএম says : 0
    “আর আমরা আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭]বস্তুত ধর্ম ও রিসালাতের ইতিহাসে এ এক অনন্য ও দৃষ্টান্তহীন ঘোষণা। এই ঘোষণায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমগ্র বিশ্বলোক ও তার মধ্যে অবস্থিত সব কিছুর জন্য আল্লাহর একমাত্র ‘রহমত’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার শাশ্বত কালাম কুরআন মাজীদে এ চূড়ান্ত ঘোষণা বিধৃত। আর কুরআন বিশ্বমানবের অধ্যয়নের চিরন্তন গ্রন্থ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahirul Islam ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৫৯ এএম says : 1
    আমাদের এ যুগ এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগসমূহকে মূলতঃ বিশ্বনবীর যুগ বলতে হবে। তার শাশ্বত দাওয়াতের যুগ এটা। কেননা মানবতা বিধ্বংসি ঝুলন্ত তরবারীটি তিনিই প্রথমে তুলে ফেলেছেন। তারপর মহা-মূল্যবান অবদানে তিনি বিশ্বমানবতাকে ধন্য করেছেন। মানবতাকে তিনি মুক্তির অবিনব পথ ও পন্থা দেখিয়েছেন, জীবন যাপন ও তৎপরতা পরিচালনের নতুন দিশার উদ্বোধন করেছেন। নতুন আশার নতুন স্বপ্ন এবং সম্পূর্ণ নতুন ভাবনা, চিন্তা ও আকিদা- বিশ্বাস দিয়ে মুমূর্ষু মানবতাকে তিনিই তো নতুন জীবনী শক্তি সঞ্জীবিত করেছেন। পৃথিবী ব্যাপী সূচিত হয়েছে এক নতুন সভ্যতার অন্তহীন সম্ভাবনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammod Joynal Abedin ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৫৮ এএম says : 0
    সেই সময় ও তার পরবর্তী কালের সমস্ত মানুষের জীবন তরীকে পূর্ণ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা সহকারে মুক্তি ও নিষ্কৃতির বেলাভূমে পৌঁছিয়ে দেওয়াই ছিল বিশ্বনবীর প্রধান কাজ।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৫৭ এএম says : 0
    বিশ্বমানবতার ইতিহাস প্রমাণ করে, মানুষের নৈতিকতা ও চরিত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ার দরুন এবং মনুষ্যত্ব বিধ্বংসি কার্যাবলীর কারণে মানব সমাজের জীবন তরী যখনই নিমজ্জমান হচ্ছে, ঠিক তখনই নবী-রাসূলগণ এসে সেই তরীর হাল ধরেছেন শক্ত হাতে এবং পর্বত সমান উঁচু তরঙ্গমালার উপর দিয়ে ভাসিয়ে তাকে কিনারার দিকে নিয়ে গেছেন অত্যন্ত দক্ষতা সহকারে। এদিক দিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবদান যেমন ব্যাপক, তেমনি গভীর ও অধিক সম্প্রসারিত। তাঁর প্রদত্ত শিক্ষা, সকল কালের, সকল বংশের, সকল দেশের ও বর্ণের মানুষের জন্যই সর্বাধিক কল্যাণবহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৫৭ এএম says : 0
    যেই সময় বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় প্রেরিত হয়েছিলেন, সেই যুগটি ইতিহাসে ‘জাহিলিয়াতের যুগ’ বলে চিহ্নিত হয়েছে। এই যুগটি কেবল সামষ্টিক বা নৈতিক পতনের যুগই ছিল না, শুধু পৌত্তলিকা বা জুয়া খেলায় মত্ত হয়ে থাকার যুগই ছিল না, নিছক যুলুম ও স্বৈরতন্ত্রের যুগই ছিল না, অর্থনৈতিক শোষণ লুন্ঠনের যুগই ছিল না, নারীর অপমান নির্যাতন ও সদ্যজাত শিশু হত্যার যুগই ছিল না, এককথায় তা ছিল মনুষ্যত্ব ও মানবতার চরমতম অবমাননা ও দুর্দিনের যুগ, গোটা মানবতাকে চিরতরে সমাধিস্থ করার এক কঠিন কলঙ্কময় যুগ। মনুষ্যত্ব চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সে যুগে এ দিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَكُنتُمۡ عَلَىٰ شَفَا حُفۡرَةٖ مِّنَ ٱلنَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنۡهَاۗ﴾ [ال عمران: ١٠٣] “আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩] এরূপ পরিস্থিতিতে বিশ্বনবীর আগমন সমাজে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছিল, তা স্বয়ং তাঁরই একটি কথায় স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৫৮ এএম says : 0
    সমস্ত মানুষকে মনুষ্যত্বের সুস্থ প্রকৃতিতে সুসংগঠিত ও উচ্চতর মর্যাদায় অধিষ্টিত করাই ছিল বিশ্বনবীর সাধনা। বস্তুত মানবতাই হচ্ছে নবী-রাসূলদের কর্মক্ষেত্র।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)

১৫ অক্টোবর, ২০২২
আরও পড়ুন