চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
পূর্ব প্রকাশিতের পর
হারামাঈন শরীফাঈনে আ’লা হযরত চর্চা
আ’লা হযরত সর্বপ্রথম ২৩ বৎসর বয়সে নিজ পিতা মাতার সাথে ১২৯৬ হি. (১৮৭৮খ্রি.) হজ্জে বায়তুল্লাহ ও যিয়ারতে মুস্তফার লক্ষ্যে হারামাঈন শরীফাঈনে গমন করেন। ১৩২৩ হি. (১৯০৫ খ্রি.) বড় ছাহেবজাদা হুজ্জাতুল ইসলাম মুফতি হামেদ রেযা খান কাদেরী (র.) কে সাথে নিয়ে হজ্জে বায়তুল্লাহ ও যিয়ারতে মুস্তফা সম্পন্ন করেন। এ বারে তিনি মক্কা শরীফে তিনমাস মদীনা মুনাওয়ারা শরীফে একত্রিশ দিন অবস্থানের সৌভাগ্য অর্জন করেন। এ সুদীর্ঘ সময় অবস্থানকালে সেখানকার আরব বিশ্বের খ্যাতিনামা ওলামায়ে কেরাম তাঁকে প্রাণঢালা অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। শরয়ী বিভিন্ন জটিল কঠিন বিষয়াদি ও আকাইদ সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আ’লা হযরত থেকে হাদীসের সনদ গ্রহণ করেন। আ’লা হযরতের প্রজ্ঞাপূর্ণ ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় তাঁরা মুগ্ধ হন। তাঁর ইলমী গভীরতা ও ফতোয়া প্রণয়নের দক্ষতায় তাঁরা বিস্মিত হন। কতিপয় পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে মানহানিকর, আপত্তিকর ধৃষ্টতাপূর্ণ ঈমান বিধ্বংসী বক্তব্য ও মন্তব্যের কারণে ইসলামি শরীয়তের আলোকে আ’লা হযরত “আল মুতামাদ আল মুস্তানাদ” ফাতওয়া গ্রন্থ রচনা করে তাদের প্রতি কুফুরি ফাতওয়া ব্যক্ত করেন, আ’লা হযরত প্রদত্ত এই ঐতিহাসিক ফাতওয়া হেরামাঈন শরীফাঈনের উচ্চ পর্যায়ের ওলামায়ে কেরামের সামনে পেশ করা হলে, ত্রিশের অধিক খ্যাতিসম্পন্ন উঁচুমানের বিজ্ঞ আলেম আ’লা হযরতের প্রদত্ত ফাতওয়ার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন এবং তাঁরা প্রত্যেকে লিখিতভাবে অভিমত প্রদান করেন। নবীদ্রোহী ওহাবী নজদীদের উত্তরসূরী দেওবন্দী বাতিলদের স্বরূপ উন্মোচনে আ’লা হযরতের সাহসী ভূমিকাকে তাঁরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। হেরামাঈন শরীফাঈনের ওলামায়ে কেরামের অভিমত সম্বলিত এ ফাতওয়া গ্রন্থটি ১৩২৪ হিজরী সনে “হুসসামুল হেরামাঈন আলা মানহারিল কুফুরি ওয়াল মায়ান” নামে প্রকাশিত হয়। যা ১৪১৭ হিজরী মোতাবিক ১৯৯৬ সনে ‘কুফর ও মিথ্যার গ্রীবাদেশে হেরামাঈন শরীফাঈন এর শাণিত তরবারী’ নামে অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল করিম নঈমী কাদেরী কর্তৃক অনূদিত ও প্রকাশিত হয়। আ’লা হযরত (রহ) মক্কা মুকাররমায় অবস্থানকালে প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন শায়খ আব্দুল্লাহ আবুল খায়র মিরদাদ (র.) অসংখ্যবার তাঁর সান্নিধ্য অর্জন করেন। ‘আদ্দৌলাতুল মাক্কিয়াহ’ প্রকাশকালে আ’লা হযরতের সাথে সম্পর্ক সূদৃঢ় হয়। একদিন শায়খ আব্দুল্লাহ মিরদাদ এবং শায়খ মুহাম্মদ আহমদ হামিদি আদাভী কাগজের নোট সম্পর্কে বারটি প্রশ্ন সম্বলিত আবেদন পেশ করেন তদুত্তরে আ’লা হযরত (র.) ‘কিফলুল ফকিহিল ফাহিম ফী আহকামি কিরতাসিদ দিরাহিম’ গ্রন্থ রচনা করেন।
শায়খ আল্লামা আবুল খায়ের বিন আব্দুল্লাহ মিরদাদ মসজিদে হেরেমের সম্মানিত খতিব এর অভিমত, নি:সন্দেহে তিনি (ইমাম আহমদ রেযা) বিজ্ঞ পণ্ডিত, যিনি স্বীয় নয়নের জ্যোতিতে জটিল কঠিন বিষয়াদি সমাধানে সক্ষম। আহমদ রেযা যিনি তাঁর নামের স্বার্থক বাহক, তাঁর কথামালা মুনিমুক্তা সদৃশ্য , তিনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়াবলীর আকর। তাঁর জ্ঞান প্রজ্ঞা সংরক্ষিত ভাণ্ডার হতে নির্বাচিত মারিফাতের সূর্য, যা দিবালোকের ন্যায় দীপ্তমান। যিনি জ্ঞানসমূহের জাহের-বাতেন উন্মোচনকারী। তাঁর সম্পর্কে যার অবগতি রয়েছে তার জন্য এ মন্তব্য করা উচিত যে, তিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য অনেক কিছু রেখে গেছেন। অতঃপর নিমোক্ত পংক্তি বর্ণনা করেন, “আল্লাহর জন্য কঠিন নয় যে, তিনি একজন ব্যক্তির মধ্যে সমগ্র পৃথিবী একত্রিত করে দিবেন।”
মক্কা মুকাররমার প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শায়খ সৈয়দ মুহাম্মদ আলভী মালেকী আ’লা হযরত সম্পর্কে নিম্নোক্ত অভিমত ব্যক্ত করনে-১৫
“আমরা তাঁকে তাঁর রচনাবলীর ও সংকলিত গ্রন্থাবলীর দ্বারা চিনতে পেরেছি। তাঁর প্রতি ভালবাসা সুন্নতের নিদর্শন। তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ বিদআতীর লক্ষণ।”
আরব বিশ্বের ওলামা কেরামের অভিমত সম্বলিত আ’লা হযরত প্রণীত কিতাবাদি যা অনাদিকাল আরব বিশ্বে সুন্নীয়তের আদর্শ ও শিক্ষার প্রসারে দিশারীর ভূমিকা পালন করবে।
তাজেদারে বেরলভী সুন্নি মুসলিম দুনিয়ার মহান ইমাম কলম সম্রাট এর ওফাত হয়েছিল ১৩৪০ হিজরিতে। ১৪৪৩ হিজরিতে এ মহান ইমামের ১০৩ তম ওফাত বার্ষিকী বৎসর। আসুন আমাদের সকল প্রকার হীনতা, ক্ষুদ্র মানসিকতা ও সংকীর্ণতা পরিহার করে বৃহত্তর সুন্নি ঐক্যের প্রতীক ও অনুকরণীয় মডেল ইমাম আ’লা হযরতের চিন্তা চেতনা, শিক্ষা ও আদর্শকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার শপথ নিতে হবে। সুচিন্তিত কর্মসূচি ও পরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জ্ঞান বিজ্ঞানের ইনসাইক্লোপিডিয়া আ’লা হযরতের জীবন দর্শনকে সুন্নীয়তের আদর্শবাহী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দরবার ও পীর মাশায়েখের খানকাসমূহে আ’লা হযরত চর্চার ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে জ্ঞান মেধা অর্থ ও শ্রম দিয়ে মাসলাকে আ’লা হযরত তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের খিদমত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
১.মাহনামা মারেফে রেযা, করাচি, ডিসেম্বর ২০১২খ্রি. পৃ.৪৫। ২. ছাহেবজাদা সৈয়দ ওয়াজাহাত রাসূল কাদেরী সম্পাদিত মারেফে রেযা সালনামা ২০০৯-এর ড. এজাজ আঞ্জুম কর্তৃক লিখিত প্রবন্ধ কানযুল ঈমান কী তারিখি হায়সিয়ত কা জায়েজাহ পৃ:১০৭, ১০৮,। ৩.মারেফে রেযা করাচি ২০০৪খ্রি.। ৪. মলফুযাতে আলা হযরত, মুফতিয়ে আজম হিন্দ, মুস্তফা রেযা খান মাকতাবা আল মাদানা, দিল্লী-পৃ.৩৪.। ৫.মাহনামা মারেফে রেযা সংখ্যা ডিসেম্বর-২০১২খ্রি. পৃ.৪৫। ৬.প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাসউদ আহমদ, ইমাম আহমদ রেযা আওর আলেমে ইসলাম, (করাচি ১৯৮৪) পৃ.১১৮। ৭.প্রাগুক্ত পৃ. ১১৭, ১১৮। ৮.প্রাগুক্ত পৃ. ১৪৬। ৯.তাজুশ শরীয়্যাহ-এর বংশ পরস্পরা নিন্মরূপ; মুহাম্মদ আখতর রেযা খাঁন কাদেরী আযহারী, বিন মুহাম্মদ ইবরাহীম রেযা খান কাদেরী, বিন মুহাম্মদ হামেদ রেযা খান কাদেরী, বিন ইমাম আহমদ রেযা খান কাদেরী বেরলভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তিনি ২৬ মুহাররম ১৩৬২ হি. মুতাবিক ২৩ নভেম্বর ১৯৪৩ খ্রি. সোমবার ভারতের ইউ.পি বেরেলী শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি র্জডান ভিত্তিক এক আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে বিশ্বের ৫০০ জন প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের ২২তম ইসলামী স্কলার হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত। বিগত ৬ জিলক্বদ ১৪৩৯ হি. শুক্রবার ৭৭ বৎসর বয়সে (২০ জুলাই ২০১৮) বেরেলী শরীফের নিজ বাস ভবনে ইন্তেকাল করেন। ভরতের প্রকাশিত পত্র পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁর নামাযে জানাযায় কোটির উপর মুসলমান অংশ গ্রহণ করেন। ১০. মুফতিয়ে আজম হিন্দ আওর উনকে খোলাফা পৃ.১০৫ খ. ১ম। ১১. প্রফেসর মুহিউদ্দিন আলওয়ায়ী “শখসিয়াতে ইসলামিয়া মিনাল হিন্দ মাওলানা আহমদ রেযা খান, মাসিক সওতুশ শারক, কায়রো, ১৯৭০ খ্রি. ফেব্রুয়ারি সংখ্যা, পৃ.১৬,১৭। ১২. মজাল্লা ইমাম আহমদ রেযা কনফারেন্স, ১৯৯৮ করাচি। ১৩. মজাল্লা ইমাম আহমদ রেযা কনফারেন্স ২০০৩ করাচি, পৃ.৭১। ১৪. ড. ইকবাল আহমদ আখতার কাদেরী “ইমাম আহমদ রেযা আওর আলমী জামিয়াত, করাচি-১৯৯৮। ১৫. হুসামুল হেরামাঈন পৃ.১১৫।
লেখক : অধ্যক্ষ, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী), মধ্য-হালিশহর, বন্দর, চট্টগ্রাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।