বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামের উন্নয়নে আরও একটি মেগাপ্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। নগরীর কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু (চাক্তাই খালের মুখ) থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক (রিং রোড) নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যানজট ও পানিবদ্ধতা নিরসন, পর্যটনের বিকাশ, পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে।‘চিটাগাং আউটার রিং রোড দ্বিতীয় পর্যায়’ নামের এই প্রকল্পটির কাজ আগামী জুলাই মাসে শুরু হবে। সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি সড়কের পাশে থাকা ১২টি খালের মুখে জোয়ার প্রতিরোধক রেগুলেটর এবং পাম্প মেশিন স্থাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তা-খাতুনগঞ্জসহ নগরীর বিরাট এলাকার পানিবদ্ধতা হ্রাস পাবে, বন্ধ হয়ে জোয়ারের প্লাবন।
ক্রমবর্ধমান যানজট নিরসন ও নদী তীরবর্তি এলাকার উন্নয়ন এবং পর্যটন খাতের বিকাশে চট্টগ্রাম মহানগরীর চারপাশে বৃত্তাকারে একটি আউটার রিং রোড নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় এ সরকারের আমলে। তার আগে নগরীর অপ্রতুল অবকাঠামোগত অসুবিধাসমূহ চিহ্নিত করতে বিগত ২০০৬ সালে জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশান-জেবিআইসি একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। তাতে ট্রাঙ্ক রোড নেট-ওয়ার্কের আওয়তায় দুটি রিং রোড এবং মহানগরীর চারপাশে বৃত্তাকার সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে আরও ছয়টি রেডিয়েল রোড নির্মাণের প্রস্তাব দেয়।
এ প্রেক্ষাপটে আউটার রিং রোড প্রকল্পের কাজ শুরু হয় কয়েক বছর আগে। ইতোমধ্যে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত মহানগরীর আউটার রিং রোডের কাজ চলছে। ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত চিটাগাং বাইপাসের নির্মাণকাজও এগিয়ে চলছে। বায়েজিদ থেকে অক্সিজেন এবং অক্সিজেন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়ক ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। এটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়।
সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন এই বৃত্তাকার সড়কটি শুধু সড়ক হিসেবে নয়, একই সাথে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। এই রাস্তার ফলে নদীর পাড়সহ সন্নিহিত পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে। আউটার রিং রোড প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের ভিতরে প্রবেশ না করেই দক্ষিণ বা উত্তর চট্টগ্রামের যানবাহন সমূহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবে।
এ প্রকল্পের আওতায় কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু বা চাক্তাই খালের মুখ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হবে। চাক্তাই খালের মুখ থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত রাস্তা রয়েছে। বারিক বিল্ডিং থেকে বন্দর এবং নৌবাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রাস্তার উন্নয়ন করেছে। ফলে নগরীর চারদিকে একটি বৃত্তাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার গাড়িগুলো শহরে প্রবেশ না করে টানেল হয়ে পতেঙ্গা থেকে আউটার রিং রোড ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলে যাবে।
একইভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে আসা রাঙামাটির কোনো গাড়ি ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ হয়ে অক্সিজেন কিংবা কাপ্তাই রাস্তার মাথা হয়ে শাহ আমানত সেতুতে পৌঁছতে পারবে। শহরে প্রয়োজন নেই এমন গাড়িগুলো শহরে প্রবেশ না করেই যাতায়াত করতে পারবে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যানজটের বহুলাংশে অবসান হবে।
আউটার রিং রোডের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি তৈরি করার সময় পানিবদ্ধতার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চাক্তাই খালের মুখ থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তাটিতে ১২টি খাল রয়েছে। এসব খালের উপর ব্রিজ তৈরি করে রাস্তাটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে ব্রিজের সাথে প্রতিটি খালের মুখে জোয়ার প্রতিরোধক রেগুলেটর এবং পাম্প স্থাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে জোয়ারের সময় রেগুলেটর বন্ধ করে দিয়ে জনপদে সাগরের পানি আসা বন্ধ করা যাবে। আবার বৃষ্টির সময় পানি বেড়ে গেলে পাম্পের সাহায্যে পানি সাগরে ফেলা যাবে। স্বাভাবিক সময়ে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার পানি খালে আসা-যাওয়া করবে।
সিডিএর কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কালুরঘাট ব্রিজ থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত কোন বাঁধ বা রেগুলেটর না থাকায় জোয়ার এবং অতিবৃষ্টিতে নদীর তীর ডুবে আশপাশের এলাকা বিশেষ করে বাকলিয়া, কল্পোলোক আবাসিক এলাকা, কালামিয়া বাজার, কালুরঘাট শিল্প এলাকা, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়াও জোয়ারের সময় চাক্তাই খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করে নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই, খাতুগঞ্জ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এত প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। এসব এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা হুমকির মুখে পড়েছে।
জেবিআইসি কর্র্তৃক প্রণীত সমীক্ষা অনুযায়ী বাঁধের (সড়ক) উচ্চতা ও প্রশস্ততা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যমান ১২টি খালের মুখে পানি প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করতে ১২টি বিভিন্ন সাইজের রেগুলেটর নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এতে করে বৃষ্টির সময় জোয়ারের পানি বন্ধ করার মাধ্যমে নগরীর চাক্তাই, বক্সিরহাট, বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও এবং মোহরার কিছু অংশকে পানিবদ্ধতা থেকে রক্ষা করা যাবে। সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটির তলা ২৫০ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪ ফুট উঁচু করে ৮০ ফুট প্রশস্ত চার লেনের রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৭৮ কোটি টাকা। এই টাকার পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে দেয়া হবে।
সিডিএর প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী-দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা, বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, নগরীর ক্রমবর্ধমান যানজট হ্রাস করা এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে জন্য নগরীর অবকাঠামো উন্নয়ন আবশ্যক। এই লক্ষ্যে একের এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।