পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এখনও বর্ষা আসেনি। অথচ বৃষ্টি আর জোয়ারে ডুবছে চট্টগ্রাম। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। দোকান-পাট, গুদাম-আড়ত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি প্লাবিত হয়ে শত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বিধ্বস্ত হচ্ছে সড়ক অবকাঠামো। জনদুর্ভোগেরও শেষ নেই। চট্টগ্রামবাসীকে পানিবন্ধতা থেকে মুুক্তি দিতে নেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর এ প্রকল্পের কাজ ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১৬শ’ ৬১ কোটি টাকা। সিডিএর উদ্যোগে দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকার আরো একটি প্রকল্পে ৯শ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে নগরীর খাল-নালা সংস্কারে ব্যয় হয়েছে ৩২৪ কোটি টাকা।
এতো প্রকল্প এবং অর্থ ব্যয়ের পরও পানিবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না। দিনে দিনে এ সঙ্কট আরো বাড়ছে। নতুন নতুন এলাকা ডুবছে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগরায়ন, বেপরোয়া খাল-নালা-ছরা ভরাট, দখল এবং উন্নয়ন ও সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এমন নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আসন্ন বর্ষায় নগরবাসীকে ভয়াবহ পানিবদ্ধতার কবলে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
বর্ষার শুরুতে মহানগরী ডুবে যাওয়ায় সর্বশেষ সরকারের নেয়া মেগা প্রকল্পের সুফল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু যথাসময়ে অর্থ ছাড় না করায় প্রকল্পে গতি আসছে না। ছয় হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হলেও এখনও পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র এক হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। এতে প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। কাজ পড়ে থাকায় এর সুফল মিলছে না। বরং কোন কোন এলাকায় উল্টো ফল পাওয়া যাচ্ছে। সিডিএর কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও বরাদ্দের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
এ অবস্থায় মহানগরীতে পানিবদ্ধতার সঙ্কট আরও তীব্র হচ্ছে। ঈদের দিন মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে যায় মহানগরীর অনেক এলাকা। এরপর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে প্রবল জোয়ারে কড়া রোদেও পানিতে ডুবেছে মহানগরী। নতুন নতুন এলাকায় জোয়ারের পানি উঠছে। সর্বশেষ রোববার কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। মহানগরীর প্রধান সড়কের আগ্রাবাদ-বারিক বিল্ডিং থেকে বাদামতল, ষোলশহর ২নং গেইট হয়ে মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট অংশ রীতিমত নদীর রূপ ধারণ করে। ফ্লাইওভারের নিচে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে যায় বন্দরনগরীর প্রধান সড়ক। এছাড়া নগরীর বেশিরভাগ এলাকা পানিবদ্ধতা হয়। বর্ষার আগেই এমন দুর্ভোগে শঙ্কিত নগরবাসী।
মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী নিজেও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। গতকাল তিনি ইনকিলাবকে বলেন, এখনও বর্ষা আসেনি। অথচ সামান্য বৃষ্টিতেই নগরী ডুবে যাচ্ছে। তিনি এজন্য চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করেন। মেয়র বলেন, বড় বড় খালের মুখে বাঁধ দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও খালের বুকে রাস্তা বানানো হয়েছে। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার পানি যেসব খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে সেসব খালের মুখে বাঁধ দেয়ায় পানি সরতে পারছে না। এতে সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে নগরী। জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে। তিনি আবারও এসব খাল থেকে দ্রুত বাঁধ এবং রাস্তা অপসারণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি খালের পানি ১২টি খাল দিয়ে সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পড়ে। অথচ এসব খালেই বাঁধ দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে সিটি কর্পোরেশন নালা-নর্দমা, খাল পরিষ্কার করেও কোন সুফল পাচ্ছে না।
তবে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, মেগা প্রকল্পের সুফল মিলছে। নগরীতে পানিবদ্ধতা হলেও আগের মত তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে। খুব শিগগির নগরবাসী এর সুফল পাবে। তবে এজন্য সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেডের লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন, এ মেগা প্রকল্পের কারণে পানিবদ্ধতার সঙ্কট কমে আসছে। আগের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে পানি সরে যাচ্ছে। এটাই এ প্রকল্পের বড় সাফল্য। খাল থেকে বাঁধ সরানো হয়েছে। এখন দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে। বৃষ্টি একটু কমলে খালে তৈরি অস্থায়ী রাস্তাও সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানান তিনি। প্রকল্পের কাজ ৫০ শতাংশ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাকি কাজ হলেও শতভাগ সফল মিলবে। প্রকল্প ব্যয় পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ১৬শ ৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত অর্থ ছাড় করতে আমরা বারবার সিডিএকে অনুরোধ করছি।
এদিকে চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প নামে ২৩শ ১০ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব দাশ জানান, এ পর্যন্ত প্রকল্পে ৯শ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব রেগুলেটর চালু হলে নগরীতে জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকানো সহজ হবে। ফলে পানিবদ্ধতা সঙ্কটের সমাধান হবে। তবে টাকা বরাদ্দ কম হওয়ায় প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেপরোয়া পাহাড় নিধন এবং পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহারে দ্রুত মহানগরীর খাল-নালা সেইসাথে কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ কারণে সামান্য জোয়ার আর বৃষ্টিতে মহানগরীতে পানিবদ্ধতা হচ্ছে। সঙ্কট নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি পাহাড় নিধন ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ এবং সেইসাথে কর্ণফুলীর নাব্যতা ফেরাতে নিয়মিত ড্রেজিং জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।