Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভোটারদের আকর্ষণে পদ্মাসেতুতে রেলসহ মেগাপ্রকল্পে বরাদ্দ ৩০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৮, ৯:০৬ পিএম

বছর শেষে সম্ভাব্য নির্বাচন সামনে রেখে ভোটার আকর্ষণে অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলো বিশেষ বরাদ্দ পাচ্ছে। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অবকাঠামোর আট বড় প্রকল্পে ৩০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে একক প্রকল্প হিসেবে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র পাচ্ছে ১১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রো রেল নির্মাণ, মাতার বাড়ি কয়লা বিদ্যুত, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ও রামু থেকে ঘুনধুম সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ ও পায়রা বন্দর প্রকল্প।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক ১০টি বৃহৎ প্রকল্পকে মেগাপ্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরদারিতে আনা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণের জন্য ‘ফাস্ট ট্র্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি’ নামে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্য গঠন করা হয়েছে ‘ফাস্ট ট্র্যাক টাস্কফোর্স’।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের আগে আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে ছয় মাস সময় পাচ্ছে সরকার। এ সময়ে বাড়তি অর্থ দিয়ে প্রতিশ্রুত মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান করার চেষ্টা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ, মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পগুলোতে বড় অংকের বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
আগামী অর্থবছর একক প্রকল্প হিসেবে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৯৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে। চলতি অর্থবছর এতে বরাদ্দ আছে ৮ হাজার ৯০৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছর প্রকল্পটিতে বরাদ্দ বাড়ছে ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকার প্রকল্পটিতে ফব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হলে একই সঙ্গে গাড়ি ও রেল পারাপারের ঘোষণা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। বিষয়টি বিবেচনায় আগামী অর্থবছর পদ্মা রেল সংযেযাগ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে স্বপ্নের ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে আগামী এডিপিতে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতো মধ্যেই সেতুটির ৪ টি পিলারের উপর তিনটি স্প্যন স্থাপনের মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হয়েছে। ভোটের আগে বেশ কয়েকটি স্প্যান বসানো মাধ্যমে বড় অংশ দৃষ্টিগোছর করার চিন্তা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। মেট্রোরেল দৃশ্যমান করতে কাজ চলছে বেশ জোরো শোরেই। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলেপমেন্ট শীর্ষক এ প্রকল্পে আগামী অর্থবছর বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৯০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা টাকার এ প্রকল্পে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিভূত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের কাজ শেষ করার কথা ২০১৯ সালে।
চট্টগামের দুই অংশের যোগাযোগ সুগম করতে দেশের প্রথম ট্যানেল নির্মানের কাজ চলমান আছে। এ লক্ষ্যে নেয়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক ট্যানেল নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর প্রকল্পটির আওতায় বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৮৯৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রায় ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার এ প্রকল্পে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। রেল অবকাঠামোর অন্যতম প্রকল্প চট্টগ্রাম শেকে কক্সবাজার ও রামু হয়ে মায়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে নেয়া প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে এ বছর বরাদ্দ ছিল ১ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে আগামী বছর বরাদ্দ বাড়ছে ৪৫০ কোটি টাকা।
মাতারবাড়ি ২৬০০ মে.ও. আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হবে ২ হাজার ১৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর মাতারবাড়ি প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এতে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদির উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ থাকছে ৫০০ কোটি টাকা। ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটিতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬১০ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৫৫২ কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ