পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আ‘লীগের এমপিদের প্রতি জয়
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সরকারবিরোধী অপপ্রচারের জবাব দিতে নিজেদের প্রচার চালানোর জন্য আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কাজ করলে মানুষ ভোট দেবে- এ কথা ভেবে এখন ঘরে বসে থাকলে চলবে না। বাস্তব কথা, এখন প্রচারের যুগ। নিজেদের ভালো কাজের প্রচারের মাধ্যমে অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের জন্য কাজ করছি। এসব যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা তুলে ধরতে পারি, তাহলে কেবল আজকের ভোটাররা নয়, ভবিষ্যতের ভোটাররাও আওয়ামী লীগের ভোটার হয়ে থাকবে।
গতকাল রোববার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের নতুন নির্বাচনী কার্যালয়ে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা’ শীর্ষক তিনদিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ আয়োজিত এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আর সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পুরো কর্মশালায় সহযোগিতা দিচ্ছে আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (সিআরআই)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, পঁচাত্তরের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও এই অপ্রপচার দেখেছি। এতো কাজ করার পরও সরকারকে অপপ্রচার সহ্য করতে হয়। সুতরাং কেবল কাজ করলে হবে না। এই অপপ্রচার মোকাবেলার জন্য আমাদেরও প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। মানুষের জন্য কী কাজ করা হয়েছে তার প্রচার করতে হবে। মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে আমরা তাদের জন্য কী কাজ করছি, আওয়ামী লীগ কী করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতা নিয়ে তরুণ প্রজন্মকেও কাছে টানার আহ্বান জানিয়ে জয় বলেন, কেবল মানুষের কাছে শুনেই নয়, আমরা জরিপ করেও যেটা দেখি- আমাদের তরুণরা আর খবরের কাগজ খুব একটা পড়ে না। এটা অবশ্য একদিক দিয়ে আমাদের জন্য ভালো। কেননা খবরের কাগজে আমাদের ‘সুশীল বাবুদের’ মতামতই কেবল দেখা যায়। তো লাইকলি আমাদের তরুণরা ওসব পড়েই না, ওসব পাত্তা দেয় না। তরুণরা টিভি দেখে। তবে সবচেয়ে বেশি খবর তারা পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই তারা বেশি অংশগ্রহণ করে। সে কারণেই কিন্তু আমাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, আমরা দেশের জন্য কাজ তো করছি। এসব যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা তুলে ধরতে পারি, তাহলে কেবল আজকের ভোটাররা নয়, ভবিষ্যতের ভোটাররাও আওয়ামী লীগের ভোটার হয়ে থাকবে।
দলের সিনিয়র নেতা ও সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয় বলেন, সিনিয়ররা অনেকে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা করতে চান না। সৎ মানুষ নিজেদের ঢোল কিংবা প্রচার-প্রচারণা করতে লজ্জা পান। তবে লজ্জা পেলে হবে না, প্রচার করতে হবে।
প্রতিদিন সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পারলে রোজ একটা করে পোস্ট দেবেন। দিনে দুই-তিনটা করেও দিতে পারেন। আমরা যেগুলো পোস্ট দেব, সেগুলো শেয়ার করেন। এগুলো কিন্তু ভাইরাল হয়ে যায়। আর একাউন্ট কীভাবে ভেরিফায়েড করাতে হয়- তা এমপিদের শিখিয়ে দেয়া হবে। তখন ওই একাউন্ট তাদের অফিশিয়াল একাউন্ট হয়ে যাবে। মানুষের কাছে আমাদের যা বলার, আমাদের পরিশ্রম এবং আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মোকাবেলা- এটা আমরা আরও বেশি মানুষের কাছে, আরও বেশি তরুণদের কাছে পৌঁছে দিতে পারব এভাবে।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘জানি, টেকনোলজি ব্যবহার করাটা অনেকের জন্য মাঝেমধ্যে একটু কঠিন হয়। আপনারা চেষ্টা করবেন, আপনাদের যতটুকু সম্ভব আমরা সহযোগিতা করব। আর আপনারা যদি কমফোর্টেবল ফিল না করেন, যদি তা-ও সাহস না পান, আমি অনুরোধ করব, একজন পিএস দিয়ে দেন, যার কাজ থাকবে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘যারা যারা জুনিয়র, তারা কিন্তু এটাতে অভ্যস্ত। আমার চেয়েও বেশি ওস্তাদ। পলকের (তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী) সঙ্গে তো পারিই না। ও দিনে যে পরিমাণ ফেসবুকে পোষ্ট দেয়, ওর সঙ্গে কেউ কুলিয়ে উঠতে পারে না।’
চলমান পদ্মা সেতু নির্মাণযজ্ঞ দেখতে যাবেন জানিয়ে জয় বলেন, কেবল কাজ করলে হবে না, মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে- আমরা তাদের জন্য কী করছি। বিদ্যুৎকেন্দ্র নিজে নিজে নির্মিত হয় না, পদ্মা সেতুও এমনিতেই তৈরি হয়ে যায় না। এগুলো বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তে হচ্ছে। আমরা এর টাকা যোগাড় করে দিয়েছি। আমাদের সেতুমন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে একটু আগে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘তুমি একদিন পদ্মা সেতুর কাজ দেখতে আসো।’ যাবো, অবশ্যই যাবো।
কর্মশালার উদ্বোধন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির ‘ভিশন-২০৩০’- ঘোষণার উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেন, আমাদের ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১-এর দেখাদেখি অন্যরাও (বিএনপি) না-কি ভিশন ঘোষণা করবে। এটা লোকদেখানো, জনগণের সঙ্গে ভাওতাবাজি। তাদের লক্ষ্য হাওয়া ভবনের মতো ‘খাওয়া ভবন’-এর আরেকটি ভিশন। আওয়ামী লীগ কিছু করলেই তার দেখাদেখি তাদেরও কিছু করতে হবে! এটি রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি।
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি করে সক্রিয় হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশে নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। তাকে ঘিরে আমাদের হাওয়া ভবন, খাওয়া ভবন কিংবা খোয়াব ভবন নাই। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। বিএনপি সজীব ওয়াজেদ জয়কে ভয় পায়।
প্রথম দিনের কর্মশালায় আওয়ামী লীগ দলীয় ৬০ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার দু’দিনের কর্মশালায় আরও একশ’জন সংসদ সদস্যের অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
এখনই নির্বাচনমুখী হতে আ’লীগ নেতাদের পরামর্শ জয়ের
সজীব ওয়াজেদ জয় পরে ধানমন্ডির কার্যালয়ের সভাপতির আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। প্রায় এক ঘণ্টার এই বৈঠকে জয় দলীয় নেতাদের এখন থেকেই নির্বাচনমুখী ও আগামী নির্বাচনে দলের জয় সুনিশ্চিত করতে কাজে নেমে পড়ার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন দল ও দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ নেতাদের এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য কাজে নেমে পড়তে হবে। দলীয় সংসদ সদস্যদের এলাকায় গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের জন্য কাজ করতে হবে।
জয় বলেন, দেশে আর কোনো অবস্থায়ই অনির্বাচিত কোনো সরকারের ক্ষমতায় আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
এই বৈঠকে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মাহবুবউল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আবদুস সাত্তার, দেলোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, এসএম কামাল হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ এক থাকলে তাদের কেউ হারাতে পারবে না। দেশে যে উন্নয়ন চলছে, তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় একটি দলই দীর্ঘদিন সরকারে থাকায়, এসব দেশের বিপুল উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আর সেজন্য বাংলাদেশে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি কখনো গণতন্ত্রের রাজনীতি করেনি। এরা ফের ক্ষমতায় এলে অতীতের মত গুম খুন, ধর্ষণ ও জঙ্গিবাদ আবারও ফিরে আসবে। সেজন্যই নৌকার বিজয়, আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি চালুর পক্ষে মত দিয়ে জয় বলেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ বন্ধ হবে। কেউ ব্যালট ছিনতাই ও কারচুপি করতে পারবে না। সার্বিকভাবে নির্বাচন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা আসবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের ইভিএম পদ্ধতির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার আহ্বানও জানান।
আগামী ২০ মে জেলা নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকার জন্য ওবায়দুল কাদেরের আহ্বানের জবাবে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তিনি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। দলের কর্মী হিসেবেই কাজ করবেন তিনি। তরুণ ও নারী ভোটারদের আওয়ামী লীগের পক্ষে টানতে মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান সজীব ওয়াজেদ জয়।
বৈঠকে সংসদ সদস্যদের জন্য আয়োজিত কর্মশালা দলের নেতাকর্মীদের জন্যও আয়োজনের পরামর্শ দেন সজীব ওয়াজেদ জয়। এছাড়া দলের পক্ষে নেয়া নেতাকর্মীদের ডাটাবেইজ কার্যক্রম শেষ করা এবং এজন্য জেলা নেতাদের রেজিস্ট্রেশন ও ই-মেইল আইডি তৈরিসহ অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণের ওপর জোর দেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।