পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষভাগে নভেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তার আগে ইসি নির্বাচনী আইন সংস্কারসহ নানা বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে। এতে ভোটের আয়োজনের আগেই অগ্নি পরীক্ষায় পড়ে গেছে ইসি। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে তারা সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করবেন; নাকি আইন সংস্কারের মাধ্যমে আমলাদের প্রার্থী হওয়ার বাধা দূর করবেন? সর্বত্রই উঠেছে এ প্রশ্ন।
আমলারা সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েই যাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন সে বাঁধা দূর করতে আরপিও সংশোধনের চেষ্টায় দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। সাবেক আমলা কে এম নুরুল হুদার নের্তৃত্বাধীন ইসি আমলাদের এই দৌঁড়ঝাপের চাপে আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে ‘সরকারি চাকরি ছেড়েই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ’ করে দেবেন; নাকি সব ধরণের চাপ উপেক্ষা করবেন? ইসির এ সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যত। যে আমলারা ‘আরপিও’ সংশোধনের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা প্রশাসনে এতোই প্রভাবশালী যে অনেক মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীকে তারা পাত্তা দেন না। আর আমলাদের মিশন সফল হয়নি এমন নজীর সম্প্রতি সময়ে দেখা যায়নি।
জানা গেছে প্রধানমন্ত্রীর একজন সাবেক মূখ্যসচিবসহ কয়েকজন আমলা আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগ) প্রার্থী হওয়ার আখাঙ্কা থেকেই আরপিও সংশোধনে ইসিতে গিয়ে কলকাঠি নাড়ছেন। গত কয়েক বছরে তারা যে মিশন নিয়ে নেমেছেন তার সবগুলোতেই সফল হয়েছেন। যার কারণে বর্তমান প্রশাসন কার্যত হয়ে পড়েছে আমলার উপর নির্ভরশীল। যদি আরপিও সংশোধন করে আমলাদের প্রার্থী হওয়ার ‘৩ বছরের বাধা’ দূর হয়; তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, অর্ধশত এমপি এবং কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার কপাল পুঁড়বে। তাদের আসনে নৌকা প্রতীকে ওই আমলারা প্রার্থী হওয়ার রোডম্যাপ এঁকেই আরপিও সংশোধনের মিশনে নেমেছেন। বর্তমান ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুলাইয়ে আইন-বিধির সংশোধনী আনতে পরিকল্পনা গ্রহণ; আগস্টে প্রস্তাবিত আইন ও বিধির খসড়া প্রণয়ন; আলোচনার জন্যে চূড়ান্তকরণ এবং আইন সংস্কার নিয়ে অংশীজন তথা রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে এজেন্ডা তৈরি ও সময়সূচি নির্ধারণের কর্মপরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমান প্রশাসনে উচ্চপদে কর্মরত কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আমলা সরকারি ‘চাকরির রুল’ উপেক্ষা করে প্রশাসনে দলীয়করণে মহাব্যস্ত। তারা সরকারি অফিসকে করে ফেলেছেন দলীয় কার্যালয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকার বেতনভুক্ত ওই আমলারা সরকারের নীতি নির্ধারকদের দেখাচ্ছেন তারা খাঁটি আওয়ামী লীগ প্রেমী। আওয়ামী লীগে তারা হাইব্রিড, কাউয়া নন। এদের মধ্যে কেউ চাকরি রক্ষা, প্রমোশন এবং নৈতিক-অনৈতিক সুবিধা নেয়ার লক্ষ্যে হঠাৎ ‘আওয়ামী লীগার’ হন। আবার কেউ আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে দলীয় নমিনেশন টার্গেট করেন। এদের কয়েকজন ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে চাকরিজীবীদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে ‘৩ বছর’ বাধা দূর করতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক আমলা নিজ নিজ এলাকায় প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করছেন আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার প্রত্যশা থেকে। তাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত এবং যোগ্য অনেক নেতা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। তৃণমূলের নেতাদের কারো কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তুলে শীর্ষ নের্তৃত্বের কান ভারী করা হচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের জেলা উপজেলা পর্যায়ের অনেক প্রভাবশালী নেতা আমলাদের প্রভাবে দলীয় কর্মকান্ডে কোনঠাসা। ‘আমরাই দলকে ক্ষমতায় এনেছি’ এমন বক্তব্য দিয়ে সরকারি চাকরির পাশাপাশি তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেস্টা করছেন।
ড. ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের শাসনামলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদার নের্তৃত্বাধীন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসিকে শক্তিশালী করতে বেশ কিছু আইন প্রণয়ন ও সংস্কার করেন। সে আইনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনে কোনো নিবন্ধিত দলের প্রার্থী হতে হলে কমপক্ষ্যে ৩ বছর আগে ওই দলের সদস্য হওয়ার বাধ্যতামূলক করা হয়। আবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদে এক উপধার বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি থেকে অবসর বা অপসারণের ৩ বছর পার না হলে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না। সশস্ত্রবাহিনী বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক চাকুরেদের ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য। আরপিও’র ওই ধারার কারণে আমলারা চাকরি ছাড়ার পর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বাধার মুখে পড়েন। আবার রাজনীতিকদের জন্য দল বদল করে প্রার্থী হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত ৩ বছর ওই দলের সদস্য পদে থাকার বাধ্যবাধকতার শর্ত বিলোপ করে। কিন্তু আমলাদের চাকরির ছাড়ার ৩ বছর প্রার্থী হতে না পারার বাধ্যবাধকতা আরপিওতে রয়ে যায়। জানা গেছে ইতোমধ্যে কয়েকজন সাবেক এবং চাকরিরত প্রভাবশালী আমলা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও’র ১২ অনুচ্ছেদে (উপধারা এফওএইচ) বিলোপ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। সুত্রের দাবি আমলারা চান বিধানটির বিলোপ হোক। তাদের চাপেই এর আগেও এ ধরনের একটি বিধান মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করে সংসদে পাঠানো হয়েছিল। অংশীজনরা বলছেন, ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আগে ইসি কোনো আলোচনা ছাড়াই দলীয় সদস্যপদের শর্ত শিথিল করায় নির্বাচনে ‘ডিগবাজ ও মনোনয়ন বাণিজ্য’ হয়েছে। একই পথ ধরে এখন আমলাদের প্রার্থী হওয়ার শর্ত শিথিল করা হলে ‘প্রশাসনের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ আরো বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক পরীক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন থেকে বঞ্ছিত হবেন। ওএসডিতে থাকা কোনো কোনো আমলা চাকরি ছেড়ে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ারও চেস্টা করবেন। এতে করে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বঞ্ছিত হবেন। আর সারাজীবন সরকারি চাকরি করে টাকা ও প্রভাব খাটিয়ে দলীয় নমিনেশন নিয়ে এমপি হয়ে আমলারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এমনিতেই বর্তমানে সংসদে দুই তৃতীয়াংশের বেশি সদস্য ব্যবসায়ী হওয়ায় রাজনীতিকরা সংখ্যালঘু; সেখানে আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে ‘৩ বছর প্রার্থী হতে না পারার বাধ্যবধকতা’ তুলে নেয়া হলে আমলারা বড় দলগুলোর প্রার্থী হওয়ার দিকে ঝুকে পড়বেন। এতে জাতীয় সংসদ ব্যবসায়ী ও আমলাদের নিয়ন্ত্রণে যাবে এবং জনপ্রতিনিধিত্বে রাজনীতিকরা বিরল হয়ে যেতে পারেন। যারা সারাজীবন রাজনীতিক করছেন তাদের জন্য অশনি সংকেত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।