পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : বিদেশি, অমুসলিম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের টার্গেট করে দেশে সম্প্রতি ইসলামের নাম ব্যবহার করে গুলশান, শোলাকিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা ও নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনাকে দেশ এবং মুসলিম জাতিসত্তার জন্যে ভয়াবহ অশনি সংকেত উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক দেশের শীর্ষ আলেম হেফাজত আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বেছে বেছে বিদেশি, অমুসলিম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের হত্যা করা, হত্যার হুমকি দেয়া, মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় হামলা প্রচেষ্টা চরম উদ্বেগজনক। সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পেছনে ইন্ধনদাতাদেরকে চিহ্নিত করা বা খুঁজে বের করা সবচেয়ে জরুরি। তিনি বলেন, শক্তিশালী কোনো পক্ষের ইন্ধন ছাড়া বিচ্ছিন্ন গুটিকয়েক অপরাধীর পক্ষে এমন সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা অসম্ভব।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও জাতীয় ঐক্যকে বাধাগ্রস্ত ও ধ্বংস করার জন্যে বিভিন্ন অপশক্তি গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা এদেশ থেকে ইসলামকে উচ্ছেদ করে আধিপত্য ও শোষণের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই কাজে তারা কলেজ-ইউনিভার্সিটির উচ্চ শিক্ষিত ছাত্রসহ সরলমনা কিছু মুসলিম যুবককে আদর্শিকভাবে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যায় প্রভাবিত করে ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছে।
তিনি এ ব্যাপারে দেশের আলেম সমাজ, ইসলামী নেতৃবৃন্দ, মসজিদের ইমাম ও খতীবকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান ও শিক্ষার প্রচার-প্রসারে আরো জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, সৎ ও সরল চিন্তার প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনোভাবে ধর্মের প্রতি দুর্বল থাকে। কারণ, ধর্ম মানুষকে সৎ ও আদর্শবান হতে সাহায্য করে। আর দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ধর্মীয় শিক্ষার অনুপস্থিতির কারণে সাধারণ শিক্ষিত বিশাল ছাত্রসমাজ পরিপূর্ণ সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান থেকে দূরে থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শত্রুরা এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে। তারা সাধারণ শিক্ষিত তরুণদেরকে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করতে এ কারণে সক্ষম হচ্ছে। তিনি বলেন, ধর্মহীন শিক্ষানীতি এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নামে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জাতির জন্যে সন্ত্রাস ও কথিত জঙ্গিবাদের বিপর্যয় ডেকে আনছে।
হেফাজত আমীর সরকার ও প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশ থেকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকে নির্মূল করতে আপনারা যদি প্রকৃতই আন্তরিক হন, তবে মসজিদের ইমাম-খতীব ও মাহফিলসমূহ নজরদারি করার কথা বলে ভীতি তৈরি ও ধর্মীয় কর্মকা- সংকোচিত করার পরিবর্তে বরং আলেমদেরকে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে সহযোগিতা করুন। কারণ, সমাজের মানুষের মধ্যে সৎভাবে জীবন-যাপনের যে মানসিকতা ভেতর থেকে কাজ করে, সেটা এই ইমাম ও খতীবরাই তৈরি করে থাকেন, আপনাদের বাহিনী ও আইন নয়।
তিনি বলেন, মসজিদে খতীবগণকে নজরদারির কথা বলার মানেই হচ্ছে, সন্ত্রাস ও হত্যাকা-ের দায় ইসলামের উপর চাপানোর চেষ্টা। বাংলাদেশের উপর এখন সারা বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ। খতীব নজরদারির সংবাদে বিশ্ববাসীর কাছে এমন বার্তা যাবে যে, বাংলাদেশের লাখ লাখ মসজিদের খতীব জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণের কাজে জড়িত। সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ধরা পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আর নজরদারির কথা বলা হচ্ছে মসজিদের খতীব ও ওয়াজ মাহফিল। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে সন্ত্রাস দমনে সরকারের প্রকৃত সদিচ্ছা নিয়ে জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
হেফাজত আমীর বলেন, মাদরাসাসমূহে শুধু নামাজ-রোজা ও হজ-যাকাতের শিক্ষা দেয়া হয় না। বরং খোদাভীতি ও পরকালীন কঠোর শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন, দেশপ্রেম এবং আদর্শ ও নৈতিকতার প্রতি উদ্বুদ্ধকরণের শিক্ষা দেয়া হয়। যে কারণে বিগত কয়েক শত বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, কোনো ক্বওমি মাদ্রাসায় ছাত্র সংঘর্ষ, খুন-খারাবি ও ছাত্র-শিক্ষককে নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা বা দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে না। দেশে সংঘটিত অপরাধসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, উলামা-মাশায়েখ ও মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবিসহ অপরাধের মাত্রা দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রায় নেই বললেই চলে। দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে যে মাত্রার অপরাধের ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায়, তা মাদ্রাসায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
তিনি বলেন, এই যে সম্প্রতি ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে বেশকিছু বিদেশি অমুসলিম ব্যক্তিত্বকে হত্যার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হলো, ইসলামে এর বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি এসেছে। যেমন, অমুসলিমদের অধিকার ও নিরাপত্তা সম্পর্কে আমরা মাদরাসার ছাত্রদেরকে পড়িয়ে থাকি, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “মনে রেখ, যদি কোনো মুসলমান কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষে মামলা দায়ের করব”। (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নং- ৩০৫২)।
হেফাজত আমীর সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও কথিত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে উলামায়ে কেরামকে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে সহযোগিতা করার জন্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উলামায়ে কেরামকে হুমকি-ধমকি ও হয়রানি করা বন্ধ করে বরং তাঁদেরকে উদ্বুদ্ধ করুন। স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করুন। তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদেরকে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা শিখিয়ে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। কথায় কথায় উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতাকে কটাক্ষ ও হেয় করা, তাদের কাজে অন্যায় বাধা তৈরি করা, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ এবং আল্লাহ-রাসূল ও ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তির চর্চা কঠোরভাবে বন্ধ করুন।
আল্লামা শফী বলেন, কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- ও হুমকির ঘটনায় তদন্তের আগেই দোষারোপের রাজনীতি বন্ধ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধী ও মদদদাতাদের চিহ্নিত ও পাকড়াও করে বিচারের আওতায় আনতে সাহায্য করুন। একলা চলো নীতি পরিহার করে দ্রুত সংলাপ শুরুর মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনুন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, রাজনৈতিক বিবাদ ও অসন্তোষ জিইয়ে রেখে দেশে স্থিতিশীলতা কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যাবে? ক্ষমতাসীন দলেরই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যে উদ্যোগ নেয়ার দায়-দায়িত্ব সর্বাধিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।