মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ড. শেখ সালাহ্উদ্দিন আহ্মেদ
দ্রুত নগরায়ন, শিল্প ও আবাসন গড়ে ওঠায় কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি জমি ব্যবহৃত হচ্ছে নগরায়নে। শিল্প কারখানা ও নানারকম স্থাপনায় গত এক-দেড় দশকে এই চিত্র ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণায় এর নেতিবাচক দিক উঠে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা নগরায়ন, শিল্প কারখানা গড়ে ওঠাকে জাতীয় অর্থনীতির জন্য হুমকি বলে মনে করছেন। কৃষিবিদরাও একই অভিমত ব্যক্ত করে এর সঙ্গে শঙ্কার দিকটি তুলে ধরে বলছেন, দেশের কৃষি জমির এই অপব্যবহার কঠোরভাবে রোধ করতে না পারলে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে শুধু ধসই নামবে না- লাখ লাখ কৃষিজীবী বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে।
গত এক দশকে প্রতিবছর গড়ে ৬৮ হাজার ৭০০ হেক্টর ফসলি জমি কমেছে। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএস এইডের অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ১৯৭৬ সালে কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৫০ হেক্টর। ২০০০ সাল পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ৯০৯ হেক্টর কমে দাঁড়ায় ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৪১ হেক্টরে। কিন্তু পরবর্তী মাত্র ১০ বছরে ২০১০ সাল নাগাদ ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর কমে মোট কৃষি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৭ হেক্টর। ১৯৭৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে যে পরিমাণ কৃষি জমি কমেছে, পরের ১০ বছরে কমার পরিমাণ পাঁচ গুণ বেশি। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৮৫ ভাগ লোক কৃষিজীবী এবং কৃষিখাত আমাদের মোট কর্মসংস্থানের শতকরা ৭০ ভাগ যোগান দেয়। এছাড়াও কৃষি হচ্ছে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান উৎস। তদুপরি আমাদের এই ভূখন্ডটি বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলসমূহের অন্যতম। মাথাপিছু আমাদের জমির পরিমাণ এক একরের এক-তৃতীয়াংশ থেকেও কম। আবার ভূমিহীনতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ ভূমিহীন ও প্রায় ভূমিহীন। নদীর ভাঙন, শহর সম্প্রসারণ, শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠাসহ প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে আমাদের আবাদী জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ফলে চার দশক আগে আমাদের কৃষি জমির পরিমাণ যেখানে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ একর ছিল বর্তমানে তা এসে ২ কোটি ১৭ লাখ একরে দাঁড়িয়েছে। এই পরিমাণও নিম্নমুখী। পক্ষান্তরে গত চার দশকে আমাদের জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে এবং তাদের সাথে বেড়েছে খাদ্য চাহিদা। এই অবস্থায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ভবিষ্যৎ খাদ্য চাহিদা মিটানোর জন্য কৃষি জমি রক্ষা করা ছাড়া আমাদের সামনে দ্বিতীয় কোনও পথ নেই।
জাতিসংঘের সহায়তায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় বলা হয়েছে বছরে কৃষি জমি কমছে ৬৮ হাজার হেক্টর। এক দশক ধরেই এ পরিমাণ জমি হারাতে হচ্ছে নগরায়ন, শিল্প-কারখানা স্থাপন, আবাসন, সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন মেটাতে। অগ্রগতির ধারা চলতে থাকলে জমির ওপর চাপ আরও বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে চাল, আটা, সবজি, মাছ, ভোজ্যতেল, ফল প্রভৃতি পণ্যের চাহিদা। এগুলোর সঙ্গে সরাসরি কৃষির যোগ। জমির পরিমাণ ক্রমাগত কমতে থাকলে এসব কৃষি কিংবা কৃষিজাত পণ্যের জোগান বাড়বে কীভাবে? খাদ্য নিরাপত্তাই-বা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে?
বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্যশস্যে মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সংখ্যা বাড়তে থাকায় খাদ্যের চাহিদা বাড়তেই থাকবে। একই সঙ্গে বাড়তে থাকবে পুষ্টিকর নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা। এর জোগানের জন্যও ক্রমাগত চাপ পড়তে থাকবে জমির ওপর। কিন্তু শিল্প, অবকাঠামো ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতের জন্যও নতুন নতুন জমি চাই। তার জোগান দেওয়া সহজ কাজ নয়। এ প্রক্রিয়ায় সামাজিক সংঘাতের আশঙ্কাও থেকে যায়।
কৃষি জমি রক্ষা করতে আইনের বাস্তবায়ন অপরিহার্য। কৃষি খাত আমাদের বড় শক্তি। এ খাত কেবল মুখের গ্রাস জোগায় না, শিল্প ও রফতানি খাতের বিকাশেরও বড় উৎস। একই সঙ্গে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রতিও মনোযোগ বাড়াতে হবে। একই জমিতে চাই আরও বেশি ফলন এবং এ জন্য বিনিয়োগ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগানোর ওপরও সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে। জš§হার হ্রাসেও চাই আরও সচেতনতা সৃষ্টি, যাতে তৃণমূলেও এ উদ্যোগ যথাযথ সাফল্য খুঁজে পায়।
কৃষি জমি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এ মুহূর্তে মোটামুটিভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি জমি হ্রাসের পরিণতিতে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পেলে এ ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেবে। দেশের জনসংখ্যা যেখানে বেড়েই চলেছে সেখানে কৃষি জমি হ্রাস পেলে খাদ্য চাহিদা পূরণে সংকট হওয়ারই কথা। স্বাধীনতার পর গত চার দশকে কৃষি জমির পরিমাণ বিপুলভাবে হ্রাস পেলেও উন্নত চাষাবাদের কারণে এ সময়ে জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেলে সংকটের উদ্ভব হয়নি। তবে উন্নত প্রযুক্তির চাষাবাদ করেও এক পর্যায়ে শেষ রক্ষার উপায় থাকবে না। কৃষি জমি আরও হ্রাস পেলে তা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অশনি সংকেত হয়ে দেখা দেবে।
ষ লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।