পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : ইন্টারনেটের বিরূপ প্রভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে তরুণ সমাজ। মাদক ও পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি বাড়ছে। বাড়ছে পারিবারিক, সামাজিক ও যৌন সহিংসতা। বিটিআরসির তথ্যমতে, সারাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ২২ লাখের বেশি। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। এদের টার্গেট করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নগ্নতা। শারীরিক সম্পর্কের ভিডিওর সাইটও ছড়িয়ে আছে ইন্টারনেটজুড়ে। ইচ্ছা করলে যে কেউ সেগুলো দেখতে পারে। ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা কৌশলে অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সব মিলে ইন্টারনেটের এসব নেতিবাচক দিকে সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা। হাতের মুঠোয় মোবাইল ফোনে রগরগে দৃশ্য দেখে বিপথগামী হচ্ছে তারা। ঘটছে নানা বিপত্তি। যার ভুক্তভোগী অবিভাবকসহ স্বজনরা। সকলের অজান্তে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক মূল্যবান জীবন। কেউ কেউ বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। এমনকি দাম্পত্য জীবনেও বেপরোয়া হচ্ছে অনেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক ও সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এ এস এম আমানউল্যাহ এ প্রসঙ্গে গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ইন্টারনেটের কারণে এখন হেন দুষ্কর্ম নেই যা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের বিরূপ প্রভাবে তরুণ সমাজ ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তারা মাদক এবং পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। প্রবীণ এই সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে রাষ্ট্র যেমন উদাসীন, তেমনি অবিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকরাও উদাসীন। এই উদাসীনতার কারণে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, এখন আর সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। তার ভাষায়, ইন্টারনেটের বিরূপ প্রভাব এখন মহামারী পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। একমাত্র সরকারই পারে ইন্টারনেট প্রোভাইডার, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বসে এর সমাধান করতে।
ইন্টারনেটের বদৌলতে গোটা বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। এর প্রভাবে যেমন নানা ইতিবাচক কাজে এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। আশীর্বাদ না হয়ে ইন্টারনেট হচ্ছে অভিশাপ। ইন্টারনেটের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রসার বেড়েছে বাংলাদেশে। বিনোদনের জন্য ব্যবহারের ফেসবুকেও এখন ছড়ানো হচ্ছে অশ্লীলতা। উঠতি বয়সীদের টার্গেট করে নানা নগ্নতা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ফেসবুকে। ‘লাইভ’-এর নামে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে একশ্রেণির নারী নিজেদের শরীর প্রদর্শন করছে। নানা আপত্তিকর কথা বলে তারা ‘লাইক’ সংগ্রহ করছে। ভিউয়ার্স বাড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, ইন্টারনেটের বিভিন্ন চ্যানেলে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই সেসব ভিডিও ইন্টারনেটের গুণে হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোনেই দেখতে পারছে। ইন্টারনেট থেকে আয় করার জন্য ইউটিউব-এ অবাধে বিভিন্ন চ্যানেল ওপেন করা হচ্ছে। এসব চ্যানেলের বেশির ভাগই যৌনতানির্ভর। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তির অজান্তে ধারণ করা ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে এতে। এমনকি অশ্লীলতানির্ভর বিভিন্ন শর্ট ফিল্ম তৈরি করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ইন্টারনেটে। ইন্ডিয়ান গিলমা, এক্সভিডিওস, জাজ পট, রিয়েল ওম্যান, বাংলা গীতি, কাপুল রোমান্স, ফান অ্যান্ড ফুল মাস্তি, বিডি ম্যাংগ, রাফ সেক্স, জামেছ ডেনটন, ইন্ডিয়ান পাপা, ডিজিটাল ইন্টারটেইনমেন্টÑ এরকম নানা নামে-বেনামে বিভিন্ন চ্যানেল ছড়িয়ে আছে ইন্টারনেটে। কৌত‚হলবশত এসব চ্যানেল দেখতে গিয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছে তরুণ-তরুণীরা। রাত জেগে তারা এসব দেখে সকালে ঘুম থেকে উঠছে দেরি করে। সেদিনের মতো স্কুল বা কলেজে যাওয়া আর হচ্ছে না। এভাবে একদিন-দু’দিন করে এক সময় তারা অমনোযোগী হয়ে লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অবিভাবকরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে তারা সহিংস হয়ে উঠছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ এস এম আমানউল্যাহ বলেন, রাজধানীর ফার্মগেটের কয়েকটা দোকানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার পর্নোগ্রাফি ডাউনলোড করে স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থীরা। এটা দেখার যেন কেউ নেই। যারা এই ভিডিওগুলো ডাউনলোড করছে তারা তো আমাদেরই সন্তান। কিন্তু যারা ভিডিওগুলো বিক্রি করছে তাদের কেন নিবৃত করা যাচ্ছে না? তিনি বলেন, আমাদের আইসিটি সম্পর্কিত আইনকে আরো বাস্তবমুখী ও শক্তিশালী করতে হবে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের ব্যবহারে আইন করতে হবে। আমেরিকা, কানাডার মতো দেশেও ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের মতো স্বাধীনতা নেই। সেখানে ১৮ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তি ফেসবুক আইডি খুলতে পারে না। স্কুলের শিশুরা মোবাইল ফোন সঙ্গে নিতে পারে না। তাদের বাসার ইন্টারনেটে ফিল্টার বসানো থাকে। প্রোভাইডার কোম্পানিগুলো গেটওয়ের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের দেশে এর কোনোটাই মানা হয় না। বরং দিন দিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়াতেই আমরা যেন মহা খুশি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইন্টারনেটে বিরূপ প্রভাবের কারণে মেয়েরা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্ত। তার ভাষায়, মেয়ে হয়ে এখন টয়লেটে যেতেও ভয় পাই। কারণ কে কোথায় গোপন ক্যামেরা ফিট করে রাখে তার খবর কে জানে। ওই ছাত্রী বলেন, ইদানীং গোপন ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছাড়ার প্রবণতা থেকেই মেয়েদের মধ্যে এমন ভীতির আশঙ্কা জেগেছে। প্রায়ই ইন্টারনেটে বিভিন্ন অশ্লীল দৃশ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এরকম একটি ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে বারবার ধর্ষণ করার ঘটনাও ঘটেছে। টাঙ্গাইলের কালিহাতির মহেলা রাবেয়া সিরাজ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী এমনি ঘটনার শিকার। গত ৩১ মার্চ সুমি আক্তার নামের ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে সবাইকে ইন্টারনেটের বিরূপ প্রভাবের ফলাফল জানিয়ে দিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সিনেমা ও নাট্য জগতে এরকম ঘটনা সবারই জানা। এক টিভি অভিনেত্রীর একটি অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। যে কারণে ঘর ভাঙাসহ নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে ওই অভিনয় শিল্পীকে। এরকম আরো অনেক ঘটনাই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তথা তাদের অবিভাবকদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।