Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নির্বাচনের দৌড়ে এক ডজন আমলা

প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রায় এক ডজন আমলা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর আমলাদের প্রার্থীতা নিশ্চিত করতেই এবার গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) ১২ অনুচ্ছেদে সংশোধন হচ্ছে। এ সম্পর্কিত সংশোধনীর বিষয়ে আগামী ১৪ মে নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে আলোচনা হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর বা পদত্যাগের পর তিন বছর পার করার বিধানটি বিলোপ করার প্রস্তাব নিয়ে জোর তৎপরতা শুরু করেছে নিবাচন কমিশন।
ভোটের আগে দল বদলের পথ খুলে দেয়ার পর এবার আমলাদের ভোটে দাঁড়ানোর পথ সহজ করতেই এ তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন সাবেক আমলা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তার আগে আইন সংস্কারসহ নানা বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে ইসি।
ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, আগামী ১৪ তারিখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদের বিষয় নিয়ে আমাদের বৈঠক রয়েছে। সেখানে কি হবে তারপরে কমিশন সচিবালয় সিদ্ধান্ত নিবে। তিনি জানান, জুলাইয়ে আইন-বিধির সংশোধনী আনতে পরিকল্পনা গ্রহণ,আগাস্টে প্রস্তাবিত আইন ও বিধির খসড়া প্রণয়ন, আলোচনার জন্যে চূড়ান্তকরণ এবং আইন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনার জন্য সেপ্টেম্বরে এজেন্ডা তৈরি ও সময়সূচি নির্ধারণের জন্য নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনা চ’ড়ান্ত করা হচ্ছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে,আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আইন সংস্কারের এ আলোচনা উঠে এসেছে। জাতীয় নির্বাচনে কোনো দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত তিন বছর ওই দলের সদস্য পদে থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল এক সময়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আগে ওই শর্ত বিলোপ করা হয়। আর এবার প্রার্থী হতে সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর বা পদত্যাগের পর তিন বছর পার করার বিধানটি বিলোপ করার প্রস্তাব নিয়ে কাজ শুরু করেছে কমিশন। আগামী জুলাইয়ে আইন-বিধির সংশোধনী আনতে পরিকল্পনা গ্রহণ, অগাস্টে প্রস্তাবিত আইন ও বিধির খসড়া প্রণয়ন, আলোচনার জন্যে চূড়ান্তকরণ এবং আইন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনার জন্য সেপ্টেম্বরে এজেন্ডা তৈরি ও সময়সূচি নির্ধারণের কর্মপরিকল্পনায় শুরু হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদে (উপ ধারা এফ ও এইচ) বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি  থেকে অবসর বা অপসারণের তিন বছর পার না হলে প্রার্থী হওয়া যাবে না। সশস্ত্রবাহিনী বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক চাকুরেদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য।
যেসব সরকারি আমলা আগামী এককাদশ সংসদে নির্বাচন করার জন্য সরকারি দলে যোগাযোগ করছেন তারা হলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব হুমায়ণ খালিদ,সাবে স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন, সাবেক সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব আমির হোসেন, সাবেক কৃষি সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ, সমাজকল্যাণ সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব এম এ কাদের সরকার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মো. আবুল কালাম আজাদসহ আরো বেশ কয়েকজন সশস্ত্রবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও আইন শাখার একজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, কয়েকজন সাবেক আমলা ইতোমধ্যে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তারা চান, বিধানটির বিলোপ হোক। আগেও এ ধরনের একটি বিধান মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করে সংসদে পাঠানো হয়েছিল। এখন সরকার যদি মনে করে আমলাদের শর্ত শর্ত শিথিল করবে, তাহলে কেবিনেট থেকেই প্রস্তাব যেতে পারে। আর আগামীতে ইসির সংলাপে এ বিষয়ে প্রস্তাব এলেও তা নিয়ে পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অংশীজনরা বলছেন, সরকার কোনো আলোচনা ছাড়াই দলীয় সদস্যপদের শর্ত শিথিল করায় নির্বাচনে ডিগবাজ ও মনোনয়ন বাণিজ্যের পথ তৈরি হয়। একই পথ ধরে আমলাদের প্রার্থী হওয়ার শর্ত শিথিল করা হলে প্রশাসনের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়বে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সব কিছু বুঝে শুনে করতে হবে। সবকিছুর ভালো ও নেতিবাচক দিক রয়েছে। এ ধরনের বিধান বিলোপ বা শর্ত শিথিল নিয়ে আমাদের কাছে এখনও কোনো লিখিত প্রস্তাব আসেনি। স্টেকহোল্ডার যারা রয়েছেন, তাদের কাছ  থেকে কোনো প্রস্তাব এলে তা পর্যালোচনা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরুর আগে তারা আইন-বিধিগুলো নিজেরা পড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। ২০১৮ সালের শেষভাগে নভেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তার আগে আইন সংস্কারসহ নানা বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে ইসি। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রæপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, আমলাদের প্রার্থিতার শর্ত শিথিল করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। তিন বছরের ওই বাধা না থাকলে অনেকেই চাকরিতে থাকা অবস্থায় নিজের এলাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করতে পারেন। বিধানটি তুলে দিলে প্রশাসনে দলীয় প্রভাব আরও বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্টের  শঙ্কা থাকবে। ইসির সঙ্গে সম্ভাব্য সংলাপ সামনে রেখে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ আইন সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাব তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন,নতুন ইসি ভোটের আগে সবার সঙ্গে আলোচনা করবে আশা করি। আমরাও কিছু প্রস্তুতি নিচ্ছি,কোথায় কোথায় সংস্কার করলে ভালো হবেৃ। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ