Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তবুও মহাসড়কে ইজিবাইক

| প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : চলতি বছরে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। বেড়েছে হতাহতের সংখ্যাও। গত চার মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল) সারাদেশে মোট ১৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৫৫২ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৩৮৩২ জন। ২০১৬ সালের একই সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ১২৩৬টি। ১৩১৪ জন নিহত ও ৩৩৯৩ জন আহত হন। এই হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনার হার গত বছরের তুলনায় এ বছর ১১ শতাংশ  বেশি। আর নিহত ও আহতের হার বেড়েছে যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ ও ১২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) নিয়মিত মাসিক জরিপ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ না করায় এবং ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলই এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। এর সাথে বিআরটিএ-এর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও পরিবহন শ্রমিকদের খামখেয়ালীপনাকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ।  
মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলছে আগের মতোই। আগে মহাসড়কে শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার চলাচল করতো। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য মোটরচালিত রিকশা। এসবের কারণে মহাসড়কে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। ভুক্তভোগিদের মতে, স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততা, রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব এবং কার্যকর তদারকির অভাবে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারন থ্রি-হুইলার চলাচল। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের জন্য জেলা পুলিশ প্রশাসনকে এগিয়ে আসাসহ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ এ যানবাহনগুলো। স্থানীয় সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাসোহারা দিয়ে এসব যানবাহন চলাচল করছে। মহাসড়কে অটোরিকশার চলাচল প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জনবল কম। তাই সব সময় সবদিকে নজর দেয়া সম্ভব হয় না। পুলিশের চোখের সামনেই থ্রি-হুইলার কিভাবে চলাচল করে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, সব সময় চলে না। আবার পুলিশ ইচ্ছা করলেই সব সময় এগুলো আটক করতে পারে না। গত চার মাসে সারাদেশে সংগঠিত সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটেছে মহাসড়কে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ মহাসড়কের নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল।  
এনসিপিএসআরআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৫০টি দুর্ঘটনায় ৫৪ নারী ও ৫৫ শিশুসহ ৪১৬ জন নিহত এবং ১০১২ জন আহত হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৭২টি। এতে ৫৬ নারী ও ৫৮ শিশুসহ নিহত ও আহত হয়েছে যথাক্রমে ৪২৭ জন ও ১০৯৪ জন। মার্চে ৩৩০টি দুর্ঘটনায় ৩৬২ জন নিহত ও ৮৬৫ জন আহত হয়েছে। এপ্রিলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩২০টি। এতে ৪৭ নারী ও ৪৮ শিশুসহ মোট ৩৪৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৮৬১ জন।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির পরিসংখ্যানে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা চলতি বছরের চেয়ে ২০১৬ সালে তুলনামূলক কম ছিল। গত বছরের জানুয়ারিতে দুর্ঘটনা ঘটে ২৯৫টি। এতে ৩৪০ জন নিহত এবং ৯৪২ জন আহত হন। ফেব্রুয়ারিতে ৩৪৯টি দুর্ঘটনায় ৩৫৬ জনের প্রাণহানিসহ আহত হয় ১১২০ জন। গত বছরের মার্চে দুর্ঘটনা ঘটে ২৯৬টি। এতে ৩০৯ জন নিহত ও ৬২৬ জন আহত হয়। এপ্রিলে ২৯৬টি দুর্ঘটনায় ৩০৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। আর আহত হয় ৭০৫ জন। কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে কমলেও চলতি বছরের শুরু থেকেই তা আবার বেড়ে গেছে। গণপরিবহন খাতের অস্থিতিশীলতাই এর প্রধান কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা  হ্রাসসহ পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সেগুলো হলো- চাঁদাবাজি বন্ধ, পরিবহন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও দৈনিক কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল ও জাল লাইসেন্সধারী চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক চিহ্নিতকরণ ও বেহাল সড়ক সংস্কার এবং বিদ্যমান মোটরযান আইনের যথাযথ প্রয়োগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইজিবাইক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ