বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : বক্তৃতায় সকলেই ঐক্য চেয়েছে, সকলেই সরকারবিরোধী আন্দোলন চেয়েছে। এরপরও নরসিংদী জেলা বিএনপিতে ঐক্য ও আন্দোলন নিয়ে সংশয় সন্দেহ দূরীভূত হচ্ছে না। ঐক্যের আশা, আর আন্দোলন কর্মসূচির প্রত্যাশা নিয়ে শত শত নেতাকর্মী প্রতিনিধি সভায় যোগ দিলেও হতাশা নিয়ে ফিরে গেছেন অনেকে। ব্যক্ত করে গেছেন তাদের সংশয় সন্দেহ আর হতাশার কথা। আভ্যন্তরীন দ্ব›দ্ব নিরসনে সু-নির্দিষ্ট প্রস্তাবনার অভাব, ঐক্যের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরনে ব্যর্থতা, সভায় খোলামেলা আলোচনায় বাধা সৃষ্টি, উগ্র ব্যক্তি কেন্দ্রীকতা, অতিথি বা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থতা এবং দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া অনেক স্বনামধন্য নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতির কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বেলাব উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বিপব দুঃখ করে বলেছেন, এই আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময়ও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত হয়ে এখানে মুল্য পেলাম না।
জানা গেছে, আভ্যন্তরীন বিরোধ মিটিয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুসারে গত শনিবার বিকেলে স্থানীয় জিএম ভূইয়া টাওয়ারে নরসিংদী জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিনিধি সভার মূল দায়িত্ব বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাড. ফজলুর রহমানের উপর ন্যাস্ত হলেও অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানকে। এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন। বিকেল ৩টা থেকেই সভাস্থল নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। রাত ৮টা পর্যন্ত অর্ধশত নেতা সভায় বক্তৃতা করেন। বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তৃতায় নিজেদের ক্ষোভ, দুঃখ ও হুতাশার কথা ব্যক্ত করতে যাওযায় এক শ্রেণির নেতাকর্মী বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারা সভায় হৈ চৈ সৃষ্টি করে। যার ফলে কোন নেতাই মন খুলে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ পায়নি। অনেকেই এই অবস্থাকে ঐক্যের ক্ষেত্রে বাধা বলে অভিহিত করেছেন।
নেতাকর্মীদের বক্তৃতা চলাকালে মাঝখানে বক্তৃতা করে চলে যান সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন। কয়েকজন নেতার ব্যক্তিকেন্দ্রীক, একগুয়েমী ও পক্ষপাতদুষ্ট বক্তৃতার প্রেক্ষিতে মিলন খুব জোর দিয়েই বলেন, আমরা যেখানে দাঁড়াতে পারছি না, সেখানে ধাক্কাধাক্কি করছি। সরকারবিরোধী আন্দোলন কার্যকর করতে হলে নিজেদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ় করতে হবে। তার বক্তব্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আক্রামুল হাসান মিন্টু পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ছাত্রদল, যুবদলের যেসব নেতৃবৃন্দ দলের শীর্ষ পদে থেকে কাজ করেছেন তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করলে কমিটি শক্তিশালী হবে, আন্দোলন বেগবান হবে। আক্রামের এই বক্তব্য সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ইতিবাচক বলে আখ্যায়িত করেছে। প্রতিনিধি সভায় দীর্ঘ দিন পর যোগদেন বিদ্রোহী নেতা হিসেবে পরিচিত জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন ইরান, নরসিংদী জেলা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি মোঃ জলিল, নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি তারেক আহমেদ। মেজবাহ উদ্দিন ইরান ঐক্যের পক্ষে ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, নেতৃত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন, শৃঙ্খলাবদ্ধ হোন এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ুন। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ভিপি মো. জলিল বক্তৃতাদানকালে এক শ্রেণির শ্রোতা সভাস্থলে হৈ চৈ শুরু করলে জলিলের বক্তৃতায় বিঘœ ঘটে। জলিল একটু আবেগ মিশ্রিত বক্তৃতা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হৈ চৈয়ের কারণে তার বক্তৃতা ভিন্ন পথে ধাবিত হয়। সাবেক ভিপি তারেক সামান্য কিছু সমালোচনা করে ঐক্যের পক্ষে বক্তৃতা করেন। বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মন্জুর এলাহী বলেন, দ্বিধা বিভক্তি আছে বলেই ঐক্যের দরকার। ঐক্যের স্বার্থে আমি একটি সাধারণ সদস্যপদ নিয়েও দলের জন্য কাজ করবো। তিনি আরো বলেন, দলীয় ঐক্য ছিল বলেই আমি পর পর দু’বার উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পেরেছি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুল বাছেদ বলেন, আমরা অতীত ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ড. মঈন স্যারের নেতৃত্বে কাজ করে যাবো। আজ থেকে আমাদের মধ্যে আর কোন বিরোধ থাকবে না। খায়রুল কবির খোকন তার বক্তৃতা প্রারম্ভে কমবেশী অর্ধশত নেতাকর্মীকে এড্রেস করেন। তিনি বলেন, আমাদের দলের কেউ আমাদের প্রতিপক্ষ নয়, আমার প্রতিপক্ষ সরকার। এ সরকার আমার বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা দিয়েছে। দুইবার জেল খেটেছি। আন্দোলনের পথ থেকে বিচ্যুত হইনি। আমরা ড. মঈন স্যারের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, দলে ঐক্য না থাকলে নির্বাচনে জয়ী হতে পারবো না। ঐক্য থাকলে যেকোন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারবো। আজ থেকে কোন ভুল বুঝাবুঝি থাকবে না। দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।