বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : হুমকির মুখে কুমিল্লার নগর সভ্যতা। চুরি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বাইরেও যে সমস্যা প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে তা হলো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি, রেস্টহাউজ ও রাস্তা-ঘাটের মোড়ে মোড়ে যৌনকর্মীদের অবাধ বিচরণ। গত ১৫ বছরে কুমিল্লার কয়েকটি এনজিও যৌনকর্মীদের ‘আচরণ’ পরিবর্তনের জন্য বিদেশি ডোনারদের কোটি টাকা গুণেছেন ঠিকই, কিন্তু তাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বিচরণ ও ভয়ানক আচরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। কেবল তাই নয়, যৌনকর্মীদের বিকল্প আয়ের পথ হিসেবে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণের জায়গাটিতেও সাফল্য আনতে পারেনি এনজিওগুলো। ফলে দিন যত গড়িয়েছে, ততই কুমিল্লা নগরীর পথেঘাটে, বাসাবাড়ি আর রেস্টহাউজে যৌনকর্মীদের উৎপাত বেড়েছে। যা আজকের সময়ে হুমকির মুখে পড়েছে নগর সভ্যতা।
বেঁচে থাকা বা জীবিকার তাগিদে নেমে আসা যৌনকর্মীদের অনিয়ন্ত্রিত অবাধ বিচরণ, বিপজ্জনক আচরণ এখন কুমিল্লা নগরীর জন্য অন্যতম সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে কুমিল্লায় যেসব এনজিও ইতোপূর্বে যৌনকর্মীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করেছে, তাদের কাজের সাফল্য, অগ্রগতি, ডোনারদের দেয়া অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়েছে কিনা এবং বর্তমানে যারা কাজ করছে তাদের কাজের ধরণ, এ কাজে ডোনারদের অর্থের সঠিক ব্যবহার কিভাবে করা হচ্ছে এসব বিষয়ে প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ ও নজরদারির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন নগরবাসী। কুমিল্লা নগরী ও আশপাশের এলাকায় দেড় হাজারের বেশি যৌনকর্মী রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক পথেঘাটের ভাসমান এবং বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি ও রেস্টহাউজগুলোতে হাজার খানেক যৌনকর্মীর নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে ওঠেছে। যৌনকর্মীদের আচরণ পরিবর্তন ও বিকল্প আয় হিসেবে হাতের কাজের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে ২০০২ সাল থেকে টানা ১০ বছর ফ্যামেলি হেলথ ইন্টারন্যাশনালের আর্থিক সহযোগিতায় কাজ করেছিল কুমিল্লা নগরীর টমসন ব্রিজ এলাকার দৃষ্টি নামের একটি এনজিও। পাশাপাশি ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত যৌনকর্মীদের নিয়ে একই ধারায় আরবান প্রকল্পের আওতায় কাজ করেছে মেরিস্টোপ নামের আরেকটি এনজিও। গত ১০ বছর যৌনকর্মীদের ‘আচরণ’ পরিবর্তনের নামে এনজিওগুলো কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা নিয়েও যৌনকর্মীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। কেবল যৌনকর্মীদের নিয়ে ছোটখাটো ঘরোয়া সভাতেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। আর কাজের অগ্রগতি দেখানোর জন্য সাজানো ফটোসেশন, পত্রিকায় প্রেসরিলিজ পাঠিয়ে তা ছাপার পর কার্টিং করে ডোনারদের কাছে উপস্থাপন করার মধ্যেই ছিল যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজের সামগ্রিক ব্যাখ্যা। আবার কিছু যৌনকর্মীকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে কথা বলার জন্য তৈরি করে রাখা হতো। ডোনার বা দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা আসলে তৈরি করে রাখা যৌনকর্মীরা ‘আচরণ’ পরিবর্তন বিষয়ে ডোনারদের সামনে সংশ্লিষ্ট এনজিওর পজেটিভ দিক তুলে ধরতেন। ব্যাস, প্রজেক্টের মেয়াদ বেড়ে যেতো। অভিযোগ রয়েছে, ওই দুইটি এনজিওতে যৌনকর্মীদের প্রজেক্ট নিয়ে যারা কাজ করেছে তারা নিজেদের পকেট ভারী করেছে। তাদের কাছে মিডিয়া ছিল হুমকিস্বরূপ। আর তাই যৌনকর্মী নিয়ে কাজের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা ওইসময়ে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের নামেও লাখ লাখ টাকা নিজেদের পকেটে ঢুকিয়েছেন। যৌনকর্মীদের নিয়ে প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পর এসব কর্মকর্তাদের কেউ কেউ চাকরিও ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু কাজে সাফল্য না আসার দায়ভার বহন করতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট এনজিওকে। জানতে চাইলে এনজিও দৃষ্টির নির্বাহী পরিচালক পাপড়ী বোস বলেন, ‘যৌনকর্মীদের নিয়ে দৃষ্টি প্রায় ১০ বছর কাজ করেছে। আমি ওই প্রজেক্টের শেষের দিকে এসে নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছি। যৌনকর্মীদের নিয়ে যারা এ প্রজেক্টে কাজ করেছে, তারাই এটির ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারবেন।’
কুমিল্লা নগরীর বাসাবড়ি, আবাসিক হোটেল ও পথেঘাটের ভাসমানসহ দেড় হাজারের বেশি যৌনকর্মী রয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ২০১০ সাল থেকে আবাসিক হোটেল, বাসাবাড়ি ও ভাসমান ৩৪৫ জন যৌনকর্মী নিয়ে কাজ করছে আন্তর্জাতিক সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেন। গত সাত বছরে এসংস্থাটিও যৌনকর্মীদেরকে বিপজ্জনক আচরণের জায়গা থেকে বের করে আনতে পারেনি। এ ব্যাপারে নগরীর ধর্মপুরে অবস্থিত কুমিল্লায় সংস্থাটির সমন্বয়ক কাজী আহমেদ জামিল রোকন জানান, ‘আমরা যৌনকর্মীদের নিরাপদ আচরণের জায়গায় থাকার পরামর্শ, তাদের চিকিৎসা সহায়তা ও বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। বিগত সময়ে অন্য এনজিওগুলো যৌনকর্মীদের প্রজেক্ট নিয়ে কি করেছে না করেছে সেই বিতর্কে যাবো না। তবে গেøাবাল ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় সেইভ দ্য চিলড্রেন সরাসরি কুমিল্লায় যৌনকর্মীদের ক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে কাজ করছে।’
এদিকে যৌনকর্মী প্রজেক্ট নিয়ে কুমিল্লার যেসব এনজিও বিগত সময়ে কাজ করেছে এবং বর্তমানে যারা করছে তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতে এসব এনজিও যৌনকর্মীদের ঘিরে বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট গ্রহণ করে এ খাতে বিদেশি সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অর্থের সিংহ ভাগই নিজেদের পকেটে ঢুকিয়েছেন। এসব এনজিওর কিছু ধূর্ত প্রকৃতির লোক কাগজ-কলমে হিসাব ঠিক রেখেই পকেট ভারী করেছেন। আর এখন যারা কাজ করছে তারা অতীতের ধারাবাহিকতাই যৌনকর্মীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য আসা অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না। অতীতে ও বর্তমানে যদি যৌনকর্মীদের পেছনে এসব অর্থের সঠিক ব্যবহার হতো, তাহলে দিন দিন যৌনকর্মীরা সমাজের পথেঘাটে, বাসাবাড়ি ও আবাসিক হোটেলে বিপজ্জনক আচরণের মধ্যদিয়ে অবাধ হয়ে ওঠতো না। এ অবাধ যৌনবৃত্তি সমাজে ভয়াবহতা সৃষ্টি করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।