ভাদ্র মাসের শেষ দিকে এসেই সারা দেশে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ ও অতিবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ভারতের দিকে দুর্বল হয়ে সরে পড়া স্থল লঘুচাপ ও পূর্ণিমার বর্ধিত প্রভাব এবং সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশে বর্ষাকালের মতোই বর্ষণ হচ্ছে। সেই সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিশেষত চর, দ্বীপ ও নিম্নাঞ্চল অস্বাভাবিক প্রবল জোয়ারে ভাসছে। উপকূলীয় এলাকার নদ-নদী, খালসমূহ প্রবল জোয়ার ও অতিবৃষ্টিতে ফুলে-ফুঁসে উঠেছে। উপকূলীয় এলাকায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে।

আবহাওয়া বিভাগ জানায়, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে জোরালো অবস্থায় রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ, অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বগুড়ায় ১৪২ মিলিমিটার। ঢাকায় ৪৮, চট্টগ্রামে ৪৪, চুয়াডাঙ্গায় ১৩৬, পাবনায় ১৩০, টাঙ্গাইলে ৯৮, ভোলায় ৯০, বদলগাছীতে ১০৫, তাড়াশে ১১২, কুমারখালীতে ৯৩, সীতাকুণ্ডে ৮৬ মি.মি.সহ সমগ্র দেশে অঝোরে বর্ষণ হয়েছে।

অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ নেমে এসেছে শ্রীমঙ্গলে ৩১.৩ এবং সর্বনিম্ন পাবনায় ২২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৬.৫ এবং সর্বনিম্ন ২৫.৫ ডিগ্রি সে.। এদিকে দুর্বল স্থল সুস্পষ্ট লঘুচাপের বর্ধিত ও পূর্ণিমার দ্বিমুখী প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তায় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে।

গতকাল সর্বশেষ অবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও এর পাশর্^বর্তী এলাকায় অবস্থানরত স্থল লঘুচাপটি ক্রমেই আরও দুর্বল হয়ে সরে যাচ্ছে। এর বর্ধিত প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

পূর্ণিমা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে ২ ফুট অধিক উঁচু বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।