পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর কাফরুলস্থ নিউ ওয়েভ ক্লাবে র্যাব পরিচয়ে ডিবি পুলিশের ১১ সদস্যের একটি দলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং ক্লাবে থাকা লোকজনের মোবাইল ফোন ও অর্থ কেড়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার তদন্তে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার জামিল আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পায় এবং ১১ জনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সাময়িক বরখাস্ত এবং বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, পুলিশের একশ্রেণীর সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাইয়ের মতো গুরুতর অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। হরহামেশাই এ ধরনের অভিযোগ উঠলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুব কমই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কাফরুলের ঘটনায় অপকর্মের সাথে জড়িতরা হাতেনাতে ধরা পড়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তারপরও ঘটনার পরপর বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার কম চেষ্টা হয়নি। পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ায় তদন্ত কমিটি গঠনসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যের অপকর্মের ফলে বাংলাদেশ পুলিশের ইমেজ দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ভালো অবস্থানে নেই। চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম, খুন, মানুষকে তুলে নেয়ার মতো ঘটনাগুলো পুলিশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ করে চলেছে। যথাযথ আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে অভিযুক্তকে শাস্তির বিধানের পরিবর্তে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে যথেষ্ট দুর্নাম রয়েছে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে। এর পাশাপাশি অন্যান্য অপরাধমূলক ঘটনায় কিছু সদস্যের নিয়মিত জড়িয়ে পড়া নিয়ে অহরহ অভিযোগ উঠছে। এসবের কোনো প্রতিকার হচ্ছে না এবং সংর্শ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান শাস্তির বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। ডিবি পরিচয়ে মানুষকে তুলে নেয়ার ঘটনা বিগত কয়েক বছর ধরে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছে। কাকে কখন তুলে নিয়ে যাওয়া হবে, এমন এক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমনকি ডিবি পরিচয়ের সুযোগ সন্ত্রাসীরাও নিচ্ছে। এ ধরনের ভুয়া ডিবি ধরাও পড়েছে। তবে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, এখন সত্যিকারের ডিবি পুলিশও অন্য বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। কাফরুলের ঘটনায় অভিযুক্ত ডিবি পুলিশ র্যাবের পরিচয় দিয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে। এখানে র্যাবকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ঘটনা যদি ধরা না পড়ত, তবে মানুষ জানত র্যাবই এ কাজ করেছে। সাধারণ মানুষ জানে, ডিবি ও র্যাবের পরিচয় দিয়েই মারাত্মক সব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ওঠে, পুলিশের আর কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ ওঠে না। ফলে এ দু’টি প্রতিষ্ঠান জনসাধারণের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার বরাবরই বলে আসছেন, ব্যক্তির দায় কখনো পুলিশ বাহিনী নেবে না। শৃঙ্খলা পরিপন্থী যে কোনো কাজে জড়ালে তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও আহ্বান জানানো হয়েছে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব বিভাগকে জনবান্ধব হতে এবং জনসাধারণের সাথে ভালো আচরণ করতে। দেখা যাচ্ছে, এসব আহ্বান সত্তে¡ও র্যাব-পুলিশের একশ্রেণীর সদস্যের আচরণে কোনো পরিবর্তন হয়নি। পুলিশের চাঁদাবাজি অনেকটা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত এর বিস্তার ঘটেছে। রাজধানীতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ক্লাব ও বারগুলোতে তাদের নিয়মিত মাসোহারা দিতে হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একেকটি বার থেকে স্থানীয় থানা পুলিশ মাসে ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সূত্র অনুযায়ী রাজধানীতে ৫২টি অনুমোদিত বার রয়েছে। এর বাইরে অনুমোদন ছাড়া রয়েছে আরো ৫০টি। এ বারগুলোই এখন একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যের চাঁদাবাজির মূল উৎস হয়ে উঠেছে। বলা বাহুল্য, অবৈধ বারগুলো টিকে আছে শুধুমাত্র পুলিশের একশ্রেণীর সদস্যের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং তাদের নিয়মিত মাসোহারা প্রাপ্তির কারণে। এর ফলে মাদক যেমন বিস্তার লাভ করেছে, তেমনি সমাজে মদকাসক্তের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরনের অপকর্ম ঘটছে পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিধান ও অপরাধ দমন হবে কিভাবে? যেখানে স্বয়ং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সেখানে শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু হতে পারে না। পুলিশ জনগণের বন্ধু, এ শ্লোগানটি তখন কোনোভাবেই সত্য বলে প্রতীয়মাণ হয় না।
র্যাব ও পুলিশের কোনো সদস্য বা দল যদি গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এবং তা প্রমাণিত হয়, তবে দেখা যায় তাদের গুরুদন্ডের পরিবর্তে লঘুদন্ড দেয়া হয়। সাময়িক বরখাস্ত বা ক্লোজ করে নেয়ার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সময়ের আবর্তে তা এক সময় মওকুফও হয়ে যায়। কঠোর সাজা দেয়ার মতো দৃষ্টান্ত খুবই কম। এর ফলে অভিযুক্ত সদস্যরা আরো বেশি আস্কারা পেয়ে যায়। কারণ তারা জানে, এ ধরনের শাস্তি সাময়িক এবং তা এক সময় মওকুফ হয়ে যাবে। এ ধরনের দায়মুক্তিতে তারা পুনরায় অপকর্মে লিপ্ত হয়। এক বন্দুকযুদ্ধের কথাই যদি ধরা হয়, তবে দেখা যাবে, তা আইনসিদ্ধ না হলেও সংশ্লিষ্ট ঘটনার কোনো তদন্ত করা হয় না। তা না হওয়ার ফলে আইনবহির্ভূত এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে। এমনকি অনেক নিরীহ মানুষকে তুলে এনে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের ঘটনাও প্রায়ই ঘটে চলেছে। পুলিশের একশ্রেণীর সদস্যের এই অবিরত অপরাধমূলক ঘটনার যথাযথ প্রতিকার না হওয়ার কারণে এ রকম অপরাধের বিস্তার কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। আমরা মনে করি, পুলিশের যে বা যারা এবং যে স্তরের সদস্যই হোক না কেন, অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে তাদের কঠোর সাজার মুখোমুখি করতে হবে। সাময়িক বরখাস্ত বা বদলির মতো নামকাওয়াস্তে শাস্তির মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত করার বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।