পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে রফিকুল আলম আবুসহ চারজনের লাশ পাওয়া গেছে। তারা আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ সমাপ্ত ঘোষণা করে এক ব্রিফিংয়ে একথা জানান রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খুরশেদ হোসেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি। এর আগে আহত অবস্থায় আবুর স্ত্রী ও এক মেয়েকে উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সোয়াতের অপারেশন শেষ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখন বোমা ডিসপোজাল দল কাজ করবে।
উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনীগ্রামে আমবাগান ঘেরা ওই একতলা ওই বাড়িতে মাস তিনেক ধরে রফিকুল আলম আবু (৩০) নামের এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী-সন্তানসহ চারজন থাকতেন বলে প্রাথমিকভাবে জানায় পুলিশ। তবে আবুর আরেক সন্তান তার নানির বাড়িতে রয়েছেন বলে অভিযানের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অপারেশন শুরুর পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “একতলা ওই বাড়ির ভেতরে নারী ও শিশুসহ চারজন আছে বলে আমরা ধারণা করছি।”
সকাল থেকে মাইকে কয়েক দফা বলার পরও আত্মসমর্পণ না করায় বেলা সোয়া ৪টার দিকে ভেতরে থাকা দুই শিশুকে বের করে দেওয়ার আহŸান জানানো হয়। পরে বিকাল ৫টা থেকে সোয়া ৫টার মধ্যে আবুর স্ত্রী সুমাইয়া ও মেয়েকে বের করে হাসপাতাল পাঠানো হয়।
সকালে শেষবারের মতো তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে একটি বোমা ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয় সন্দেহভাজন ওই জঙ্গি আস্তানায়।
তখন জেলার পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখনও বাড়ির ভেতরে ঢোকেনি। তবে বাড়ির ফটকে একটা বোমা পাওয়ার পর সেটা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।”
বুধবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনীগ্রামে আমবাগান ঘেরা ওই বাড়িটি পুলিশ ঘেরাও করার পর সন্ধ্যায় অভিযান চালায় সোয়াট। কিন্তু দুই ঘণ্টা পরই স্থগিত করে।
রাতের বিরতির পর সকাল ৯টার দিকে ফের অভিযান শুরুর পর সোয়া ১২টায় আত্মসমর্পণের শেষ আহŸান জানানো হয়।
এর আগে অভিযান শুরুর সময় থেকে এক-আধ ঘণ্টা পরপর শোনা যায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। ১০টা ৬ মিনিটে একবার বিকট বিস্ফোরণ ঘটে।
‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ নামে পরিচালিত এই অভিযান শুরুর আগেই সকাল ৮টার দিক থেকে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস। নিরাপত্তার কথা বলে পুলিশ ওই বাড়ির আশপাশের প্রায় পাঁচশ’ গজের ভেতর কাউকে যেতে দেয়নি।
বুধবার রাত ৯টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা উপ-পুলিশ কমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার জানিয়েছিলেন, ওই বাড়ির ভেতর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয় এবং চার-পাঁচটি বিকট বিস্ফোরণও ঘটানো হয়।
ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসার পর উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে আমবাগান ঘেরা ওই বাড়ির কাছে পৌঁছান সোয়াট সদস্যরা। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ওই বাড়ির দিক থেকে টানা গুলির শব্দ পান পাঁচশ’ গজ দূরে অবস্থানরত সাংবাদিকরা।
জেলার পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম জানান, সোয়াটের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’।
জঙ্গিদের অবস্থানের খবর পেয়ে বুধবার ভোরে উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের মালিকানাধীন ওই বাড়ি ঘিরে ফেলেন স্থানীয় পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম বলেন, ওই বাসা ঘিরে ফেলা হলে ভেতর থেকে গুলি ছোড়া হয়। পরে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। তবে সেখানে কী পরিমাণ বিস্ফোরক বা গোলাবারুদ আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গোমস্তাপুর সার্কেলের এএসপি মাইনুল ইসলাম জানান, একতলা ওই বাড়িতে রফিকুল আলম আবু (৩০) নামের এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী-সন্তানসহ চারজন থাকে বলে তাদের কাছে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে।
“সকাল থেকে কয়েক দফা মাইকে তাদের আত্মসমর্পণের আহŸান জানানো হয়। আশপাশের চারটি বাড়ির লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয় পুলিশ সদস্যরা।”
জননিরাপত্তার স্বার্থে শিবগনগর ও আশপাশের এলাকায় সকালেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয় জানিয়ে শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল ইসলাম জানান, অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে সব ধরনের জমায়েত ও চলাচলে কড়াকড়ি থাকবে।
কে এই আবু
শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে আম বাগানের মধ্যে একতলা ওই বাড়ির মালিক ৭৫ বছর বয়সী সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাস। তিনি এলাকায় ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। নিজের পরিবার নিয়ে পাশেই আরেকটি বাড়িতে তিনি থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, মাস তিনেক আগে চাচরা গ্রামের দিনমজুর আফসার আলীর ছেলে রফিকুল আলম আবুকে ভাড়া ছাড়াই ওই বাসায় থাকতে দেন জেন্টু বিশ্বাস।
এক সময় মাদ্রাসায় পড়া আবু একজন ভ্রাম্যমাণ মসলা বিক্রেতা। আট ও ছয় বছর বয়সী দুটি মেয়ে রয়েছে তার।
ত্রিমোহনীর ওই বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চাচরা গ্রামে আবুর বাবা-মা থাকেন। সকালে সাংবাদিকরা সেখানে গেলে আবুর মা ফুলছানা বেগমের সঙ্গে তাদের কথা হয়।
তিনি বলেন, প্রায় নয় বছর আগে সুমাইয়া খাতুনের সঙ্গে বিয়ের পর একই উপজেলার আব্বাস বাজারে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন আবু। মাস তিনেক আগে তিনি জেন্টুর বাড়িতে ওঠেন।
ছেলেবেলায় আবু চাচরা গ্রামের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন বলে জানালেও কোন শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছেন সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তার মা।
তিনি জানান, আবু দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। বোনের বিয়ে হয়েছে। আর ছোট ভাই আবদুস সবুর রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
সকালে পুলিশ আবুর বাসা ঘিরে ফেলার আগেই কানসাট ইউনিয়নের আব্বাস বাজার এলাকার তিনটি বাড়ি ঘেরাও অভিযান চালানো হয়। তবে সেখানে কাউকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশ স্বীকার করেনি।
স¤প্রতি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালানোর পর পুলিশ গত শুক্র ও শনিবার ঝিনাইদহের একটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালিয়ে ‘বিপুল বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম’ উদ্ধার করে।
এরপর মঙ্গলবার দিনভর রাজশাহীর একটি এলাকায় কয়েকটি বাড়ি ঘিরে ‘বøক রেইড’ চলে। তবে সেখানে কোনো জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায়নি পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।