পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা নগরীতে নাগরিক সমস্যা অনেক। যানজট, রাস্তায় পানিবদ্ধতা, যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ঝক্কি, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সংকট ইত্যাদির সাথে ফুটপাত দখল ও চাঁদাবাজির মত ঘটনা নাগরিক দুর্ভোগের কারণ। ফুটপাত মূলত পথচারীদের। স্বল্প দূরত্বের পথ পায়ে হেঁটে চলাচলের সুযোগ অবারিত রাখা নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। প্রায় দুই কোটি মানুষের অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে প্রয়োজনীয় যানবাহনের সুযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি যানজটমুক্ত রাখা খুবই দুরূহ বিষয়। শহরের বাণিজ্যিক ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে রাস্তার ফুটপাত দখল করে হকারদের রকমারি পসরা সাজানোর সংঘবদ্ধ কার্যক্রম ঢাকার রাস্তার যানজট ও জনজট কমিয়ে আনার অন্যতম অন্তরায় হিসেবে দেখা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এ কারণেই গত তিন দশকে ক্রমবর্ধমান হারে সংকটাপন্ন ঢাকা নগরীতে যারাই দায়িত্বে নেতৃত্বে এসেছেন তাদের প্রায় সবাইকেই ফুটপাত দখলমুক্ত করে পথচারী বান্ধব করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রæতি দিতে শোনা গেছে। আশির দশকে তিলোত্তমা ঢাকা গড়ে তোলার প্রতিশ্রæতি থেকে শুরু করে ঢাকার দুই সিটির বর্তমান মেয়রদের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি পর্যন্ত গ্রীন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা এমন অনেক কথাই শোনানো হয়েছে। লোক দেখানো কিছু উচ্ছেদ অভিযানও দেখা গেছে। তবে ঢাকার ফুটপাত, পানিবদ্ধতাসহ গুরুতর নাগরিক সমস্যাগুলো এখনো সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। একইভাবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং সিলেটসহ দেশের অধিকাংশ মেট্রোপলিটন এলাকায় একই রকম সমস্যা ক্রমশ প্রকট আকার ধারণ করছে।
ঢাকা উত্তরের মেয়রের কিছু সাহসী উচ্ছেদ অভিযান নাগরিক সমাজের প্রশংসা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। বিশেষত, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে ট্রাকস্ট্যান্ড হিসেবে বেদখল হয়ে থাকা তেজগাঁ ট্রাকস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করার চ্যালেঞ্জ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সামাল দিতে সক্ষম হন মেয়র আনিসুল হক। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, কথিত সেই ট্রাক স্ট্যান্ডটি আবারো বেদখল হতে শুরু করেছে। তবে মেয়র নাকি দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন, তিনি থাকতে ট্রাক স্ট্যান্ডটি আর বেদখল হতে দেবেন না। একটি দু’টি রাস্তা ও ফুটপাতকে দখলমুক্ত করেই মেয়র বা নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় নৌকা চলাচলের চিত্র আমরা আবারো দেখেছি। নালা-নর্দমার উপচে পড়া ময়লা ও দুর্গন্ধে পথচারীদের নাভিশ্বাস অবস্থা শহরের প্রান্তিক এলাকা থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকা পর্যন্ত এখনো বিদ্যমান আছে। অন্যদিকে পুরনো ঢাকার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক-প্রশাসনিক এলাকা গুলিস্তান-বঙ্গবন্ধু এভিনিউকে হকারমুক্ত করতে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের দৃঢ়সঙ্কল্প দেখা গেলেও বাস্তব পরিবর্তন খুবই সামান্য হয়েছে। গুলিস্তান থেকে হকার উচ্ছেদের পর আন্দোলনের মুখে হকার সংগঠনের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে বিকালে ফুটপাতে দোকান খোলার অনুমোদন দেয়া হলেও তারা এখন দুপুরেই ফুটপাত দখলে নিয়ে দোকান খুলে বসছে। মূলত সরকার সমর্থক হকার সংগঠনের নেতারাই ফুটপাতের দোকানদারি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। দুই সিটির ফুটপাত থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে এবং তা ক্রম অনুসারে দলীয় ক্যাডার ও নেতাদের মধ্যে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার ফুটপাতে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি (প্রতিমাসে ৩০ কোটি) টাকা চাঁদাবাজি হয়ে থাকে বলে দু’বছর আগে একটি গবেষণা সংস্থার সূত্রে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তার জোটের শরিক দল ও অংগ সংগঠনের নেতারা মূলত এই চাঁদাবাজিতে লিপ্ত আছে।
একটি আধুনিক নগরীর বাসযোগ্যতা এবং নাগরিক নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধার মানদন্ড নিরূপণের যে সব বিষয় প্রাধান্য পায় রাস্তার শৃঙ্খলা এবং ফুটপাতের অবস্থা সেখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে চিহ্নিত হয়। এমনিতেই ঢাকায় প্রয়োজনীয় যান চলাচলের জন্য রাস্তার পরিমাণ খুবই কম, তার উপর শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে দিনের বেলায় রাস্তার অনেকটা স্থান হাজার হাজার ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে চলে যায়। প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, মতিঝিল এলাকার ১৫৭টি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের মধ্যে মাত্র ১৭টির পার্কিং স্পেস আছে। বাকি ১৪০টিতেই পার্কিং স্পেস নেই। বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক হলেও অধিকাংশ ভবনেরই গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা না থাকায় অফিসের গাড়িগুলো রাস্তায় দখল নেয়। নগর কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও যেন অনিচ্ছুক। এমনকি গাড়ি পার্কিং-এর জন্য নির্মিত সিটি সেন্টারের ফ্লোরগুলো বেশীরভাগ সময়ই ফাঁকা থাকছে। অবৈধ পার্কিং-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রাইভেটকারের মালিকরা রাস্তায় গাড়ি রাখতেই বেশী আগ্রহী। ফুটপাতে হকার বসিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির সুযোগ এবং হাজার হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্য কেন্দ্রের রাস্তায় রেখে শহরকে গতিময়, যানজটমুক্ত ও জনবান্ধব করা সম্ভব নয়। ঢাকা নগরীকে বাসযোগ্য ও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ করে তুলতে হলে সরকার এবং নগর কর্তৃপক্ষের অনেক কিছুই করণীয় আছে। তবে নগরীর ফুটপাতের চাঁদাবাজি এবং রাজপথের দখলবাজি বন্ধে মেয়রদের আপোষহীন ভূমিকার পাশাপাশি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।