Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিনিয়োগ বন্ধ্যাত্ব দূর করতে চাই দূরদর্শী নেতৃত্ব

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রায় এক দশক ধরে দেশে শিল্পবিনিয়োগে মন্দা বিরাজ করছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিদ্ব›দ্বী রাষ্ট্রগুলো কাক্সিক্ষত হারের কাছাকাছি বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হলেও অনেক বেশী সম্ভাবনা থাকা সত্তে ও বাংলাদেশ সে তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানগতভাবে বাংলাদেশ অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সত্তে¡ও দেশে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান না হওয়ার জন্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা, আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব বিষয় সরকারের সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়। গত এক দশকে দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বেশকিছু বিনিয়োগবান্ধব আইনগত সুযোগ-সুবিধা প্রবর্তন করা হলেও এসব বিধি-বিধান সংশ্লিষ্টদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বিনিয়োগ ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের মন্দা দূর করে অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করার কার্যকর উপায় অবলম্বনের বদলে প্রতিবছর বিশালাকার জনতুষ্টিমূলক বাজেট প্রণয়ন করেই আত্মতুষ্টিতে গদগদ হয়ে উঠছেন দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব। একদিকে বাজেট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার কারণে বছর শেষে উন্নয়ন বাজেটের বিশাল অংশই অসমাপ্ত থাকছে। অন্যদিকে অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থতা ও সমন্বয়ের অভাবে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না।
পরিসংখ্যানগতভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ছে না। এ কারণে হাজার হাজার কোটি অলস টাকা জমা হচ্ছে ব্যাংকের ভল্টে। গত বছরও বাজেটের আগে দেয়া এক মূল্যায়নে বেসরকারি থিঙ্কট্যাংক সিপিডি’র তরফ থেকে বলা হয়েছিল, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশী থাকলে স্বাভাবিক নিয়মেই বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের সংখ্যা বাড়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। রাজস্বখাতে ঘাটতি এবং দেশী-বিদেশী ঋণ নির্ভর বিশালাকারের ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করে বছরে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় করা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সামগ্রিক অর্থনীতির এ চিত্র ইতিবাচক বা সুখকর নয়। দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিশ্লেষণ ও পরামর্শও কম আসেনি। অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। উপরন্তু বৈদেশিক কর্মসংস্থান, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং তৈরী পোশাক খাতে নতুন নতুন সংকট তৈরী হয়েছে। গত সোমবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদ (বিআইডিএস)’র দু’দিনব্যাপী সেমিনারের শেষদিনে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও অর্থনীতিবিদরা দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন। সেখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের কঠিন বাস্তবতা এবং অনিশ্চয়তা দূর করার চ্যালেঞ্জগুলোই প্রাধান্য পেয়েছে। বিনিয়োগের ঝুঁকি নিরসনে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কোন পরিকল্পনা থাকারও সমালোচনা করেছেন বক্তারা। ব্যাংকে উচ্চ সুদের হার, পুঁজি বাজারের জুয়া ও কারসাজি ইত্যাদি ইস্যুগুলো শিল্পবিনিয়োগে অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারছে না, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার চেয়েও বড় প্রতিবন্ধক হচ্ছে দেশের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাব।
বিআইডিএস’র সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনটির শিরোনাম ছিল ‘টুয়ার্ডস ইন্ডাসট্রিয়াল রেভ্যুলেশান’। অধিবেশনের সভাপতি বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার সমাপনী ভাষণে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সংকটের চলমান সংকটগুলোর পাশাপাশি যে বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করেছেন, তা হচ্ছে দেশে দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বের অভাব। এ প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, এখন এমন নেতৃত্ব দরকার যারা পুরনো ডিসি-১০ উড়োজাহাজ চালাবে না, চালাবে আধুনিক জেট ওয়ান। দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে উলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এসআর ওসমানীর মতে, বিনিয়োগের বড় বাধা হচ্ছে অনিশ্চয়তা। তিরি বলেন, গণতন্ত্র মানে ৫ বছর পর পর একটি করে নির্বাচন নয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অনেক বড় ব্যাপার। এসব সমস্যার সমাধান ছাড়া শিল্পবিপ্লবের চিন্তা অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে অধ্যাপক রেহমান সোবহান শিল্প বিনিয়োগের গতানুগতিকতা পরিহার করে নতুন মডেল অনুসরণের প্রস্তাব করেছেন। দেশে বিনিয়োগ বন্ধ্যাত্ব হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ব্লেইম গেম এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তাহীনতা বা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো হীনমনোবৃত্তি ও একগুঁয়েমি পরিহার করলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ ও সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগের খরা একই সঙ্গে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।       



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন