পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াত চক্রের ৪ সদস্যকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে বলে খবর বেরিয়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আটককৃত আসামীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে তাদের মার্কশীট, সার্টিফিকেট ও প্রবেশপত্রের মূলকপি সংগ্রহ করে। এরপর ছাত্রদের কাছ থেকে অনলাইনে ফর্ম পূরণের আইডেন্টিফিকেশন নম্বর সংগ্রহ করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে ফটোশপের মাধ্যমে প্রবেশপত্রের ছবি পরিবর্তন করে অন্য মেধাবী ছাত্রকে দিয়ে ভর্তিপরীক্ষা দেয়ায়। এর বিনিময়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী অভিভাবকদের থেকে জনপ্রতি একটি নির্দিষ্ট অর্থ আদায় করে। বলা হয়েছে যদি কোন প্রার্থী টাকা দিতে অক্ষম হয় তাহলে তারা সেই ছাত্রকে অপহরণ এবং তার মূল সার্টিফিকেট আটক করে টাকা আদায় করে। এই চক্র প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহ করার জন্য সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীকে মোটা অংকের অর্থ প্রদানের প্রস্তাব দিয়ে থাকে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের প্রক্সি পরীক্ষা দিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জনপ্রতি লাখ টাকা দিয়ে থাকে। বলা হয়েছে, যারা প্রক্সি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয় তারাই পরবর্তীতে অন্য শিক্ষার্থীদেরও জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তিতে প্রলুব্ধ করে। এভাবেই দেশব্যাপী ভর্তি জালিয়াত চক্রের এক বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়টি পুরোনো। কেবা কারা এর সাথে যুক্ত একটি চক্র হয়ত ধরা পড়েছে। তবে বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। এমনকি সার্টিফিকেট জাল করে ভর্তি হয়ে উত্তীর্ণ হবার ঘটনাও খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে ঘটেছে। যারা ধরা পড়েছে এরাই একমাত্র সূত্র-উৎস কিনা সেকথা হয়ত এক্ষুিণ জোর দিয়ে বলা যাবে না। মূল বিষয়টি দেখতে গেলে বলতে হবে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের মতই এটি যেন একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মাঝে মধ্যেই প্রক্সি পরীক্ষা দেয়ার অভিযোগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হবার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এখন এটি পরিষ্কার যে, বিষয়টি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং এ ধরনের ঘটনা ঘটাবার পিছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে। কার্যত এদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে যেসব প্রশ্ন রয়েছে তার উত্তর খুঁজতে গেলে ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতিও একটি বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। যিনি বা যারা প্রকৃত ভর্তির যোগ্য নয় তিনি বা তারা টাকা, জালিয়াতি বা প্রভাব খাটিয়ে ভর্তি হবার পর তাদের শিক্ষার মান কি দাঁড়াবে বা দাঁড়াতে পারে তা নিয়ে কোন গবেষণার প্রয়োজন নেই। এটাও বলার অপেক্ষা রাখেনা দেশব্যাপী গড়ে ওঠা এই বিশাল চক্রের কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে অযোগ্যরা সে জায়গা পূরণ করছে। তাছাড়া শিক্ষাজীবনের শুরুতেই এই বিশেষ শ্রেণী পড়াশোনা বাদদিয়ে জালিয়াতি প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষাজীবনের শুরুতেই অনৈতিক প্রবণতার সাথে জড়িয়ে পড়ার ফলে মূল্যবোধহীন এক বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়ছে তারা। সে কারণেই দেখার বিষয় কিভাবে এর উৎপত্তি এবং বিকাশ হয়েছে। এর সাথে প্রকৃত বিবেচনায় যাদের ধরা হয়েছে তারাই জড়িত নাকি আরো কোন শক্তিশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়টিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলা হয়। এই মেরুদন্ড নির্ধারিত হয় ছাত্র বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর দিয়েই। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এধরনের প্রবণতা নিঃসন্দেহে লজ্জার ও উদ্বেগের। যাদের হোতা বলে শনাক্ত করা হয়েছে তাদের নেপথ্যে শক্তিশালী মহল থাকা অস্বাভাবিক নয়। সময়ের অভিজ্ঞতা বলছে সাথে গডফাদার না থাকলে এতটা সাহস পাবার কথা নয়। সে কারণেই মূলহোতাদের শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরী। যেকোন মূল্যে শিক্ষার মান রক্ষার্থে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষার্থেই ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতের ঘটনা রোধ করা প্রয়োজন। যারা এ প্রক্রিয়ায় ভর্তি হয়েছে তাদের কেবল ভর্তি বাতিল নয়, উদাহরণযোগ্য সাজাও হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে টাকার লোভে জেনেশুনে যারা প্রক্সি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তাদের ভর্তিও বাতিল করা এবং আইনের আওতায় আনা জরুরী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।