নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী : আশ্চর্য হলেও সত্য, ভারতের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা এসেছে বেতনের আওতায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে ২০০১ সালে তৎকালীন বিসিবি’র পরিচালনা পরিষদ ক্রিকেটারদের বেতনের আওতায় এনে কুড়িয়েছে প্রশংসা। ১৬ বছরে ক্রিকেটারদের বেতন বেড়েছে ১৩ গুনেরও বেশি। ২০০১ সালে ‘এ’ প্লাস গ্রেডের ক্রিকেটার আকরাম, বুলবুল, দুর্জয়, পাইলট যেখানে পেতেন মাসে ৩৩ হাজার টাকা, ২০১৭ সালে এসে ‘এ’ প্লাস গ্রেডের ৪ ক্রিকেটার সেখানে বেতন খাত থেকে পাবেন ৪ লাখ টাকা। অধিনায়ক হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব এবং বিশেষ বোনাস মিলিয়ে মুশফিকুর রহিম পাবেন সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সাকিব,তামীম বেতন বোনাস মিলিয়ে মাসে উত্তোলন করবেন সেখানে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, মাশরাফির বেতনের অংক দাঁড়াচ্ছে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। গতকাল বিসিবি’র ১৬তম পরিচালনা পরিষদের সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। বছরের চার মাস পেরিয়ে গেলেও এ বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হচ্ছে নুতন কাঠামোয় ক্রিকেটারদের বেতন। বিসিবি’র কাছে বেতন বৃদ্ধির দাবি ক্রিকেটার কিংবা ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব তোলেনি। তারপরও মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো ঘটনা ঘটেছে। আয়ারল্যান্ড সফর এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণের জন্য আগামী ২৬ এপ্রিল রাতের ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার ৯৬ ঘণ্টা আগে অপ্রত্যাশিত বেতন বৃদ্ধির খবরই পেলেন মাশরাফিরা।
ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রস্তুাব অনুমোদিত হওয়ায় ‘এ’ প্লাস গ্রেডের ক্রিকেটারদের বেতন বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ। গত বছর তাদের মাসিক বেতন যেখানে নির্ধারিত ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এ বছরের জানুয়ারি থেকে তা ৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে! ‘এ’ গ্রেডের ক্রিকেটারদের বেতন ২ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা,‘বি’ গ্রেডের বেতন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা,‘সি’ গ্রেডের বেতন ১ লাখ টাকা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ‘ডি’ গ্রেডের ক্রিকেটারদের বেতন ৭৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে বিসিবি’র ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি! গতবার যেখানে ১৫ ক্রিকেটারের পেছনে মাসে বেতন খাতে বিসিবিকে গুণতে হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা, এবার সেখানে এই খাতে ১৬ ক্রিকেটারের মাসিক বেতন উন্নীত হচ্ছে ৩৭ লাখ ৫ হাজার টাকা !
গ্রেড নির্ধারণে যে রেটিং পয়েন্ট নির্ধারিত হয়েছে। ‘এ’ প্লাস গ্রেডের ক্রিকেটারদের কারো রেটিং ১ হাজারের নীচে নয়। টেস্ট, ওয়ানডেও টি-২০ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১১৫৯ রেটিং পয়েন্ট মুশফিকুর রহিমের। সাকিব ১১০৮, তামীম ১০৯২ এবং মাশরাফির রেটিং পয়েন্ট সেখানে ১০৪৩। ‘এ’ প্লাস গ্রেডের জন্য নূন্যতম ৯০১ পয়েন্ট নির্ধারিত ছিল, এই মানদন্ড থেকে রেটিং পয়েন্ট মাত্র ১১ পয়েন্ট কম থাকায় মাহামুদুল্লাহ (৯০১ পয়েন্টের জায়গায় ৮৯০ পয়েন্ট) কে ‘এ’ গ্রেডে পড়তে হয়েছে।
গতবার যেখানে কেন্দ্রিয় চুক্তিতে ক্রিকেটারদের সংখ্যা ছিল ১৫, এবার সেখানে ক্রিকেটারদের সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছে ১৬ তে। বাদ পড়েছেন নাসির হোসেন, আল আমিন এবং আরাফাত সানি। কেন্দ্রিয় চুক্তিতে ঢুকছেন এবার মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, কামরুল ইসলাম রাব্বী। এই চার ক্রিকেটারের মধ্যে তাসকিন ‘সি’ গ্রেডে, অবশিষ্ট তিনজন সেখানে ‘ডি’ গ্রেডে বেতন পাবেন। এছাড়া ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেন, মুমিনুল, সাব্বির রহমান ও সৌম্য ‘বি’ গ্রেডে বেতন পাবেন।
শুধু বেতনই নয়, বেশ ক’বছর স্থির থাকা ম্যাচ ফি’র অংকও বাড়াচ্ছে বিসিবি। টেস্টে ম্যাচ ফি বাড়ছে ৭৫ শতাংশ হারে। ২ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত হলো টেস্টের ম্যাচ ফি। ওয়ানডেতে সেখানে ম্যাচ ফি দ্বিগুণে উন্নীত হয়ে ১ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ালো ২ লাখ টাকায়! টি-২০ তে সেখানে ৬৬ শতাংশ হারে ম্যাচ ফি বেড়ে গেছে ৭৫ হাজার টাকা থেকে উন্নীত হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়!
প্রতি বছর ক্রিকেটারদের বেতন বাড়লেও ২০১৩ সালের পর বাড়েনি ম্যাচ ফি, উইনিং বোনাস। এবার বেতনের সঙ্গে ম্যাচ ফি, উইনিং বোনাসও বাড়িয়ে দিয়েছে বিসিবি। টেস্টে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৩ দলের কাউকে হারালে ক্রিকেটাররা এক একজন নির্ধারিত ম্যাচ ফি’র বাইরে ইতোপূর্বে পেতেন ৩ হাজার মার্কিন ডলার। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার মার্কিন ডলারে। র্যাঙ্কিংয়ে ৪ থেকে ৬ নম্বর দলের বিপক্ষে জিতলে যেখানে আগে ২ হাজার মার্কিন ডলার নির্ধারিত ছিল, এবার তা উন্নীত হয়েছে ৩ হাজার ডলারে। এবং ৭ থেকে ৯ নম্বর র্যাঙ্কিংধারী দলের বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং বোনাস ১ হাজার ৫০০ ডলার থেকে বেড়ে উন্নীত হলো ২ হাজার ৫০০ ডলারে। একই ভাবে ওয়ানডেতে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তিন দলের কাউকে হারালে আগে যেখানে ম্যাচ উইনিং বোনাস বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫০০ ডলার, তা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫০০ ডলারে। ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে ৪ থেকে ৬ নম্বর দলের বিপক্ষে জিততে ম্যাচ উইনিং বোনাস ১ হাজার থেকে ২ হাজার ডলারে নির্ধারিত হচ্ছে। ৭ থেকে ৯ নম্বর দলের বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং বোনাস সেখানে ৫০০ ডলারের পরিবর্তে ১ হাজার ডলারে উন্নীত করার প্রস্তাব গতকাল অনুমোদিত হয়েছে। তবে অনুমোদিত বেতন কাঠামোয় ম্যাচ সংখ্যার হিসেবে রেটিং পয়েন্ট নির্ধারণে পারফরমেন্স হয়নি বিবেচ্য। সেখানে একটু আপত্তি তুলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি ‘চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের দুই এক জনের ব্যাপারে একটু দ্বিমত ছিল। গ্রেডিংয়ের ব্যাপারে যে যতো ম্যাচ খেলেছে,তার উপর পয়েন্ট নির্ধারণের সিস্টেমে আছে। কিন্তু এখন যারা সেরা পারফরমার ওদের কথা সেভাবে বিবেচনা করা হয়নি। মোসাদ্দেক, মিরাজ, মুস্তাফিজ তো খেললোই মাত্র। পয়েন্ট সিস্টেম থাকবে। সাথে পারফরম্যান্সকেও একটা ভাগ ধরে আবার পেশ করার কথা বলে দিয়েছি। ২-১ দিনের তা মধ্যে পেয়ে যাব।’ তাহলে তো গত বছরের এই তিন পারফরমার নির্ধারিত বেতনের বাইরে পাবেন বিশেষ বোনাসও।
নুতন কাঠামোয় কার কত বেতন
ক্রিকেটার গ্রেড বেতন
মুশফিকুর রহিম ‘এ’ প্লাস ৪,৩৫,০০০ টাকা
সাকিব আল হাসান ‘এ’ প্লাস ৪,২৫,০০০ টাকা
তামীম ইকবাল ‘এ’ প্লাস ৪,২৫,০০০ টাকা
মাশরাফি বিন মর্তুজা ‘এ’ প্লাস ৪,২০,০০০ টাকা
মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ ‘এ’ ৩,০০,০০০ টাকা
ইমরুল কায়েস ‘বি’ ২,০০,০০০ টাকা
রুবেল হোসেন ‘বি’ ২,০০,০০০ টাকা
মুমিনুল হক ‘বি’ ২,০০,০০০ টাকা
সাব্বির রহমান ‘বি’ ২,০০,০০০ টাকা
সৌম্য সরকার ‘বি’ ২,০০,০০০ টাকা
তাসকিন আহমেদ ‘সি’ ১,৫০,০০০ টাকা
মুস্তাফিজুর রহমান ‘সি’ ১,৫০,০০০ টাকা
তাইজুল ইসলাম ‘ডি’ ১,০০,০০০ টাকা
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ‘ডি’ ১,০০,০০০ টাকা
কামরুল ইসলাম রাব্বী ‘ডি’ ১,০০,০০০ টাকা
মেহেদী হাসান মিরাজ ‘ডি’ ১,০০,০০০ টাকা
বি.দ্র. ‘এ’ প্লাস গ্রেডে ক্রিকেটারদের নির্ধারিত বেতন ৪ লাখ টাকা। তবে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনে মুশফিকুর রহিম,ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বাড়তি ২০ হাজার টাকা করে পাবেন। টেস্টের সহ-অধিনায়ক তামীম এবং ওয়ানডে সহ-অধিনায়ক সাকিব সেখানে বেতনের বাইরে পাবেন ১০ হাজার টাকা করে। এর বাইরে তিন ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করায় মুশফিক,সাকিব এবং তামীম পাবেন ১৫ হাজার টাকা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।