Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষক মেয়েকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করায় বেতন বন্ধ!

যশোর ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫৭ পিএম

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত এক শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেয়েকে অন্য একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করায় তাঁর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে ওই শিক্ষক অভিযোগে করেছেন। সুরেন্দ্রনাথ সিংহ বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম)। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের সভাপতির কাছে বারবার যোগাযোগ করেও তাঁর বেতন পারছেন না।

যোগাযোগ করা হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিমা রাণী লস্কর বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ সিংহের বেতন বন্ধ করেছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতো পারবো না।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান বলেন, কোন শিক্ষার্থী কোন প্রতিষ্ঠানে পড়বে এটা সম্পূর্ণ ওই শিক্ষার্থীর ও তার অভিভাবকের সিদ্ধান্তের বিষয়। এখানে বাধ্যবাধকতার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীকে বুঝিয়ে প্রতিষ্ঠানে রাখা যাবে। কিন্তু আইনগতভাবে কাউকে বাধ্য করা যাবে না।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সুরেন্দ্রনাথ সিংহ বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) হিসাবে যোগদান করেন। তাঁর মেয়ে অনন্যা সিংহ ২০১৯ সালে বাকড়ী প্রি-ক্যাডেট স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) উত্তীর্ণ হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে সে বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সে আবৃতি, উপস্থিত বক্তৃতা এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চায়। কিন্তু বিদ্যালয়ে এ ধরনের কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকা- ছিল না। এ কারণে সে এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে চ্য়ানি। এ বছর সে সপ্তম শ্রণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। গত জানুয়ারি থেকে সে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর মার্চ মাসে সে ওই বিদ্যালয় ত্যাগ করে পাশের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
সুরেন্দ্রনাথ সিংহ জানান, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিদ্যালয়ে না এসে মেয়ে বাড়িতেই ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশে তার (সুরেন্দ্রনাথ সিংহ) বিদ্যালয় পরিপন্থী আলোচনা ও কার্যকলাপের বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়। তিনি জবাব দেওয়ার পরও তার ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত ৯ মার্চ থেকে নিয়মিত হাজিরা খাতার পরিবর্তে আলাদা খাতায় তার স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, পরিচালনা পর্যদের সভাপতি, কয়েকজন সদস্য এবং প্রধান শিক্ষকের নিকট বারবার যেয়ে বেতন ছাড়ের জন্য অনুরোধ জানানোয় মার্চ মাস থেকে তার বেতন নিয়মিত করা হয়। তবে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন আর দেওয়া হয়নি। গত এপ্রিলে বিদ্যালয়ে মেয়ের অনুপস্থিতর কারণ জানতে চেয়ে তাকে দুই দফা কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি কারণ দর্শানোর জবাব দেন। এরপর গত জুলাই মাস থেকে পুনরায় তার বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, মেয়েটিকে অনেক বুৃঝিয়েছি, বোঝানোর সময়ে মেয়েটি অঝোরে কাদঁতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী তাকে গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। আমি হার্টের রোগী। সাথে ডায়াবেটিস। শরীর খুব খারাপ। সংসারে অভাব। বেতন বন্ধ থাকায় কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। এখন আমার মরা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।’
বাকড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি পরিমল গোলদার বলেন, ‘কমিটি সহকারী শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহের বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি। আমি তার বেতন বন্ধ করেছি। সব কিছু নিয়মের মধ্যে করা হয়েছে। আপনি যা কিছু করতে চান করতে পারেন।’ বলেই তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন খান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে ওই শিক্ষক আমার কাছে কোনো আবেদন করেননি। আবেদন পেলে এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ